শাইখ সিরাজ
২৬-এ পা দিল চ্যানেল আই। নিঃসন্দেহে এটি আমাদের জন্য অনেক আনন্দের। একেকটা বছর চলে যাওয়া মানে একদিকে বয়স বাড়া, অন্যদিকে পেছন থেকে সময়কাল কমে আসা। ২৬ বছর একটি টেলিভিশন চ্যানেলের জন্য কম সময় নয়। গণমাধ্যমের ভেতরে বাংলাদেশে ইলেকট্রনিক মিডিয়া অর্থাৎ টেলিভিশনের ইতিহাস কত বছরের? ধরা যাক ৫৪ বছরের। আমরা যখন টেলিভিশন পেলাম তখন তার রূপ, চরিত্র, বিনোদন, তথ্য প্রচারকাঠামো আমাদের ব্যাপকভাবে উৎসাহিত, উদ্দীপিত করেছিল।
টেলিভিশনের অনুষ্ঠান ঘিরে পরিবারের মধ্যে ব্যাপক উন্মাদনা দেখা দেয়। ভাবনা, চিন্তার জায়গা প্রসারিত হতে থাকে। সন্ধ্যা হলেই টেলিভিশনের সামনে বসে যাওয়া অভ্যাসে পরিণত হয়। টেলিভিশনের দুটি দিক ছিল। একটা হলো, পরিবারের ভেতরে টেলিভিশন থাকবে। তবে নির্দিষ্ট সময়ে টেলিভিশন দেখতে হবে। পড়াশোনা বাদ দিয়ে টেলিভিশন দেখা যাবে না। আরেকটি বিষয় হলো, টেলিভিশন থাকা মানেই সে বাসায় ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা উচ্ছন্নে যাওয়া। দুটো রূপ। একটা সময় টেলিভিশন ভাবনাটা এমনই ছিল।
সময়ের প্রয়োজনে বাংলাদেশে স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল এল। নিজস্ব সংস্কৃতির যে বাউন্ডারি ছিল, সেই বাউন্ডারির ভেতরে ছোট্ট করে একটা আঘাত লাগল। প্রশ্ন দাঁড়াল—কোনটা নেব, কোনটা নেব না? একটা কালচার আসে। একধরনের হইচইও বাধিয়ে দেয়। সেটাই ঘটল। শুক্রবারের দিন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে। আমাদের কস্টিউম কিন্তু পায়জামা-পাঞ্জাবি না। কিন্তু আমরা এই পোশাকটিকে আপন করে নিয়েছি। ব্যবহার করতে করতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি। সমাজ এটাকে নিজের করে নিয়েছে। কিছু কিছু জিনিস আছে, আসে ঠিকই কিন্তু টিকে থাকে না। কারণ, সমাজ সেটা চায় না। তো, যখন টেলিভিশন এল অর্থাৎ স্যাটেলাইট টেলিভিশনের প্রভাবে আমাদের সংস্কৃতিতে পরিবর্তন ঘটতে থাকল, আমাদের চালচলন, খাওয়াদাওয়া, লাইফস্টাইলের মধ্যে অন্য দেশের সংস্কৃতিও কিছুটা মিশে গেল।
চ্যানেল আই দেশের নিজস্ব সংস্কৃতির বিকাশ ভাবনা নিয়েই আত্মপ্রকাশ করে। দেশ, জাতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য সবকিছু নিয়ে চ্যানেল আইয়ের যাত্রা শুরু হয়। আকাশ সংস্কৃতির প্রচণ্ড প্রতাপের মুখেও চ্যানেল আই তার কক্ষচ্যুত হয়নি। বিরূপ পরিস্থিতিতেও নিজস্ব সংস্কৃতির বিকাশ ঘটিয়ে চলছে। তবে আশঙ্কা ছিল, স্বাভাবিক নিয়মেই প্রযুক্তিগত পরিবর্তন আসবে। একটি টেলিভিশন চ্যানেল হয়তো শুধু ঘরের ভেতর বসে দেখার মাধ্যম হিসেবে থাকবে না। ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র আকার ধারণ করবে।
তখনো মোবাইল ফোনের আগ্রাসন তেমনভাবে শুরু হয়নি। তখন লড়াইটা ছিল একরকম। কিন্তু মোবাইল ফোনসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যাপক বিস্তার দেখা দেওয়ায় সত্যি বলতে কি টেলিভিশন চ্যানেল অনেকটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড়াল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আধিপত্যের কারণে তথ্য অর্থাৎ সংবাদ প্রবাহ এখন দুর্বার গতিতে ছুটছে তো ছুটছেই। সময় করে এখন ঘরে বসে টেলিভিশন দেখার সুযোগ নেই। সময়ও নেই। কিছু বয়স্ক মানুষ ছাড়া আর কেউ এখন ঘরে বসে টেলিভিশন দেখার সময় পায় না। তরুণ প্রজন্মের কাছে তো এই সুযোগ ও সময় একেবারেই নেই। নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট একটি অনুষ্ঠান টেলিভিশনে দেখার সময় কোথায়? সবাই ব্যস্ত। অতীতের মতো ঘটা করে সময় নিয়ে নির্ধারিত কোনো টেলিভিশন অনুষ্ঠান দেখার আগ্রহ এখন অনেকেরই নেই।
চ্যানেল আই তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে তরুণ, তরুণী, যুবক, যুবতী, শিশু, বয়স্ক অর্থাৎ সব বয়সী মানুষের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ টেলিভিশনের চেহারা তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশমান সময়ে আমাদের কাছে একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। কী কী বিষয় নিয়ে এলে দর্শকের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে? যদিও চ্যানেল আইয়ের শুরুর দিন থেকে এই বিষয়টাকেই আমরা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রেখেছিলাম। সে কারণে বর্তমান সময়ে এসে আমরা বলছি মিডিয়ায় যা কিছু নতুন তার সবটাই চ্যানেল আইয়ের সৃষ্টি। চ্যানেল আই পাশাপাশি দুটি কাজ করেছে। চ্যানেল আই যখন শুরু হয় তখন আমাদের ভাবনা ছিল এই ইন্ডাস্ট্রি একদিন অনেক বড় হবে।
তখন থেকে আমরা ভাবতে থাকি এত বড় ইন্ডাস্ট্রি, লোকবল কোত্থেকে আসবে? এই ভাবনা থেকেই আমরা নানান ধরনের রিয়েলিটি শোয়ের আয়োজন অব্যাহত রাখি। সেখান থেকে বেরিয়ে আসা প্রতিভাবান তরুণ-তরুণীই খেলাধুলা থেকে শুরু করে নাচ, গান, নাটক, মডেলিংসহ দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ভূমিকা রাখছে। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল তাদের অনুষ্ঠানে আমাদের রিয়েলিটি শোয়ের তারকাদেরই গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমান সময়ে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের অনুষ্ঠানে নাচ, গান, অভিনয় ও মডেলিংয়ে যাঁরা ভূমিকা রাখছেন, তাঁদের অধিকাংশই ‘মেড ইন চ্যানেল আই’।
এ পর্যন্ত ঠিক আছে। এরই মধ্যে আমরা ধীরে ধীরে প্রযুক্তির নানা পরিবর্তনের মাঝে নিজেদের টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছি। ক্রমাগত টুজি, থ্রিজি, প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে আমরা পথ চলতে শুরু করি। নতুন একটা এরিয়ায় আমাদের ঢুকতে হলো। তবে এ ক্ষেত্রে নিজস্ব অস্তিত্বে একটা টান পড়ে গেল। টানাপোড়েন দেখা দিল। টানাপোড়েনটা অনেকটা এ রকম—আমি কীভাবে টিকে থাকব? আমার অস্তিত্বকে গুরুত্ব দিয়ে কি টিকে থাকা সম্ভব? আমার নিজস্ব সংস্কৃতি, কালচার, আচার-আচরণ, নিজস্ব ভাবনা, দায়বদ্ধতার কী হবে?
জস্ব সংস্কৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে কি টিকে থাকা সম্ভব? নাকি আমার চিন্তার জগৎকে আরও প্রসারিত করা দরকার? গ্লোবাল ভিলেজে ঢুকতে হলে, টিকতে হলে আমাকে তো নতুন ভাবনাকে গুরুত্ব দিতে হবে। আমার দর্শক অনেক বেশি অ্যাডভান্স হয়ে গেছে। কাজেই নিজেকে বদলাতে হবে। এ রকম একটা জায়গায় যখন এলাম, তখন সত্যি সত্যি সবার জন্য একটা নতুন ভাবনার সৃষ্টি হলো। ভাবনাটা এ রকম—আমি গ্লোবাল ভিলেজে ঢুকতে চাইছি। কিন্তু পৃথিবীর অনেক দেশের কালচার, ভ্যালুজ আমার দেশের সঙ্গে মিলছে না। এ ক্ষেত্রে আমাদের কী করা দরকার?
সমস্যাটা প্রকট হয়ে দেখা দিল। আমি আমার জায়গা থেকে সেই বিষয়গুলোকে যদি মাথায় নিয়ে এগোই তাহলে তো আমি আমার এত দিনের হাজার বছরের যে সংস্কৃতি, সেই সংস্কৃতিকে রক্ষা করতে পারছি না। একটা সময়ে প্রযুক্তিগত আগ্রাসনই আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি দাঁড় করাল। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম তার মধ্যে একটি। ওটিটিতে যেসব কনটেন্ট আসছে তার সঙ্গে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর একটা প্রচ্ছন্ন প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা দিয়েছে। ওটিটিতে যা দেখানো হচ্ছে, টেলিভিশনের নাটক-সিনেমায় তো তা দেখানো যাচ্ছে না। ধর্মীয় মূল্যবোধের ব্যাপারটা সামনে আসছে। আচার-আচরণ ও নানা ধরনের পরিবর্তনের কথা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
এ রকম একটা অস্থিরতার মধ্য দিয়ে আমাদের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো চলছে। হাজার প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও আমরা চ্যানেল আই এখনো দেশীয় ভাবনা, দেশীয় মূল্যবোধকে ধারণ করে এগিয়ে যাচ্ছি। যেমন আমাদের ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মঞ্চনাটক দেখাচ্ছি। এই চিন্তা আর কেউ করেনি। মঞ্চনাটক হচ্ছে আমাদের এই অঞ্চলের সংস্কৃতির আদি ফর্ম। এটাকে ওটিটিতে আনা নিঃসন্দেহে সাহসের ব্যাপার।
শেষে বলতে চাই, দর্শক আবার টেলিভিশনেই ফিরবে। চ্যানেল আই এ ক্ষেত্রে আশাবাদী। চ্যানেল আইয়ের ২৬-এর শুভলগ্নে সবার প্রতি রইল অশেষ কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা।
লেখক: পরিচালক ও বার্তাপ্রধান চ্যানেল আই
২৬-এ পা দিল চ্যানেল আই। নিঃসন্দেহে এটি আমাদের জন্য অনেক আনন্দের। একেকটা বছর চলে যাওয়া মানে একদিকে বয়স বাড়া, অন্যদিকে পেছন থেকে সময়কাল কমে আসা। ২৬ বছর একটি টেলিভিশন চ্যানেলের জন্য কম সময় নয়। গণমাধ্যমের ভেতরে বাংলাদেশে ইলেকট্রনিক মিডিয়া অর্থাৎ টেলিভিশনের ইতিহাস কত বছরের? ধরা যাক ৫৪ বছরের। আমরা যখন টেলিভিশন পেলাম তখন তার রূপ, চরিত্র, বিনোদন, তথ্য প্রচারকাঠামো আমাদের ব্যাপকভাবে উৎসাহিত, উদ্দীপিত করেছিল।
টেলিভিশনের অনুষ্ঠান ঘিরে পরিবারের মধ্যে ব্যাপক উন্মাদনা দেখা দেয়। ভাবনা, চিন্তার জায়গা প্রসারিত হতে থাকে। সন্ধ্যা হলেই টেলিভিশনের সামনে বসে যাওয়া অভ্যাসে পরিণত হয়। টেলিভিশনের দুটি দিক ছিল। একটা হলো, পরিবারের ভেতরে টেলিভিশন থাকবে। তবে নির্দিষ্ট সময়ে টেলিভিশন দেখতে হবে। পড়াশোনা বাদ দিয়ে টেলিভিশন দেখা যাবে না। আরেকটি বিষয় হলো, টেলিভিশন থাকা মানেই সে বাসায় ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা উচ্ছন্নে যাওয়া। দুটো রূপ। একটা সময় টেলিভিশন ভাবনাটা এমনই ছিল।
সময়ের প্রয়োজনে বাংলাদেশে স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল এল। নিজস্ব সংস্কৃতির যে বাউন্ডারি ছিল, সেই বাউন্ডারির ভেতরে ছোট্ট করে একটা আঘাত লাগল। প্রশ্ন দাঁড়াল—কোনটা নেব, কোনটা নেব না? একটা কালচার আসে। একধরনের হইচইও বাধিয়ে দেয়। সেটাই ঘটল। শুক্রবারের দিন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে। আমাদের কস্টিউম কিন্তু পায়জামা-পাঞ্জাবি না। কিন্তু আমরা এই পোশাকটিকে আপন করে নিয়েছি। ব্যবহার করতে করতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি। সমাজ এটাকে নিজের করে নিয়েছে। কিছু কিছু জিনিস আছে, আসে ঠিকই কিন্তু টিকে থাকে না। কারণ, সমাজ সেটা চায় না। তো, যখন টেলিভিশন এল অর্থাৎ স্যাটেলাইট টেলিভিশনের প্রভাবে আমাদের সংস্কৃতিতে পরিবর্তন ঘটতে থাকল, আমাদের চালচলন, খাওয়াদাওয়া, লাইফস্টাইলের মধ্যে অন্য দেশের সংস্কৃতিও কিছুটা মিশে গেল।
চ্যানেল আই দেশের নিজস্ব সংস্কৃতির বিকাশ ভাবনা নিয়েই আত্মপ্রকাশ করে। দেশ, জাতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য সবকিছু নিয়ে চ্যানেল আইয়ের যাত্রা শুরু হয়। আকাশ সংস্কৃতির প্রচণ্ড প্রতাপের মুখেও চ্যানেল আই তার কক্ষচ্যুত হয়নি। বিরূপ পরিস্থিতিতেও নিজস্ব সংস্কৃতির বিকাশ ঘটিয়ে চলছে। তবে আশঙ্কা ছিল, স্বাভাবিক নিয়মেই প্রযুক্তিগত পরিবর্তন আসবে। একটি টেলিভিশন চ্যানেল হয়তো শুধু ঘরের ভেতর বসে দেখার মাধ্যম হিসেবে থাকবে না। ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র আকার ধারণ করবে।
তখনো মোবাইল ফোনের আগ্রাসন তেমনভাবে শুরু হয়নি। তখন লড়াইটা ছিল একরকম। কিন্তু মোবাইল ফোনসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যাপক বিস্তার দেখা দেওয়ায় সত্যি বলতে কি টেলিভিশন চ্যানেল অনেকটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড়াল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আধিপত্যের কারণে তথ্য অর্থাৎ সংবাদ প্রবাহ এখন দুর্বার গতিতে ছুটছে তো ছুটছেই। সময় করে এখন ঘরে বসে টেলিভিশন দেখার সুযোগ নেই। সময়ও নেই। কিছু বয়স্ক মানুষ ছাড়া আর কেউ এখন ঘরে বসে টেলিভিশন দেখার সময় পায় না। তরুণ প্রজন্মের কাছে তো এই সুযোগ ও সময় একেবারেই নেই। নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট একটি অনুষ্ঠান টেলিভিশনে দেখার সময় কোথায়? সবাই ব্যস্ত। অতীতের মতো ঘটা করে সময় নিয়ে নির্ধারিত কোনো টেলিভিশন অনুষ্ঠান দেখার আগ্রহ এখন অনেকেরই নেই।
চ্যানেল আই তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে তরুণ, তরুণী, যুবক, যুবতী, শিশু, বয়স্ক অর্থাৎ সব বয়সী মানুষের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ টেলিভিশনের চেহারা তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশমান সময়ে আমাদের কাছে একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। কী কী বিষয় নিয়ে এলে দর্শকের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে? যদিও চ্যানেল আইয়ের শুরুর দিন থেকে এই বিষয়টাকেই আমরা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রেখেছিলাম। সে কারণে বর্তমান সময়ে এসে আমরা বলছি মিডিয়ায় যা কিছু নতুন তার সবটাই চ্যানেল আইয়ের সৃষ্টি। চ্যানেল আই পাশাপাশি দুটি কাজ করেছে। চ্যানেল আই যখন শুরু হয় তখন আমাদের ভাবনা ছিল এই ইন্ডাস্ট্রি একদিন অনেক বড় হবে।
তখন থেকে আমরা ভাবতে থাকি এত বড় ইন্ডাস্ট্রি, লোকবল কোত্থেকে আসবে? এই ভাবনা থেকেই আমরা নানান ধরনের রিয়েলিটি শোয়ের আয়োজন অব্যাহত রাখি। সেখান থেকে বেরিয়ে আসা প্রতিভাবান তরুণ-তরুণীই খেলাধুলা থেকে শুরু করে নাচ, গান, নাটক, মডেলিংসহ দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ভূমিকা রাখছে। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল তাদের অনুষ্ঠানে আমাদের রিয়েলিটি শোয়ের তারকাদেরই গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমান সময়ে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের অনুষ্ঠানে নাচ, গান, অভিনয় ও মডেলিংয়ে যাঁরা ভূমিকা রাখছেন, তাঁদের অধিকাংশই ‘মেড ইন চ্যানেল আই’।
এ পর্যন্ত ঠিক আছে। এরই মধ্যে আমরা ধীরে ধীরে প্রযুক্তির নানা পরিবর্তনের মাঝে নিজেদের টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছি। ক্রমাগত টুজি, থ্রিজি, প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে আমরা পথ চলতে শুরু করি। নতুন একটা এরিয়ায় আমাদের ঢুকতে হলো। তবে এ ক্ষেত্রে নিজস্ব অস্তিত্বে একটা টান পড়ে গেল। টানাপোড়েন দেখা দিল। টানাপোড়েনটা অনেকটা এ রকম—আমি কীভাবে টিকে থাকব? আমার অস্তিত্বকে গুরুত্ব দিয়ে কি টিকে থাকা সম্ভব? আমার নিজস্ব সংস্কৃতি, কালচার, আচার-আচরণ, নিজস্ব ভাবনা, দায়বদ্ধতার কী হবে?
জস্ব সংস্কৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে কি টিকে থাকা সম্ভব? নাকি আমার চিন্তার জগৎকে আরও প্রসারিত করা দরকার? গ্লোবাল ভিলেজে ঢুকতে হলে, টিকতে হলে আমাকে তো নতুন ভাবনাকে গুরুত্ব দিতে হবে। আমার দর্শক অনেক বেশি অ্যাডভান্স হয়ে গেছে। কাজেই নিজেকে বদলাতে হবে। এ রকম একটা জায়গায় যখন এলাম, তখন সত্যি সত্যি সবার জন্য একটা নতুন ভাবনার সৃষ্টি হলো। ভাবনাটা এ রকম—আমি গ্লোবাল ভিলেজে ঢুকতে চাইছি। কিন্তু পৃথিবীর অনেক দেশের কালচার, ভ্যালুজ আমার দেশের সঙ্গে মিলছে না। এ ক্ষেত্রে আমাদের কী করা দরকার?
সমস্যাটা প্রকট হয়ে দেখা দিল। আমি আমার জায়গা থেকে সেই বিষয়গুলোকে যদি মাথায় নিয়ে এগোই তাহলে তো আমি আমার এত দিনের হাজার বছরের যে সংস্কৃতি, সেই সংস্কৃতিকে রক্ষা করতে পারছি না। একটা সময়ে প্রযুক্তিগত আগ্রাসনই আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি দাঁড় করাল। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম তার মধ্যে একটি। ওটিটিতে যেসব কনটেন্ট আসছে তার সঙ্গে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর একটা প্রচ্ছন্ন প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা দিয়েছে। ওটিটিতে যা দেখানো হচ্ছে, টেলিভিশনের নাটক-সিনেমায় তো তা দেখানো যাচ্ছে না। ধর্মীয় মূল্যবোধের ব্যাপারটা সামনে আসছে। আচার-আচরণ ও নানা ধরনের পরিবর্তনের কথা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
এ রকম একটা অস্থিরতার মধ্য দিয়ে আমাদের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো চলছে। হাজার প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও আমরা চ্যানেল আই এখনো দেশীয় ভাবনা, দেশীয় মূল্যবোধকে ধারণ করে এগিয়ে যাচ্ছি। যেমন আমাদের ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মঞ্চনাটক দেখাচ্ছি। এই চিন্তা আর কেউ করেনি। মঞ্চনাটক হচ্ছে আমাদের এই অঞ্চলের সংস্কৃতির আদি ফর্ম। এটাকে ওটিটিতে আনা নিঃসন্দেহে সাহসের ব্যাপার।
শেষে বলতে চাই, দর্শক আবার টেলিভিশনেই ফিরবে। চ্যানেল আই এ ক্ষেত্রে আশাবাদী। চ্যানেল আইয়ের ২৬-এর শুভলগ্নে সবার প্রতি রইল অশেষ কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা।
লেখক: পরিচালক ও বার্তাপ্রধান চ্যানেল আই
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ জানুয়ারি ২০২৫গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪