Ajker Patrika

দাঁতের ডাক্তার সুভাষ বসু

সম্পাদকীয়
দাঁতের ডাক্তার সুভাষ বসু

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে একটা দারুণ স্মৃতি ছিল মৃণাল সেনের। তিনি তখন ছোট। থাকেন ফরিদপুরে। অনেকেই জানেন, ১৭ বছর বয়স পর্যন্ত মৃণাল সেন থাকতেন ফরিদপুর শহরে। এরপর চলে আসেন কলকাতায়।

সুভাষ বসু ফরিদপুরে এলে মৃণালদের বাড়িতে থাকতেই স্বচ্ছন্দ বোধ করতেন। মৃণালের বাবার সঙ্গে ছিল তাঁর আত্মিক সম্পর্ক। সেবার সমগ্র বাংলার একটি সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল ফরিদপুরে। মৃণালের বাবা ও কিছু কংগ্রেসকর্মী ঠিক করলেন, কী করে এই শহরের ছোট ছোট সমস্যা মেটাবেন। সুভাষ বসু আসবেন। থাকবেন। মৃণালের বাবা আর সুভাষ বসুর মধ্যে কোনো আড়াল ছিল না।

যেদিন সুভাষ বসু এলেন, সেদিন মৃণালের প্রচণ্ড দাঁতব্যথা। ব্যথায় খুব কষ্ট পাচ্ছিলেন তিনি। মা বুঝে পাচ্ছিলেন না কী করবেন। এক প্রতিবেশী এসে বললেন, ‘দাঁতে ব্যথা? দাঁতের একটা পেইন্ট কিনে আনুন। সেরে যাবে।’

বিশ্বাস করে মৃণালের মা সেই পেইন্ট কিনে নিয়ে এলেন। এরপর তা লাগিয়ে দিলেন মুখের ভেতর। আর তখনই মুখের ভেতরটা জ্বলতে শুরু করল। ব্যথায় কেঁদে ফেললেন মৃণাল। তাঁর বাবা ছুটে এলেন। সুভাষ বসু বুঝতে পারছিলেন না কী হয়েছে। তিনি দরজার সামনে এসে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব দেখলেন। তারপর একটা কাগজ টেনে নিয়ে খসখস করে তাতে কিছু লিখলেন। দেখা গেল সেটা একটা ব্যথার ওষুধের নাম। ট্যাবলেটটা কিনে আনা হলো ওষুধের দোকান থেকে। সেটা খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মৃণালের দাঁতব্যথা হাওয়া!

সুভাষ বসু বললেন, ‘এটায় সাময়িকভাবে ব্যথা কমবে, কিন্তু দাঁতটাকে তুলতে হবে। না হলে আবার ব্যথা হবে। আমি কদিন বাদে আবার আসব, সেদিন ব্যথার ওষুধ নিয়ে আসব। সে ওষুধে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।’

রাতের ট্রেনে সুভাষ বসু ফরিদপুর ছাড়লেন। দুদিন বাদে ফিরলেন। অতিব্যস্ততার মধ্যেও সুভাষ বসু মৃণালের জন্য ওষুধ আনতে ভোলেননি। ওষুধটা ম্যাজিকের মতো কাজ করেছিল।

মৃণালের খুব গর্ব হয়েছিল—নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ছিলের তাঁর প্রথম দাঁতের ডাক্তার!

সূত্র: মৃণাল সেন, তৃতীয় ভুবন, পৃষ্ঠা ২১-২২

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত