Ajker Patrika

ফিরে আসা কলেরা ছড়াচ্ছে দেশজুড়ে

রাশেদ রাব্বি, ঢাকা
ফিরে আসা কলেরা  ছড়াচ্ছে দেশজুড়ে

কলেরার প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে কলেরার জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। বহু বছর ধরে নিয়ন্ত্রণে থাকা কলেরার এই ফিরে আসা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

সম্প্রতি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী, পটিয়া, আনোয়ারা, চন্দনাইশ ও চট্টগ্রাম শহরে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। গত ১ এপ্রিল থেকে ১৫ মে পর্যন্ত এসব এলাকায় ৬ হাজার ৬৯ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। তাদের মধ্যে ২৩ জনের মল সংগ্রহ করে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইসিডিডিআরবি) পাঠানো হয়। এসব নমুনা পরীক্ষা করে ১২ জনের মলে কলেরার জীবাণুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। একই সময়ে যশোরেও প্রায় ১ হাজার ৩০০ মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়, যাদের অনেকের মধ্যেই কলেরার জীবাণু পাওয়া গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কলেরায় আক্রান্তদের বড় অংশই ওয়াসা এবং গভীর নলকূপের পানি পান করেন। হঠাৎ তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া, পান ও ব্যবহারযোগ্য বিশুদ্ধ পানির অভাব এবং কলেরা নির্মূলে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ না করার কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। যেসব এলাকায় কলেরার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে, সেখানে বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে কলেরার টিকা দিতে হবে। নয়তো এটি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ কঠিন হবে।

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগনিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ, জলাধারে পানি কমে যাওয়া ইত্যাদি কারণে কলেরার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। উন্মুক্ত জলাধারে পানি কমে গেলে সেখানে কলেরার জীবাণুর ঘনত্ব বাড়ে। সেই পানি পান করলে কলেরার সংক্রমণ হয়। এমনকি পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহকৃত পানিতেও ছিদ্রের কারণে জীবাণু ছড়িয়ে যায়। দূষণযুক্ত পানি বেশি পরিমাণে পান করলে এবং আক্রান্ত ব্যক্তির কাপড় ও বিছানাপত্র থেকেও রোগটি ছড়িয়ে পড়ে। এ জন্য নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে হবে। জীবাণুর উৎস খুঁজে বের করতে হবে, সরবরাহ লাইনে দূষণ থাকলে সেটা মেরামত করতে হবে। প্রয়োজনে সংক্রমণ এলাকার জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনতে হবে।

জানা গেছে, চট্টগ্রামে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় জেলার সিভিল সার্জন ৬ মে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধানকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে আইইডিসিআর চট্টগ্রামে ১২ সদস্যবিশিষ্ট একটি আউটব্রেক ইনভেস্টিগেশন টিম পাঠায়। ওই তদন্ত দল গত ৭ মে থেকে ১৫ মে পর্যন্ত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি), উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পটিয়া ও বোয়ালখালীতে তদন্তকাজ পরিচালনা করেন।

তদন্ত দলটি বিআইটিআইটিভি, বোয়ালখালী ও পটিয়াতে ভর্তি ২৩ জন রোগীর মলের নমুনা সংগ্রহ করে আরডিটি ফর কলেরা কিট দিয়ে পরীক্ষা করে ১২ জনের মলে কলেরার জীবাণু পায়। পরে সংগৃহীত মলের নমুনাগুলো আরও পরীক্ষার জন্য আইইডিসিআরের ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া পরিদর্শন করা এলাকার বিভিন্ন সন্দেহজনক উৎস থেকে পানি নমুনা সংগ্রহ করে আইসিডিডিআরবির ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়।

এদিকে যশোরে গত ৪ মাসে প্রায় ১ হাজার ৩০০ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলার সিভিল সার্জন ডা. বিল্পব কান্তি বিশ্বাস। তিনি আজকের পত্রিকাকে জানান, তাদের মধ্যে অনেকেই কলেরায় শনাক্ত হয়। তবে এই সময়ে কারও মৃত্যু হয়নি। এ ছাড়া বর্তমানে রোগীর সংখ্যা কমে এসেছে।

সামগ্রিক বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগনিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, চট্টগ্রাম ও যশোরে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। তাদের মধ্যে কলেরার দু-একজন থাকতে পারে। তবে পরিস্থিত এখন নিয়ন্ত্রণ আছে। জলাধারের পানি শুকিয়ে যাওয়া ও পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে না নেওয়ার প্রস্তাব র‍্যাব ডিজির

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

পরিপাকতন্ত্রের ওষুধের পেছনেই মানুষের ব্যয় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত