Ajker Patrika

‘জনপ্রিয়তাই কাল এরশাদুলের ’

নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১৮: ৩৭
‘জনপ্রিয়তাই কাল এরশাদুলের ’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার নাটঘর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সম্ভাব্য চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী এরশাদুল হকের জনপ্রিয়তার কারণেই তাঁকে খুন করা হয়েছে বলে দাবি পরিবার ও এলাকাবাসীর। দুর্বৃত্তের গুলিতে ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এরশাদুল হক ও তাঁর সহযোগী বাদল সরকার নিহত হন। এ ঘটনায় গতকাল শনিবার ভোরে একজনকে আটক করেছে পুলিশ। এ ছাড়া পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গুলির চারটি খোসা উদ্ধার করেছে।

জানা যায়, শুক্রবার রাতে এরশাদুল বাদল সরকারকে নিয়ে নাটঘর ইউনিয়নের কুড়িঘর বাজারের পাশে ওয়াজ মাহফিলে যান। সেখান থেকে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফেরার পথে উপজেলার মহেশ সড়কে চারটি মোটরসাইকেলে করে আটজনসহ ১৫ থেকে ১৬ জন দুর্বৃত্ত তাঁদের ঘেরাও করে। মোটরসাইকেল আরোহী বাদল প্রথমেই দুর্বৃত্তদের ছোড়া গুলিতে বিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ঘটনাস্থলেই বাদল মারা যান। পরে তাঁরা এরশাদুলকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে।

গুরুতর আহত অবস্থায় এরশাদুলকে উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান স্থানীয়রা। কিন্তু অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। রাত দেড়টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এরশাদুল।

স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ নভেম্বর নবীনগর উপজেলার ২১ টির মধ্যে ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন হয়েছে। আরও আট ইউপিতে এখনও নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়নি। আটটি মধ্যে নাটঘরও রয়েছে। নাটঘরের বর্তমান চেয়ারম্যান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম শারীরিকভাবে অসুস্থ। তাই তিনি আগামী নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বাবার পরিবর্তে এবার ছেলে এরশাদুল হক চেয়ারম্যানপ্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। তাই তিনি ব্যাপক প্রচার চলিয়েছেন। এই ইউপিতে আরও ৬ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন। তাঁরাও নিজেদের প্রচার চালাচ্ছেন।

তবে সবার মধ্যে এরশাদুলের জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। তাকে সরাতে পারলে অন্যান্য প্রার্থীদের সুবিধা হবে বলে তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে বলছেন তার পরিবার ও এলাকাবাসী।

শনিবার সকাল ১২টায় সরেজমিনে এরশাদুল ও বাদল সরকারের বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের আহাজারি দেখা যায়।

নিহত এরশাদুলের স্ত্রী সুমি বেগম, মা রওশন আরা বেগমসহ অন্য স্বজনেরা এবং বাদল সরকারের বাড়িতে মা সনিতা রানী সরকারসহ স্বজনদের আহাজারি করতে দেখা গেছে।

নিহত এরশাদুলের স্ত্রী সুমি বেগম বলেন, ওয়াজ মাহফিলে গিয়ে তিনি সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। কিছুক্ষণ পরই দেখি খবর আসছে আমার স্বামীকে গুলি করে হত্যার করা হয়েছে। আমার স্বামীর হত্যাকারীকে খুঁজে বের করে শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য সরকার বাহাদুরের কাছে আবেদন রাখছি।

নিহতের বাবা ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নাটঘর ইউপিতে আমার ছেলেসহ আওয়ামী লীগের দুজন ও বিএনপির দুজনসহ ৬ জন চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপ্রত্যাশী। ছেলে নির্বাচন করবে বলে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। গত ১৫-২০ দিন ধরে জনসংযোগ শুরু করেছিল। আমার ছেলে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিল। সুখে দুঃখে সে সব সময় সাধারণ মানুষের পাশে থাকত। এ জন্যই অন্য চেয়ারম্যান প্রার্থীরা তাঁকে গুলি করে হত্যা করেছে।’

আবুল কাশেম বলেন, ‘২০১৯ সালে আমার এক ভাতিজা খুন হয়। সেই খুনের সঙ্গেও এর যোগসূত্রতা থাকতে পারে।’ এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে ছেলের ঘাতকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

নিহতের ছোট ভাই আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘ওয়াজ মাহফিল শেষে ফেরার পথে আমি ভাইয়ের সামান্য পেছনে ছিলাম। গুলির শব্দ শুনে সামনে গিয়ে দেখি তারা প্রায় ১৫ / ১৬ জন। তাদের মধ্যে অনেককেই চিনতে পেরেছি। নিরাপত্তার কারণে তাদের নাম এখন প্রকাশ করতে চাচ্ছি না।’

নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুর রশিদ বলেন, ‘২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে নিহত এরশাদুলের চাচাতো ভাইকে পূর্ব বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের লোকজন হত্যা করে। ওই ঘটনায় এরশাদুল বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলায় অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। মামলার আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে পলাতক আছেন। বিষয়টি তাঁরা আপস-মীমাংসার জন্য বিভিন্নভাবে প্রস্তাব দিয়েছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পিটুনিতে নিহত সেই শামীম মোল্লাকে বহিষ্কার করল জাবি প্রশাসন, সমালোচনার ঝড়

১০-১২তম গ্রেডে নিয়োগ: প্রতি পদের বিপরীতে দুজন থাকবেন অপেক্ষমাণ

জনবল-সরঞ্জাম বেশি হলেও সমরশক্তিতে ভারত কি পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে

মধুপুরে বিদ্যালয়ে ঢুকে শিক্ষককে জুতাপেটা

র‍্যাবকে ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার ঠেকাতে হচ্ছে নতুন আইন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত