Ajker Patrika

সাবেক ওসি প্রদীপের দিকেই ছিল সবার দৃষ্টি

মাইনউদ্দিন শাহেদ, কক্সবাজার
আপডেট : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৩: ৫০
সাবেক ওসি প্রদীপের দিকেই ছিল সবার দৃষ্টি

বহুল আলোচিত সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যার দায়ে টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। গত সোমবার কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাঈলের আদালতে এ রায় ঘোষণা করা হয়।

রায় শোনার জন্য গত সোমবার সকাল থেকেই কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা লোকজন ভিড় করছিলেন। অনেকেই পুলিশের টহল ও বাধা পেরিয়ে আদালতের মূল ফটকে গিয়ে উপস্থিত হন। সারা দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব ছিলেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সবাই খবর নিচ্ছিলেন ওসি প্রদীপের কী শাস্তি হচ্ছে? ফাঁসি হবে তো?

শুধু গত সোমবার নয়, আদালতে সিনহা হত্যা মামলা চলাকালে প্রতিদিনই এ রকম উৎসুক মানুষ ছুটে আসত এ মামলার খবরাখবর নিতে। এসব মানুষের অনেকেই ওসি প্রদীপের কাছে নানাভাবে নির্যাতন ও অত্যাচারের শিকার ছিলেন।

গত সোমবার চকরিয়া উপজেলার পুকপুকুরিয়া এলাকা থেকে ছুটে এসেছিলেন জহির উদ্দিন (৫৫)। তিনি বলেন, ‘প্রদীপ চকরিয়ায় এসআই হিসেবে চাকরিকালে (১৮ বছর আগে) ঘুষ না পেয়ে আমার বড় ক্ষতি করেছিলেন। এখন তাঁর পরিণতি দেখতে এসেছি।’

গত সোমবার কক্সবাজার আদালত প্রাঙ্গণে টেকনাফসহ বিভিন্ন স্থানে তাঁর হাতে নির্যাতনের শিকার লোকজন মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। সেখানে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো প্রদীপের বিরুদ্ধে ক্রসফায়ার বাণিজ্যের অভিযোগ তোলেন।

টেকনাফের হালিমা খাতুন নামের এক নারী তাঁর ছেলেকে ঘুষ না পেয়ে প্রদীপ ক্রসফায়ারে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ করে ফাঁসি দাবি করেছিলেন। এই নারীর মতো একই অভিযোগ করে অনেকেই প্রায় সময় মামলার ধার্য দিনে আদালতে ভিড় করতেন।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে গত বছরের ২৭ জুন সিনহা হত্যা মামলায় অভিযোগ গঠনের পর ২৯ কার্যদিবসে এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ, জেরা ও যুক্তিতর্ক সম্পন্ন হয়। এ মামলার দুই নম্বর আসামি ছিলেন প্রদীপ কুমার দাশ। কিন্তু সবার আলোচনা ও দৃষ্টি ছিল প্রদীপকে ঘিরে।

গত সোমবার প্রদীপের ফাঁসির রায় শুনে আনন্দ উল্লাসে ফেটে পড়েন আদালতে আসা উৎসুক জনতা। আদালত প্রাঙ্গণে মিষ্টি বিতরণ শুরু হয়। গতকাল মঙ্গলবারও টেকনাফসহ বিভিন্ন জায়গায় মিষ্টি বিতরণের খবর পাওয়া গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সোমবার থেকে উল্লাস প্রকাশ করে স্ট্যাটাস দিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ দ্রুত রায় কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, চাকরি জীবনের বেশির ভাগ সময় ঘুরেফিরে কক্সবাজারে কর্মরত থাকা এই পুলিশ কর্মকর্তাকে নিয়ে কৌতূহলের শেষ ছিল না। গত দেড় বছর নানাভাবে আলোচনায় ছিলেন প্রদীপ। প্রদীপ কক্সবাজারের টেকনাফ, মহেশখালী, উখিয়া ও সদর উপজেলায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে চকরিয়া ও পেকুয়াসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে উপপুলিশ পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন সময়ে প্রদীপের বিরুদ্ধে বেপরোয়া আচরণের অভিযোগ ছিল। যেখানে চাকরি করেছেন, সেখানেই রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও বিভিন্ন পেশাজীবীর ওপর কারণে-অকারণে চড়াও হতেন প্রদীপ।

পুলিশের একজন সাবেক কর্মকর্তা বলেন, প্রদীপের বড়ভাই চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজির কার্যালয়ে চাকরি করতেন। এ সুবাদে কোনো অপরাধ করলেও প্রদীপের কিছুই হতো না।

সর্বশেষ ২০১৮ সাল থেকে ২২ মাস টেকনাফ থানায় ওসি হিসেবে চাকরি করেন প্রদীপ কমার দাশ। এ সময়ে ১৪৪টি মাদক নির্মূলের অভিযানের নামে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ অন্তত ২০৪ জন নিহত হন। এসব ঘটনায় অনেক নিরীহ মানুষকে ক্রসফায়ারে হত্যা করার অভিযোগ রয়েছে।

এর আগে প্রদীপ মহেশখালী থানায় ওসি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সেখানেও তাঁর বিরুদ্ধে একই অভিযোগ রয়েছে। এমনকি প্রদীপ পাশের থানায়ও অভিযানে নেমে পড়তেন। মহেশখালীতে জলদস্যু ও টেকনাফে মাদক ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্থনের নামে ‘বাণিজ্য’ করার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম বলেন, টেকনাফসহ বিভিন্ন জায়গায় চাকরিকালে প্রদীপ ক্ষমতা খাটিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করে আসছিলেন। নিরীহ মানুষকে হয়রানি করতেন। সিনহা হত্যা মামলায় তাঁর মৃত্যুদণ্ডের রায়ে এর প্রতিফলন ঘটেছে।

কক্সবাজার বারের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও সিনহা হত্যা মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, ‘কক্সবাজারের আদালতের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে আলোচিত মামলা। এ মামলায় প্রদীপ ও লিয়াকতসহ আসামিদের বিরুদ্ধে যে রায় হয়েছে, তা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সারওয়ার কাবেরী রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘প্রদীপের ফাঁসির রায়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দেশে আইনের পোশাকে আর কোনো প্রদীপ যেন সৃষ্টি না হয়, তার উদাহরণ হয়ে থাকবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সিলেটে পাথর লুটে জড়িত দুই দলের ৩৫ নেতা

৬৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ: ডেলটা গ্রুপের চেয়ারম্যান ফারুকসহ ১৫ জনের নামে মামলা

১ লাখ ৮২২ শিক্ষক নিয়োগ: যোগ্য প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা চলতি সপ্তাহে

‘মুসলিম ফ্রন্টগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করুন, ইন্টেরিম ভেঙে দিন’

‘বউ আমাকে মিথ্যা ভালোবাসত, টাকা না থাকলে ছেড়ে যাবে, তাই মরে গেলাম’

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত