Ajker Patrika

পুরো আসনের ভোট বাতিলের ক্ষমতা পাচ্ছে না কমিশন

উবায়দুল্লাহ বাদল, ঢাকা
পুরো আসনের ভোট বাতিলের ক্ষমতা পাচ্ছে না কমিশন

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), ১৯৭২-এ বড় সংশোধনী প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়েছে। চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তাব অনুযায়ী, নির্বাচন চলাকালে কোনো ভোটকেন্দ্রে বড় ধরনের অনিয়ম, কারসাজি ও ভোট প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়ার প্রমাণ পেলে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সেই কেন্দ্রের ভোট বা ফল বাতিল করে পুনরায় ভোট গ্রহণের নির্দেশ দিতে পারবে। সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের বেসরকারি ফল প্রকাশের পরও এই ক্ষমতা প্রয়োগ করা যাবে।

যদিও প্রাথমিক সংশোধনী প্রস্তাবে ইসি পুরো আসনের নির্বাচন বা ফল বাতিলের ক্ষমতা চেয়েছিল। আরপিওর চূড়ান্ত সংশোধনী প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য এরই মধ্যে মন্ত্রি পরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। শিগগির মন্ত্রিসভার বৈঠকে এটি উপস্থাপন করা হবে। ইসি ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এর আগে ২৮ মার্চ সংশোধনী প্রস্তাবটি নীতিগত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে তোলা হয়েছিল। তাতে উল্লেখ ছিল, কোনো ভোটকেন্দ্রে, এমনকি পুরো নির্বাচনী এলাকার (আসন) ভোটে বড় ধরনের অনিয়ম, কারসাজি ও ভোটের প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়ার প্রমাণ পেলে গেজেট প্রকাশ স্থগিত এবং ভোট বাতিল করে পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্দেশ দিতে পারবে ইসি। সেই প্রস্তাবে সায় দেয়নি মন্ত্রিসভা। প্রস্তাব পুনর্গঠন করা সাপেক্ষে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। নতুন এই সংশোধনীর ফলে এখন আসনের পরিবর্তে কেন্দ্রের ভোট বাতিল করার ক্ষমতা পাবে ইসি।

শর্ত সাপেক্ষে নীতিগত অনুমোদনের পর গত ২৮ মার্চ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মাহমুদুল হোসাইন খান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, 
‘এটার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, এখনো ফাইনাল হয়নি। আরও কিছু কারেকশন আছে। আরও কিছু মতামতসহ এটা আবার মন্ত্রিসভায় উপস্থাপিত হবে। তারপর আরও কিছু যদি সংযোজন হয়, সেটাসহ পাস করা হবে।’

ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রাথমিক খসড়া সংশোধনীতে বিদ্যমান আরপিওর ৯১ অনুচ্ছেদের (ক) উপদফার পর নতুন উপদফা (কক) যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল, ভোটকেন্দ্রের অনিয়ম, কারসাজি ও ভোট প্রক্রিয়ায় বাধার বিষয়ে ‘দ্রুত তদন্তের’ পর ইসি এই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে। এমনকি গেজেট প্রকাশের পরও এই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে। এমন প্রস্তাবে সরকারের নীতিনির্ধারকেরা হতবাক হয়ে যান এবং প্রস্তাবটি দ্রুত সংশোধন করে পুনরায় মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করার নির্দেশ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৬ এপ্রিল আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সভাপতিত্বে ইসির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে এক বৈঠকে মন্ত্রিসভার নির্দেশনা ও পর্যবেক্ষণ উপস্থাপন করা হয়। এরপরই খসড়া বিলের ১৩(খ) ধারার সংশ্লিষ্ট উপধারা পুনর্গঠন করে খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। খসড়ার অন্য সব বিষয় অপরিবর্তিত আছে।

ইসির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, নীতিগত অনুমোদনের সময় খসড়ায় বলা ছিল, কোনো ভোটকেন্দ্রে, এমনকি পুরো নির্বাচনী এলাকার ভোটে বড় ধরনের অনিয়ম, কারসাজি ও ভোটের প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়ার প্রমাণ পেলে গেজেট প্রকাশ স্থগিত এবং ভোট বাতিল করে পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্দেশ দিতে পারবে ইসি।

চূড়ান্ত খসড়ায় বলা হয়েছে, নির্বাচন চলাকালে কোনো ভোটকেন্দ্রে বড় ধরনের অনিয়ম, কারসাজি ও ভোটের প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়ার প্রমাণ পেলে শুধু সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের ভোট বাতিল করে পুনরায় নির্বাচন করার নির্দেশ দিতে পারবে ইসি। এখানে গেজেট প্রকাশের বিষয়টি পুরোপুরি বাদ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের বেসরকারি ফল প্রকাশের পরও যদি অনিয়ম, কারসাজি ও ভোটের প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে এ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে ইসি।

খসড়ায় প্রার্থীর বকেয়া বিল পরিশোধের সময় বাড়িয়ে মনোনয়নপত্র জমাদানের আগের দিন পর্যন্ত করা হয়েছে। এতে প্রার্থীরা তাঁদের টেলিফোন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি বা সরকারের সেবা প্রদানকারী কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের বকেয়া বিল দেওয়ার সময় অন্তত সাত দিন বেশি পাবেন। কারণ, বিদ্যমান আইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সাত দিন আগে পরিশোধ করার বিধান আছে। এ ছাড়া নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সব স্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব রাখার প্রতিশ্রুতি পূরণের মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে ২০২০ সাল পর্যন্ত আছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত