Ajker Patrika

ভেজাল ওষুধে বিপন্ন জীবন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১০: ৫৫
ভেজাল ওষুধে বিপন্ন জীবন

দেশের বিভিন্ন এলাকায় কারখানা বানিয়ে ভেজাল ওষুধ বানানো হচ্ছে। ইউনানি, হোমিও ও আয়ুর্বেদিক কারখানায়ও বানানো হচ্ছে ভেজাল ওষুধ। অনেক দোকানি জেনে-বুঝেই বেশি লাভের আশায় রোগীর হাতে তুলে দিচ্ছে এই ওষুধ। ফলে রোগ নির্ণয় হলেও ওষুধ খেয়ে রোগী সুস্থ হচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে রোগী মারা যাচ্ছে। করোনাকালে অ্যান্টিবায়োটিক ও শ্বাসকষ্টের ওষুধ বেশি নকল হচ্ছে। পুলিশের তদন্তে স্বাস্থ্য খাতের ভয়াবহ এই চিত্র উঠে এসেছে।

ভেজাল ওষুধ তৈরির অর্ধশত কারখানা চিহ্নিত করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) সাইফুর রহমান আজাদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, আয়ুর্বেদিক ও ইউনানি ওষুধ তৈরির লাইসেন্সে কারখানা বানিয়ে বিভিন্ন নামীদামি ব্র্যান্ডের নামে ভেজাল ওষুধ তৈরি করছে অসাধু চক্র। সাভার ও পিরোজপুরের দুটি আয়ুর্বেদিক ও ইউনানি কারখানা থেকে সম্প্রতি বিপুল পরিমাণ ভেজাল ওষুধ উদ্ধার করেছে ডিবি।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ও গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশে নিবন্ধিত ওষুধ কারখানার সংখ্যা ৮৭৯টি। এর মধ্যে উৎপাদনে আছে ৭৫৬টি। বাকিদের নিবন্ধন স্থগিত আছে। নিবন্ধিত কারখানাগুলোর মধ্যে ২০৯টি অ্যালোপ্যাথি, ২৬২টি ইউনানি, ১৮৫টি আয়ুর্বেদিক, ৬৪টি হোমিও ও ৩৬টি হারবাল ওষুধের রয়েছে। অ্যালোপ্যাথির অধিকাংশ কারখানা নিয়মনীতি মেনে ওষুধ তৈরি করলেও অন্যদের বেশির ভাগের মানসম্পন্ন যন্ত্রপাতি ও জনবল নেই। তাদের বড় অংশই ভেজাল ওষুধ তৈরি করে।

গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, চারটি ধাপে ভেজাল ওষুধ ক্রেতার কাছে পৌঁছায়। চক্রপ্রধানরা ভেজাল ওষুধ তৈরির জন্য কারখানা ভাড়া করেন। ওষুধের লেবেলও তাঁরা সরবরাহ করেন। ওষুধ বানানোর পর তাঁরা মিটফোর্ডে পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন। পাইকারেরা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে সারা দেশে ভেজাল ওষুধ ছড়িয়ে দেন। মোড়ক দেখে বোঝার উপায় নেই, আসল নাকি নকল ওষুধ।

কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের চিকিৎসক জয় চৌধুরী বলেন, ভেজাল ওষুধে আটা ও ময়দার পাশাপাশি কিছু ক্ষেত্রে স্টেরয়েড ও রং ব্যবহৃত হয়। কিছু ক্ষেত্রে রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। এই ওষুধ খেলে মানুষের কিডনি, লিভার, হৃদ্‌যন্ত্র মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। রোগ নির্ণয়ের পরও ভেজাল ওষুধের কারণে রোগ সারছে না।

জেনিথ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. বেলাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, ভেজাল ওষুধের অভিযোগে গত পাঁচ বছরে ৮০টি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন। কয়েকজন গ্রেপ্তার হলেও আবার ছাড়া পেয়ে ভেজাল ওষুধ তৈরিতে জড়িয়ে পড়েন। ভেজাল ওষুধ চেনার উপায় সম্পর্কে তিনি বলেন, সাধারণত ভেজাল ওষুধ অতিরিক্ত নরম ও শক্ত হয়।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘বর্তমানে ক্যানসার ও করোনার ওষুধ বেশি ভেজাল হচ্ছে। আমরা কিছু কারখানার সন্ধান পেয়েছি। জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ নাঈম গোলদার বলেন, ইনভয়েস নম্বর দেখে ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনলে ভেজাল থেকে বাঁচা যাবে। ইনভয়েস নম্বর হলো ওষুধের সনদ। যে কোম্পানি থেকে ওষুধ কেনা হয়, সে কোম্পানির ইনভয়েস ফার্মেসিকে সংরক্ষণ করতে হয়।

মিটফোর্ডের পাইকারি ওষুধ মার্কেটের কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির এক পরিচালক বলেন, ভেজাল ওষুধ প্রতিরোধে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে তাঁরা টাস্কফোর্স গঠনসহ বিভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছেন। আয়ুর্বেদিক লাইসেন্সের আড়ালে কারখানা বানিয়ে ভেজাল ওষুধ তৈরি হচ্ছে। বাসাবাড়িতেও ডাইস বানিয়ে ভেজাল ওষুধ তৈরি হচ্ছে।

ভেজাল ওষুধসহ গ্রেপ্তার: ভেজাল ওষুধ উৎপাদন, মজুত ও বিক্রির অভিযোগে গত শনিবার তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ। তাঁরা হলেন মিটফোর্ডের মেডিসিন ওয়ার্ল্ড ফার্মেসির ফয়সাল আহমেদ (৩২), লোকনাথ ড্রাগ হাউসের সুমন চন্দ্র মল্লিক (২৭) ও রাফসান ফার্মেসির লিটন গাজী (৩২)। তাঁদের কাছ থেকে দেশি-বিদেশি নামীদামি ব্র্যান্ডের বিপুল পরিমাণ ভেজাল ওষুধ উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে ২ সেপ্টেম্বর সাতজন ও গত ১২ আগস্ট রাজধানী, সাভার ও পিরোজপুরের নেছারাবাদ বিসিক শিল্প এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ ভেজাল ওষুধসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শেখ মুজিবকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ছাত্রদল নেতার পোস্ট, শোকজ পেয়ে নিলেন অব্যাহতি

সিলেটের ডিসি হলেন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে শাস্তি পাওয়া সারওয়ার আলম

আলাস্কা বৈঠকে পুতিনের দেহরক্ষীর হাতে ‘মলমূত্রবাহী স্যুটকেস’ কেন

অপারেশন সিঁদুরে নিহত প্রায় দেড় শ সেনার তালিকা প্রকাশ করে মুছে ফেলল পাকিস্তানি টিভি

মুচলেকা দিয়ে ক্যাম্পাস ছাড়লেন আনন্দ মোহন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত