Ajker Patrika

ব্রাজিলে বাংলাদেশের কিশোর ফুটবলারদের পিকনিক নাকি প্রশিক্ষণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১২ এপ্রিল ২০২২, ১৩: ০৫
ব্রাজিলে বাংলাদেশের কিশোর ফুটবলারদের পিকনিক নাকি প্রশিক্ষণ

ফুটবল শিখতে যাবেন, সেটাও ফুটবলের তীর্থভূমি ব্রাজিলে! বাংলাদেশের খোঁড়াতে থাকা ফুটবলে উঠতি ফুটবলারদের কাছে এ যেন স্বপ্নের চেয়ে বেশি কিছু। ব্রাজিলে যাওয়া হবে, দেখা হবে অনেক কিছু। আর এর ফাঁকে যদি কিছু শেখা যায়—এমন স্বপ্নে এগারো তরুণকে এবারও নেইমারদের দেশে নেওয়ার ব্যবস্থা করেছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়।

বঙ্গবন্ধু অনূর্ধ্ব-১৭ গোল্ডকাপ টুর্নামেন্ট থেকে প্রাথমিকভাবে ৪০ জন বাছাই করা হয়েছিল। এরপর বিকেএসপিতে দুই মাসের ক্যাম্প শেষে ব্রাজিলে ‘উন্নত’ প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচিত করা হয় ১১ ফুটবলারকে। অতিরিক্ত তালিকায় আছে আরও চারজনের নাম। শুধু ছেলেদেরই নয়, প্রশিক্ষণের জন্য এবার প্রথমবারের মতো মেয়েদের দলকেও দেশের বাইরে পাঠাচ্ছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়।

প্রশিক্ষণের জন্য বাংলাদেশি ফুটবলারদের দেশের বাইরে পাঠানোর ঘটনা এটাই নতুন নয়। ২০১২ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে গিয়ে অনুশীলনের সুযোগ পেয়েছিলেন ১২ তরুণ ফুটবলার। ২০১৯ সালে ব্রাজিলে পাঠানো হয়েছিল চার ফুটবলারকে। এক মাসে ব্রাজিলের বিভিন্ন ক্লাবে এক থেকে দুটি করে সেশন অনুশীলন করার সুযোগ পেয়েছিলেন এই ফুটবলাররা। খেলেছেন কয়েকটি ম্যাচ। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের চোখে এটিই উন্নতর প্রশিক্ষণ।

ব্রাজিলে গিয়ে এক মাসে কয়েক দিন অনুশীলন করাকে যদি উন্নতর প্রশিক্ষণ বলা হয়, তাহলে প্রশ্ন থেকে যায়, এই প্রশিক্ষণের সুবিধা কতটুকু পাচ্ছে বাংলাদেশের ফুটবল? ২০১৯ সালে ব্রাজিলফেরত চার ফুটবলারের একজন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘এক মাসের মাত্র আট দিন আমরা অনুশীলন করেছি। চারটি ম্যাচ খেলেছি। বাকি সময় আমরা ঘুরেছি, খেলা দেখেছি। একে প্রশিক্ষণ না বলে পিকনিক বলাই ভালো। শুনেছি, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও যাবেন, তাঁরাই ভালো বলতে পারবেন, এক মাসের অনুশীলনে কী হয়!’

২০১২ সালে ম্যানচেস্টারে অনুশীলনের সুযোগ পাওয়া ১২ ফুটবলারের মধ্যে শুধু মাহমুদুল হাসান কিরণই আছেন কিছুটা ভালো অবস্থানে। রহমতগঞ্জের এই ডিফেন্ডার একই সঙ্গে দলের অধিনায়কও। সেই দলটার বাকিদের আর কোনো খোঁজখবর পাওয়া যায় না। সেই দলের রিপন কুমার ফুটবল ছেড়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ নিয়ে হয়েছিলেন খবরের শিরোনাম। প্রতিভাবান এই তরুণদের কাউকেই পায়নি বাংলাদেশের জাতীয় ফুটবল দল।

ব্রাজিল থেকে ফেরা চারজনের দলটাতেও নেই কোনো সুখবর। শুধু মিডফিল্ডার ওমর ফারুক মিঠু খেলছেন বিপিএল দল বাংলাদেশ পুলিশের হয়ে। বিদেশিনির্ভর দলে এবারের লিগে এখন পর্যন্ত প্রথম একাদশে সুযোগ পাননি মিঠু। এবারের বিসিএল ফুটবলে ওয়ান্ডারার্সের হয়ে খেলছেন ডিফেন্ডার নাজমুল আকন্দ। বড় কোনো দলে খেলতে না পারার হতাশায় রাজশাহীতে ফিরে গেছেন জোগেন লাকরা। সবচেয়ে তরুণ লতিফুর রহমান নাহিদ রংপুরের স্থানীয় এক একাডেমিতে অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন। খেলেছেন বিভাগীয় দলেও।

ফুটবলের দেশ ব্রাজিলে খুব অল্প বয়স থেকেই প্রেসিং ফুটবল ও সেরা মানের প্রশিক্ষণ পায় সে দেশের শিশু-কিশোররা। খুব অল্প সময়ে তাদের প্রশিক্ষণের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো একপ্রকার অসম্ভব বলেই জানালেন মিঠু। বললেন, ‘আমাদের জাতীয় দলেও এতটা কঠোর প্রশিক্ষণ হয় না। দুই বেলা নিয়মিত অনুশীলন হয় না সেখানে। সময়টা যদি এক বছর করা যেত, তাহলেও হয়তো ভবিষ্যতে এই প্রশিক্ষণের সুবিধা পাওয়া যেত।’ হতাশা থেকে ব্রাজিলের স্মৃতি আর মনেও আনতে চান না জোগেন লাকরা। ফুটবল ছেড়ে অন্য পেশায় মনোযোগী হতে পরিবার থেকে চাপ বাড়ছে বলে জানালেন তিনি। বললেন, ‘বলে কী লাভ! কিছুই তো হলো না।’

ব্রাজিল থেকে ফেরা চারজনের নিয়তিই কি অপেক্ষা করে আছে পরবর্তী ধাপের ১১ ফুটবলারের ভাগ্যে? যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মেজবাহ উদ্দিন জানালেন, ব্রাজিলের ক্লাবগুলোর ওপর সে দেশের সরকারের হস্তক্ষেপ নেই বলেই প্রশিক্ষণের মেয়াদ ক্লাবগুলোর সুবিধামতো করা হয়েছে। তবে এবারের ফুটবলারদের বাড়তি যত্ন নেওয়া হবে বলে মন্তব্য মেজবাহ উদ্দিনের, ‘আমি প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। চেষ্টা করব ফেডারেশনের সঙ্গে মিলে এই ফুটবলারদের দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণে রাখা যায় কি না।’

তেমন কিছু করা গেলেই ভালো। নয়তো ব্রাজিল ভ্রমণ খুদে ফুটবলারদের জন্য শুধু পিকনিক হয়েই থেকে যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত