Ajker Patrika

পদ্মপুকুরের বুকে ‘বৈঠকখানা’

খান রফিক, বরিশাল
আপডেট : ০৪ আগস্ট ২০২২, ১১: ৩৭
পদ্মপুকুরের বুকে ‘বৈঠকখানা’

বরিশাল নগরে বিআইডব্লিউটিএর বাংলো হিম নীড়ের পদ্মপুকুর বর্ষায় এখন ফুলে ফুলে সাদা হয়ে আছে। ঐতিহ্যবাহী এ পুকুর গোটা দেশের পর্যটকদের কাছে দর্শনীয় এক স্থান। চোখজুড়ানো সেই পদ্মপুকুরের মাঝ বরাবর ভিআইপিদের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে ‘বৈঠকখানা’। বিআইডব্লিউটিএ সূত্রের ভাষায় জেটি। পরিবেশবাদীরা এমন সিদ্ধান্তকে পদ্মপুকুরের পরিবেশ নষ্ট করা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলে দাবি করেছেন।

এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে পদ্মপুকুরে যাতায়াতেও বিআইডব্লিউটিএর প্রকৌশল অধিদপ্তর কড়াকড়ি আরোপ করায় নগরবাসীর মধ্যে দেখা দিয়েছে অসন্তোষ।

জানা যায়, নগরের বান্দরোডে বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ভবনে অবস্থিত হিম নীড় এবং পদ্মপুকুর ১১২ বছর আগের। প্রায় ৭০ শতাংশ জায়গার ওপর এ পুকুর অবস্থিত। গত মঙ্গলবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, পুকুরজুড়ে সাদা পদ্মফুলে ভরা। কিন্তু চারপাশে অযত্ন আর অবহেলার স্পষ্ট ছাপ। পুকুরের মূল ঘাটলার একটু সামনেই কয়েক দিন ধরে চলছে ইস্পাতের পাত দিয়ে সাঁকো তৈরির কাজ। পুকুরের মাঝখান বরাবর চলছে বিশ্রামাগার বা বৈঠকখানা তৈরির প্রস্তুতি।

বরিশাল জেলা উন্নয়ন, পরিবেশ ও ঐতিহ্য রক্ষা কমিটির সদস্য কাজী মিজানুর রহমান জানান, তিনি প্রাতর্ভ্রমণে গিয়ে প্রতিদিনই পদ্মপুকুরটি দেখেন। সেখানকার শ্বেত পদ্ম যেন হাসছে। এই পুকুরের মাঝে যেভাবে ইস্পাতের পাত দিয়ে সাঁকোর মতো করে বসার স্থান করা হচ্ছে, তা পরিবেশবিধ্বংসী আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। ১১২ বছর আগের এ পুকুর সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিল। এখন সেখানে ভিআইপিদের প্রমোদের ব্যবস্থা করার জন্য পুকুরের পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে।

বরিশাল সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি অধ্যাপক শাহ সাজেদা বলেন, গত বছর পদ্মর মূল উপড়ে ফেলে পুকুর পরিষ্কার করে বিআইডব্লিউটিএ। তখন নাগরিকদের অনেকেই প্রতিবাদ করেছিলেন। তারপরও পুরো পুকুর পদ্মশূন্য করে ফেলা হয়। ওই ঘটনার পর এবার কিছু ফুল ফুটেছে। যেগুলো ফুটছে সেগুলোও পরিপূর্ণ নয়। তিনি বলেন, পদ্মপুকুরের পরিবেশ ও প্রতিবেশ নষ্ট করতেই এমন পাঁয়তারা করছে বিআইডব্লিউটিএ।

বরিশাল সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সদস্যসচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, পদ্মপুকুর বরিশালবাসীর ঐতিহ্য। এখানে প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করার অধিকার কোথায় পেয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। যেসব ভিআইপির জন্য পদ্মপুকুরের পরিবেশ ধ্বংস করে জেটি বা বৈঠকখানা করছে, তাঁরা কি এই নগরের বাসিন্দা? এটি ধ্বংস হয়ে গেলে কে দায় নেবে। অনতিবিলম্বে এমন অপকর্ম বন্ধ না করলে নগরবাসীকে নিয়ে আন্দোলন করা হবে বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএর বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন উর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, পদ্মফুলের কাছাকাছি গিয়ে আরও গভীরভাবে অনুভব করার জন্য জেটি তৈরির কাজ চলছে। এটি কোনো বৈঠকখানা নয়, এটি সৌন্দর্যবর্ধনেরই একটা অংশ। ওখানে দাঁড়িয়ে পুকুরের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে আরও সুবিধা পাবেন ভিআইপি দর্শনার্থীরা, এমনটাই মনে করেন প্রকৌশলী মামুন।

উল্লেখ্য, ১৯৬৫ সালে বরিশাল মেরিন ওয়ার্কশপের তৎকালীন ম্যানেজার জার্মানির বাসিন্দা মি. ইলিগনর কয়েকটি শ্বেতপদ্ম মূলসহ সংগ্রহ করে বিআইডব্লিটিএর হিম নীড় পুকুরের তলদেশে রোপণ করেন। ধীরে ধীরে ৭০ শতাংশ আয়তনের পুরো পুকুরে ছড়িয়ে পড়ে শ্বেতপদ্ম। প্রতিবছর পদ্মফুল দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা আসেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত