Ajker Patrika

সংকটেও সম্ভাবনার হাতছানি শাল-চাদরশিল্পের

বাসাইল প্রতিনিধি
আপডেট : ২৯ জানুয়ারি ২০২২, ১২: ০৩
সংকটেও সম্ভাবনার হাতছানি   শাল-চাদরশিল্পের

বাসাইলে তাঁতে শাল-চাদর বোনার কর্মযজ্ঞে এখন ব্যস্ত এ শিল্পে যুক্ত মালিক-শ্রমিকেরা। এ এলাকার তাঁতিদের তৈরি শাল-চাদর গুণে, মানে ও বাহারি ডিজাইনের কারণে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সারা দেশে। নানা সংকটেও সম্ভাবনাময় এ শিল্পের জনপ্রিয়তা বাড়ছে দিন দিন। এ অঞ্চলের সহস্রাধিক পরিবার শাল-চাদর তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে।

শীতের পোশাকের তালিকায় সব বয়সী নারী-পুরুষের মনে স্থান করে নিয়েছে উপজেলার বাথুলী সাদী গ্রামের তাঁতে বোনা এসব শাল-চাদর। তাঁতের শাড়ির পাশাপাশি কদর বাড়ছে এসব পণ্যের। বাহারি রং, ডিজাইন আর নিপুণ কারুকার্যে আকর্ষণীয় এসব শাল-চাদর নজর কেড়েছে ক্রেতার। এসব শাল-চাদর পৌঁছে যাচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে। বাহারি রঙের সুতায় হাত ও তাঁতকলে সুনিপুণ কারুকার্যে তৈরি করা হয় এসব শাল-চাদর। এর দৈর্ঘ্য চার থেকে পাঁচ হাত এবং দুই থেকে আড়াই হাত প্রস্থ হয়ে থাকে। দেশের বিভিন্ন এলাকার শ্রমিকেরা এ পল্লির কারখানাগুলোতে বাহারি নাম ও ডিজাইনের প্রায় ২৫ ধরনের চাঁদর তৈরি করেন। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও দক্ষ কারিগর দিয়ে ফ্যাশন উপযোগী করে তৈরি করা হয় বলে জানা গেছে। বাথুলী সাদী ছাড়াও এ অঞ্চলের গড়াসিন, হাবলা, আদাবাড়ির তাঁতপল্লিতেও তৈরি হচ্ছে এসব শাল-চাদর। এ অঞ্চলের সহস্রাধিক পরিবার শাল-চাদর তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে।

বাথুলী সাদীর তাঁত মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সারা বছর শাড়ির পাশাপাশি শাল-চাদর তৈরি করে মজুত রাখা হয়। তবে হেমন্তের শুরুর আগ থেকে শীত মৌসুমের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত শাল-চাদর তৈরির কাজে বেশি সময় পার হয়।

তাঁত শ্রমিকেরা জানান, একজন শ্রমিক দিনে তিন-চারটা শাল বা চাদর তৈরি করতে পারেন। এতে যা মজুরি পান, তাতে কোনো রকমে তাঁদের সংসার চলে।

তাঁতমালিকেরা জানান, এ অঞ্চলের তৈরি বাহারি শাল-চাদর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে। তবে সুতাসহ অন্যান্য উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়া নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে।

বাথুলী সাদীর তাঁতমালিক লাইলী বেগম উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাহ আলম জানান, অর্থনৈতিক সংকট, কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে শীতের স্থায়িত্ব কমে যাওয়ায় কয়েক বছর ধরে চাদর বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না।

বাথুলী সাদী তাঁত উন্নয়ন সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এমবি এন্টারপ্রাইজের তাঁতি বাদল হক জানান, সারা বছর পুঁজি খাটিয়ে চাদর তৈরি করে মজুত করতে হয়। এতে যে পরিমাণ পুঁজির প্রয়োজন, তার জোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সহায়তা পেলে ঐতিহ্যবাহী এ শিল্প দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সমিতির সভাপতি মো. লাল মিয়া জানান, ঐতিহ্যবাহী এ শিল্প টিকিয়ে রাখতে সরকারিভাবে তাঁতমালিকদের স্বল্প সুদে ঋণসুবিধা দেওয়া এবং বিদেশে রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। এ ছাড়া দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে এ শিল্প।

টাঙ্গাইল তাঁত বোর্ডের লিয়াজোঁ কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, তাঁতে তৈরি শাড়ির পাশাপাশি শাল-চাদর শিল্প সম্প্রসারণে কাজ করছে জেলা তাঁত বোর্ড। সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনা, সরকারি-বেসরকারি প্রণোদনার পরিধি বাড়ানো এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে শীতপ্রধান দেশগুলোতে এসব পণ্য রপ্তানির উদ্যোগ নিলে আরও অনেক দূর এগিয়ে নেওয়া যাবে এ শিল্প।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত