Ajker Patrika

বিত্তবানের কবজায় ভূমিহীনের ঘর

আনোয়ার হোসেন, মনিরামপুর
আপডেট : ২৭ অক্টোবর ২০২১, ১১: ৫৫
বিত্তবানের কবজায় ভূমিহীনের ঘর

মনিরামপুরের মধুপুরে সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩৭ ঘরের মধ্যে ১৫টিই বিত্তবানের কবজায়। তাঁদের মধ্যে একজনে স্ত্রী, দুই মেয়ে, বোন, ভাগনি ও ভাইজির নামে বরাদ্দ নিয়েছেন ছয়টি ঘর। আরেকজনে দুই স্ত্রী, দুই পুত্রবধূ এবং শ্যালিকার জন্য বরাদ্দ পেয়েছেন ভূমিহীনের পাঁচটি ঘর। বাদ যাননি সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্যও। তিনি তাঁর ছেলের নামে একটি ঘর নিয়েছেন। আরও দুই বিত্তবান বরাদ্দ পেয়েছেন তিনটি ঘর। এসব ঘরের অধিকাংশই তালাবদ্ধ পড়ে আছে। সরেজমিন অনুসন্ধানে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

মুজিববর্ষ উপলক্ষে চলতি বছরের শুরুতে সারা দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভূমিহীনদের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর উপহার দেন। এর মধ্যে মনিরামপুরের হরিহরনগর ইউনিয়নের মধুপুর মৌজায় দুটি খাস জমিতে ভূমিহীনদের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩৭টি ঘর নির্মাণ করে হস্তান্তর হয়। কিন্তু সেসব ঘর বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। পরে ঘটনার সত্যতা জানতে সরেজমিনে অনুসন্ধানচালানো হয়।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে পাঁচজনের সংসার মধুপুর গ্রামের বাসিন্দা এজাজুল হক মধুর। গ্রামে একতলা পাকা বাড়ি এবং খাটুরা বাজারে সার ও মুদির দুটি দোকান রয়েছে তাঁর।

মধুর দুই মেয়ের মধ্যে বড় জনকে বিয়ে দিয়েছেন বাঘারপাড়া উপজেলায় এবং ছোট মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন উপজেলার দশআনিকোলা গ্রামে। স্বামী সন্তান নিয়ে তাঁর দুই মেয়ে থাকেন শ্বশুর বাড়িতে। ছোট জামাই থাকেন মালয়েশিয়ায়। এই মধুর কবজায় রয়েছে ছয়টি ঘর। এর মধ্যে স্ত্রী ও দুই মেয়ে পেয়েছেন তিনটি ঘর। নিজের বোন, ভাগনি ও ভাইঝির নামেও তিনটি ঘর নিয়েছেন তিনি। বর্তমানে ঘরগুলো অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে।

একই প্রকল্পে স্ত্রীর নামে ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন ওসমান হোসেন। পৈতৃক ভিটায় ওসমানেরও রয়েছে পাকা ঘর।

ওসমানের ঘরের পাশে পাঁচটি ঘর পেয়েছেন আলতাফ হোসেনের দুই স্ত্রী, দুই পুত্রবধূ এবং শ্যালিকা। আলতাফের দুই ছেলে চাকরির সুবাদে পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকেন। শ্যালিকাও থাকেন ঢাকায়। ফলে ঘর তিনটি তালাবন্ধ পড়ে আছে।

সরেজমিন জানা গেছে, আলতাফের ছোট স্ত্রী সাবানার নামের পাশে স্বামীর নাম ব্যবহার না করে কৌশলে বাবা ইউনুছ মোল্লার নাম দেওয়া হয়েছে। দুই ছেলেকে বাদ রেখে ব্যবহার করা হয়েছে পুত্রবধূ নাসরিন আকতার ও তাহেরা খাতুনের নাম।

হরিহরনগর ইউনিয়নের (১, ২ ও ৩ নম্বর) ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য মেহেরুননেছার ছেলে রবিউল ইসলামের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে একটি ঘর।

বিত্তবান আনোয়ার খার দখলে ছিল বর্তমান আশ্রয়ণ প্রকল্পের স্থানের খাস জমি। পরে সরকার উদ্ধার করে নেয়। সেই সুবাদে ওই স্থানে নির্মিত ২২টি ঘরের মধ্যে দুটি ঘর বরাদ্দ নিয়েছেন তাঁর বড় ছেলে মোশারফ হোসেন এবং নাতি কিশোর ছেলে মনোয়ার হোসেনের নামে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোশারফের বাবার কয়েক বিঘা সম্পত্তি থাকলেও তাঁকে ভূমিহীন দেখিয়ে ঘর দুটি দেওয়া হয়েছে। মোশারেফ ঘর দুটি তালাবদ্ধ করে স্ত্রী সন্তান নিয়ে বাবার ভিটায় থাকেন।

নিজের পাকা ঘর থাকা সত্ত্বেও কীভাবে ভূমিহীনের ঘরের মালিক হলেন, জানতে চাইলে এজাজুল হক মধু বলেন, ‘অনেক আগে গ্রামের আব্দুর রহমান গোলদারের কাছ থেকে জমিটা কিনেছি। পরে সেই জমিতে বাড়ি করেছি। কাগজপত্র ঠিক না থাকায় তিনি আমাকে রেজিস্ট্রি করে দিতে পারেননি।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে যে পাকা ঘরে থাকি এটা আমার হলেও জমি আমার না। আমি প্রকৃত ভূমিহীন। আমার দুই মেয়ের নামে জমি না থাকায় তাঁরাও ঘর পেয়েছে।’

হরিহরনগর ইউনিয়নের (১, ২ ও ৩ নম্বর) ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মেহেরুননেছা বলেন, ‘আমার স্বামীর জমি নেই। তাই ছেলে রবিউল ইসলাম একটা ঘর পেয়েছে।’

পাঁচ ঘর বরাদ্দ নেওয়া আলতাফ হোসেন বলেন, ‘আমার কোনো ভিটাবাড়ি নেই। দীর্ঘদিন আমি এই খাস জমিতেই থাকি। তাই আমি ঘরগুলো নিয়েছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মধুপুর গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমার পাকা ঘর আছে। তাতে কি! ২০ হাজার টাকা দিতি পারলি আমিও সরকারি ঘর পাতাম। টাকা খাইয়ে এসব ঘর নেওয়া হয়েছে।’স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, হরিহরনগর ইউনিয়নের ভূমি কর্মকর্তাসহ (নায়েব) সংশ্লিষ্টরা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে টাকার বিনিময়ে প্রকৃত ভূমিহীন নন এমন ব্যক্তিদের ঘর বরাদ্দ দিয়েছেন। কাগজপত্র বা ব্যক্তির তথ্য সঠিকভাবে জরিপ না করে তাঁরা এ কাজ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে তাঁদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। দ্রুত বরাদ্দ বাতিল করে প্রকৃত ভূমিহীনদের ঘরগুলো বিতরণের দাবি তাঁদের।

হরিহরনগর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা (নায়েব) শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘টাকা নেওয়ার প্রশ্নেই ওঠে না। যাদের নামে ঘর বরাদ্দ হয়েছে তাঁদের নামে কোনো জমি নেই। যাচাই–বাছাই করে ঘর দেওয়া হয়েছে।’

মনিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ জাকির হাসান বলেন, ‘জমি ও ভূমিহীন নির্বাচন করে দেন নায়েব। সেই অনুযায়ী ঘর দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

অরকার আক্রমণে তরুণী প্রশিক্ষকের মৃত্যু, ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে যা জানা গেল

অস্থিরতার সামান্য ইঙ্গিত পেলেই আমরা চলে যাব

ভারতকে পাকিস্তানি সেনাপ্রধানের পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি, যা বলল যুক্তরাষ্ট্র

প্লট–ফ্ল্যাট বরাদ্দে সচিব, এমপি, মন্ত্রী, বিচারপতিসহ যাঁদের কোটা বাতিল

জর্ডান-মিসরকে নিয়ে বৃহত্তর ইসরায়েল প্রতিষ্ঠা করতে চান নেতানিয়াহু

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত