Ajker Patrika

পটিয়া-বান্দরবান সড়ক

কাউছার আলম, পটিয়া (চট্টগ্রাম) 
আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০২২, ০৯: ৪৩
পটিয়া-বান্দরবান সড়ক

চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের আপত্তিতে আটকে রয়েছে চট্টগ্রামের পটিয়া থেকে বান্দরবান পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার নতুন সড়কের নির্মাণকাজ। ২০২০ সালের জুলাইয়ে সড়কের নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এখনো তা হয়নি।

বন বিভাগের দাবি, সড়কটি নির্মিত হলে সংরক্ষিত বনের প্রাণী হুমকির মুখে পড়বে। সড়কের দুপাশে অবৈধ দোকানপাটসহ নানা ধরনের স্থাপনা গড়ে উঠবে। এতে অনুপ্রবেশকারীদের জবরদখলের প্রবণতা বেড়ে যাবে।

তবে সওজের দাবি, যে এলাকা দিয়ে সড়ক নির্মাণ করার কথা, সেখানে সংরক্ষিত বনের গাছপালা কম। আর পাহাড় ও গাছ না কেটেই নির্মাণ করা হবে ওই সড়ক। ফলে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না।

জানা গেছে, সংরক্ষিত বনের মধ্য দিয়ে পটিয়া থেকে রাঙ্গুনিয়া পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয় সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। প্রস্তাবিত মহাসড়কটি পটিয়া-অন্নদাদত্ত-হাইদগাঁও-রাঙ্গুনিয়ার পশ্চিম খুরুশিয়া-কালিন্দিরানী সড়ক-দুধপুকুরিয়া-চন্দনাইশের ধোপাছড়ি- শঙ্খতীরের ডলুপাড়া-বালাঘাটা হয়ে বান্দরবানে মিলিত হবে। এ প্রকল্পের জন্য প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয় ৩৩ লাখ ৫৯৫ টাকা। প্রস্তাব অনুযায়ী ২০২০ সালের জুলাই মাস থেকে কাজ শুরু হওয়ার কথা। ২০২৩ সালের ৩০ জুনের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও বাগড়া দেয় চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগ। এতে ঝুলে যায় প্রকল্পের কাজ। তাদের দাবি, এ সড়ক নির্মিত হলে পরিবেশ, বন ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হবে।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, দোহাজারী এলজিইডি থেকে পটিয়া, রাঙ্গুনিয়া হয়ে বান্দরবান পর্যন্ত সড়ক নির্মাণের একটি প্রস্তাব দেওয়া হয় চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগকে। প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী রাঙ্গুনিয়ার সংরক্ষিত দুধপুকুরিয়া-ধোপাছড়ি বন্য প্রাণী অভয়ারণ্যের মধ্য দিয়ে সড়কটির একাংশ নির্মাণ করা হবে, যা পরিবেশ, বন ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করবে। সে জন্য বন বিভাগ প্রস্তাবটিতে আপত্তি জানায়।

মো. শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘সংরক্ষিত বনের মধ্যে সড়ক নির্মাণ করা হলে অবৈধ দোকানপাটসহ নানা স্থাপনা গড়ে উঠবে। অনুপ্রবেশকারীদের জবরদখলের প্রবণতাও বেড়ে যাবে। তখন সীমিত লোকবল দিয়ে অনুপ্রবেশকারীদের প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না। এ ছাড়া বনে অনেক দুর্লভ প্রজাতির গাছ রয়েছে, সেগুলোও তখন রক্ষা করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।’

পরিবেশবাদীরাও সংরক্ষিত বনাঞ্চলে সড়ক নির্মাণের বিরোধিতা করেন। তাঁদের দাবি, এতে বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ ও পাখি হুমকি মুখে পড়বে।

তবে সওজের দাবি, রাঙ্গুনিয়ার যে অংশে সড়ক নির্মাণ করা হবে, সেখান থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে অভয়ারণ্য এলাকা। বন বিভাগের যেটুকু অংশ সড়কের কাজে ব্যবহার করা হবে, সেখানে তেমন কোনো গাছপালা নেই। তা ছাড়া পাহাড় ও গাছপালা না কেটেই সড়ক নির্মাণ করা যাবে। বর্তমানে সেখানে কাঁচা রাস্তা রয়েছে।

এ ব্যাপারে দোহাজারী সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ বলেন, ‘সড়কটি নির্মিত হলে বান্দরবান-দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া, রাজস্থলী, কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী এলাকায় উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাত করা সহজ হবে। এতে বান্দরবান কিংবা কক্সবাজারে যাতায়াত সহজ হবে। সড়ক নির্মিত হলে বান্দরবানের পর্যটন খাতে আমূল পরিবর্তন ঘটবে। শুধু মন্ত্রণালয়ে আপত্তিতে প্রকল্পটি আটকে আছে। যদি এই উন্নয়ন প্রকল্পটি বাস্তবায়িত না হয়, তাহলে সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা ব্যাহত হবে।’

চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের তথ্যমতে, ২০১০ সালে অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ইন্টিগ্রেটেড প্রোটেক্টেড এরিয়া কো-ম্যানেজমেন্টর প্রজেক্টের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সহযোগিতায় এ বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য প্রতিষ্ঠা করা হয়। দুধপুকুরিয়া, পূর্ব ও পশ্চিম খুরুশিয়া, পশ্চিম ধোপাছড়ি ও জঙ্গল ধোপাছড়ি মৌজার ৪ হাজার ৭১৬ একর এলাকাজুড়ে রাঙ্গুনিয়া-চন্দনাইশ উপজেলার মাঝামাঝি এ অভয়ারণ্যের অবস্থান। এই অভয়ারণ্যে প্রাকৃতিক ছড়া, বিভিন্ন প্রজাতির পশুপাখি, আদিবাসী পল্লি, বুনো অর্কিড, শতবর্ষী বিভিন্ন প্রজাতির গাছ, নিবিড় বাঁশবন ও ঘন বেতবাগান আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত