Ajker Patrika

মাদারীপুরে কমেছে ভেসাল জালের ব্যবহার

সাগর হোসেন তামিম, মাদারীপুর
আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৪: ১৩
মাদারীপুরে কমেছে ভেসাল জালের ব্যবহার

মাদারীপুরে একসময় বছরজুড়েই ভেসাল জাল পেতে মাছ ধরার প্রচলন ছিল। তবে এখন আগের মতো চোখে পড়ে না এসব জাল। মূলত খালে জোয়ারের পানি না আসা, নাব্যতা-সংকট, খাল সরু হওয়াসহ নানা কারণে মাছ কমে যাওয়ায় দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে বাংলার এ ভেসাল জাল।

একাধিক জেলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভেসাল জাল তৈরি করতে ছয় থেকে আটটি বড় বাঁশ লাগে। সঙ্গে মশারির নেট দিয়ে জাল তৈরি করা হয়। এই জাল তৈরিতে খরচ হয় কম। পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা হলেই তৈরি করা যায় ভেসাল জাল। এসব জাল দিয়ে মাছ ধরে দৈনিক ৭০০ থেকে হাজার আয় করতেন জেলেরা। বাজারে দেশি মাছের চাহিদা থাকায় নিমেষেই বিক্রি হয়ে যায় এই জালে ধরা পড়া খাল-বিলের মাছ। বর্ষা মৌসুমে এই জালের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি হয়। কিন্তু বর্তমানে বড় বড় বাঁধ দিয়ে অধিকাংশ খাল ভরাট করার কারণে জোয়ার-ভাটায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে খাল গেছে মরে। খালে-বিলে পর্যাপ্ত পানি ও মাছ না থাকায় আস্তে আস্তে ভেসাল জালের ব্যবহার হারিয়ে যাচ্ছে।

জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, রাজৈর উপজেলার আমগ্রাম, পাখুল্লা, বিল বাঘিয়া, কদমবাড়ী, সেনদিয়া, সদর উপজেলার দৌলতপুর, কেন্দুয়া, আড়িয়াল খাঁ নদ, কুমার নদ, টেকেরহাট, কালকিনি ও ডাসা উপজেলার সাহেবরামপুর, সিঁড়িখান, বালিগ্রাম, শশিকর, পাথুরীরপাড়, নবগ্রাম, শিবচর উপজেলার উৎরাইল, সন্নাসীরচর, চরজানাজাত, বন্দরখোলা, কাঠালবাড়ী, পাচ্চরসহ প্রায় ৩০টি ইউনিয়নের দুই শতাধিক গ্রামে ভেসাল জাল দিয়ে মাছ ধরা হতো। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে এখন অনেকটাই কমে গেছে এ জালের ব্যবহার। শুষ্ক মৌসুমে নদীবেষ্টিত কিছু এলাকা ছাড়া ভেসাল জালের ব্যবহার নেই বললে চলে।

সদরের কুনিয়ার জেলে মৃত্যুঞ্জয় বলেন, ‘১০-১২ বছর আগেও প্রায় সারা বছর ভেসাল জাল দিয়ে মাছ ধরতাম। কিন্তু বর্তমানে শীত আসার আগেই খাল শুকিয়ে যায়। যে কারণে ভেসাল জাল পাতা বন্ধ করে দিতে হয়। তবে বর্ষার দু-তিন মাস জাল দিয়ে মাছ ধরা যায়। তাতে প্রতিদিন হাজার টাকারও মাছ ধরা যায়। তবে আগের মতো আর ভেসাল নেই। বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে অনেকে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন।’

একই গ্রামের বাসিন্দা কপিল মালো বলেন, ‘খালে পানি একটু-আধটু থাকলেও মাছ নেই। বিভিন্ন নিষিদ্ধ জাল দিয়ে বর্ষা শেষ হতে না হতেই সব মাছ ধরে ফেলা হয়। পরে ভেসাল জাল বাইলেও কোনো মাছ পাওয়া যায় না। যে কারণে জালের প্রতি কোনো আগ্রহ নাই। ভেসাল জাল পেতে দু-তিন মাস কোনো রকমে সংসার চলে। আর খাল সেচ দেওয়ার কারণে মা মাছও ধরা পড়ে। এতে মাছও আর আগের মতো বাড়ছে না।’

মাদারীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বাবুল চন্দ্র ওঝা বলেন, ‘ভেসাল জাল একটি প্রাচীন জাল, যা খাল-বিলে মাছ ধরার জন্য জেলেরা ব্যবহার করেন। আর যেসব জাল মশারির মতো, সেসব দিয়ে মাছ ধরা নিষিদ্ধ। কারণ যেসব জাল মশারির কাপড় দিয়ে বানানো হয়, তা দিয়ে মাছের ডিম ও রেণুসহ উঠে আসে জালে। আর খালে জোয়ারের পানি না আসা এবং অধিকাংশ খাল শুকিয়ে যাওয়ায় মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। যে কারণে ভেসাল জালও কমে যাচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত