Ajker Patrika

মোহাম্মদ সুলতান

সম্পাদকীয়
মোহাম্মদ সুলতান

মোহাম্মদ সুলতানের কথা বলতে গেলে প্রথমেই চলে আসবে ভাষা আন্দোলনের কথা। সে সময়ের যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন তিনি। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সক্রিয় সংগঠক তিনি। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, ১০ জন করে শিক্ষার্থী রাস্তায় বেরিয়ে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করবেন।

মোহাম্মদ সুলতানের ওপর ভার পড়েছিল সেই ১০ জনি মিছিলে অংশগ্রহণকারীর নামের তালিকা করার। বেশ কিছুক্ষণ সেটা তিনি করতে পেরেছিলেন। এরপর আন্দোলনের তীব্রতায় একের পর এক ১০ জনি মিছিল বের হতে থাকলে এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তালিকা আর তৈরি করা যায়নি।

যে তিনজন শিক্ষার্থী সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাদে কালো পতাকা উত্তোলন করেছিলেন, তাঁর একজন ছিলেন মোহাম্মদ সুলতান। ১৯৫২ সালের শেষের দিকে ছাত্র ইউনিয়নের জন্ম হলে মোহাম্মদ সুলতান তার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নির্বাচিত হন। যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্বও তিনি পালন করতে থাকেন।

১৯৫৩ সালে ভাষা আন্দোলনের প্রথম সংকলন সম্পাদনা করেছিলেন হাসান হাফিজুর রহমান। মোহাম্মদ সুলতান ছিলেন সেই সংকলনের প্রকাশক। তাঁর পুঁথিপত্র প্রকাশনী থেকে সংকলনটি প্রকাশিত হয়েছিল। সংকলনটির নাম ছিল ‘একুশে ফেব্রুয়ারী’। এটি ভাষা আন্দোলনের ওপর প্রথম সাহিত্য দলিল। মুসলিম লীগ সরকার প্রকাশনার কিছুদিনের মধ্যেই সংকলনটি বাজেয়াপ্ত করে।

১৯৫৭ সালে ন্যাপের জন্মলগ্নে তিনি ন্যাপের প্রাদেশিক কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। ১৯৬৭ সালে ন্যাপ বিভাজিত হলে তিনি মওলানা ভাসানী অংশের প্রাদেশিক কমিটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। রাজনৈতিক জীবনে তিনি দীর্ঘদিন কারাভোগ করেছেন।মুক্ত অবস্থায়ও বারবার হুলিয়ার কারণে তাঁকে আত্মগোপনে থেকে রাজনৈতিক কার্যাবলির সঙ্গে যুক্ত থাকতে হয়।

রাজনীতির পাশাপাশি তিনি প্রকাশনাশিল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এ দেশের প্রগতিশীল পুস্তক প্রকাশনার গুরুত্ব তিনি বুঝতেন। জীবনের শেষ সম্বলটুকু দিয়ে তিনি প্রগতিশীল পুস্তক প্রকাশনার চেষ্টা করেন।

১৯৮৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। ২০০৭ সালে ধানমন্ডির ৩ নম্বর সড়কটির নামকরণ করা হয় ‘ভাষাসৈনিক মোহাম্মদ সুলতান সড়ক’।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত