Ajker Patrika

১০০ বছর আগে বরফ পড়েছিল শেরপুরে

রজত কান্তি রায়, ঢাকা
আপডেট : ১৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১০: ৩৮
১০০ বছর আগে বরফ পড়েছিল শেরপুরে

চমকে ওঠার মতোই সংবাদ বটে। বাংলাদেশেও বরফ পড়েছিল! কিন্তু সংবাদটি যখন নিজেই পড়লাম, অবিশ্বাস করি কীভাবে? অথচ গতকাল মিটিওট্রেন্ড অনুসারে শেরপুরের তাপমাত্রা ছিল ২১ থেকে ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর রাতে সে তাপমাত্রা ১৯ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যাওয়ার পূর্বাভাস ছিল। বরফ পড়ার আশঙ্কা তাই ছিল সুদূরপরাহত।

কেদারনাথ মজুমদারের লেখা ‘ময়মনসিংহের ইতিহাস’ বইয়ের পরিশিষ্ট অংশে ১৮৫৭ সাল থেকে ১৯০৫ সাল অর্থাৎ প্রায় ৪৭ বছরের গুরুত্বপূর্ণ সব ঘটনা সংকলিত আছে। এতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে উল্লেখ আছে, ১৮৮৬ সালে ময়মনসিংহ অঞ্চলে ‘ভীষণ টর্নেডো’ হয়। পিনাং, মধুপুর, শেরপুর, দেওয়ানগঞ্জ ও জামালপুরে ১৮৭৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ‘প্রবল টর্নেডো’ হয় এবং তাতে ২৭ জন মানুষ মারা যায়। একই বছর ১৯ ডিসেম্বর ভূমিকম্প এবং ১৮৭৪ সালে দুর্ভিক্ষ হয়। ১৮৭৮ সালে যমুনায় প্লাবনের ফলে টাঙ্গাইলে দুর্ভিক্ষ হয়। ১৮৮৪ সালে ভূমিকম্প, ১৮৯৩ ও ১৮৯৪ সালে দুর্ভিক্ষ, ১৮৯৭ সালে ভূমিকম্প হয়। কিন্তু বরফপাতের মতো কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ অন্তত সে সময় হয়নি। এর পরেও কোনো সূত্র থেকে বাংলা অঞ্চলের কোথাও বরফ পতনের মতো সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে বলে পাওয়া যায় না।

যে সংবাদটি নিয়ে কথা হচ্ছে তা পশ্চিমবঙ্গের প্রাচীন বাংলা ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’য় আজ থেকে নিরানব্বই বছর এক দিন আগে ছাপানো হয়েছিল। তারিখ ১৮ জানুয়ারি, ১৯২৪ সাল মতে ৪ মাঘ ১৩৩০ বাংলা সাল। দিনটি ছিল শুক্রবার। পুরো সংবাদটি হলো, ‘কয়েক দিন যাবৎ সেরপুরে (ময়মনসিংহ) অত্যন্ত শীত পড়িয়াছে। বরফ পড়াও আরম্ভ করিয়াছে। বহুকাল পূর্ব্বে একবার বরফ পড়িয়াছিল। এবার অনাবৃষ্টিতে তরিতরকারী ভালরূপ উৎপন্ন হয় নাই। যাহা কিছু উৎপন্ন হইয়াছে, তাহাও সুস্বাদবিশিষ্ট হয় নাই। এখানকার বেগুন প্রসিদ্ধ; কিন্তু উক্ত বেগুনে আজকালই বীচিপূর্ণ হইয়া গিয়াছে। বরফ পড়িলে তরিতরকারী একেবারে শেষ হইয়া যাইবে, সন্দেহ নাই।’ 
সংবাদটি যেহেতু ১৮ জানুয়ারি প্রকাশ করা হয়েছিল, ধারণা করা যায় ঘটনাটি তার দুই-এক দিন আগের। খুব বেশি হলে সে সপ্তাহের।

মাত্র ৫১ শব্দের একটি সংবাদ। কিন্তু কী দুর্দান্ত তার আবেদন! আবেদন এই অর্থে যে এ সংবাদটি আমাদের পরিবেশ ও প্রতিবেশ সম্পর্কে এক মারাত্মক ধারণা দেয়। প্রায় এক শ বছর আগে বর্তমান বাংলাদেশের পরিবেশ কেমন ছিল, সংবাদটি তার ভাষ্য তৈরি করেছে। খেয়াল করলে দেখবেন, সংবাদটিতে দুটি বিষয় স্পষ্ট উল্লেখ আছে। একটি হলো অনাবৃষ্টি, অন্যটি তুষারপাত বা বরফ পতন। এই এলাকা অর্থাৎ শেরপুর কামরূপ অঞ্চলের অংশ।

কেদারনাথ মজুমদারের লেখা ‘ময়মনসিংহের ইতিহাস’সহ বিভিন্ন সূত্র তেমনি বলছে। সে তথ্য সঠিক হলে ধারণা করা অসংগত নয় যে শেরপুরসহ পুরো ময়মনসিংহ অঞ্চল ছিল নদী ও অরণ্যময়। প্রাকৃতিক পরিবেশ ছিল সুস্থ। উইকিপিডিয়ার মতো জনপ্রিয় সোর্সগুলো থেকে পাওয়া যাচ্ছে, বর্তমান শেরপুরের গড় তাপমাত্রা সর্বনিম্ন ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে সর্বোচ্চ ৩৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ থেকে প্রায় এক শ বছর আগে এ অঞ্চলের তাপমাত্রা কি তাহলে তুষারপাতের উপযোগী ছিল? নাকি ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’ পরিবেশিত ‘বরফ পাত’ শিরোনামের সংবাদটির বিষয় শিলাবৃষ্টি ছিল?

আবার শিলাবৃষ্টি ও বরফ পতন দুটি দুই বিষয়—এতটুকু না বোঝার কথা নয় সংবাদদাতা ও সম্পাদকের। তাহলে? আমাদের পরিবেশ এতটাই বদলে গেছে!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

যুদ্ধের পর এ যেন এক নতুন ইরান, জনগণের মতো বদলে গেছে সরকারও

তেহরান ওপর থেকে সুন্দর, একদিন যেতে চাই: ইরানে বোমা ফেলা ইসরায়েলি পাইলট

ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে ৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের কথা ভাবছেন ট্রাম্প

সাইপ্রাসে বিপুল জমি কিনছে ইসরায়েলিরা, দেশ বেদখলের শঙ্কা রাজনীতিবিদদের

হোয়াটসঅ্যাপের ব্যবহার নিষিদ্ধ করল বিমান বাংলাদেশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত