বিভুরঞ্জন সরকার
‘গাহি সাম্যের গান—
যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান,
যেখানে মিশেছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম-ক্রীশ্চান।’
হ্যাঁ, কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন সাম্য ও সম্প্রীতি চেতনার কবি। কিন্তু তাঁকে ‘ইসলামী কবি’ হিসেবে প্রমাণের একটি চেষ্টা পাকিস্তানি শাসকদের যেমন ছিল, তেমনি পঁচাত্তর-পরবর্তী বাংলাদেশের শাসকদেরও ছিল। এখনো নজরুলকে সাম্প্রদায়িক লেবাস পরানোর অপচেষ্টা শেষ হয়নি। তাঁর কিছু লেখা উদ্ধৃত করে, তাঁর মাথায় টুপি পরা ছবি প্রচার করে, এটা বোঝাতে চেষ্টা করা হয় যে নজরুল খুব ধর্মপ্রাণ মানুষ ছিলেন অথবা তাঁর সাহিত্যের মূল উপজীব্য বুঝি ছিল ইসলাম।
নজরুলের একটি গানে ‘মসজিদের পাশে আমায় কবর দিও ভাই’—এ লাইনটি আছে। সে জন্য ১৯৭৬ সালের ২৭ আগস্ট তখনকার পিজি হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করার পর তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদ প্রাঙ্গণে তড়িঘড়ি করে সমাহিত করা হয়। এর পেছনে তৎকালীন ক্ষমতাসীন সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ছিল বলে কেউ কেউ মনে করেন।
কাজী নজরুল ইসলামের লেখা কবিতা, গান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিকামী মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পরই তাঁকে বাংলাদেশে আনার উদ্যোগ নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭২ সালের ২৪ মে কবি সপরিবারে ঢাকায় আসেন। কবির জন্য ধানমন্ডিতে একটি বাড়ি বরাদ্দ করা হয়।
বাংলাদেশে যে কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণা করা হয়, সেটা কবি সুস্থ থাকলে কি সানন্দচিত্তে মেনে নিতেন? তিনি কিন্তু বহু আগেই বলেছিলেন, ‘এই দেশে, এই সমাজে জন্মেছি বলে, আমি শুধু এই দেশেরই, এই সমাজেরই নই। আমি সকল দেশের, সকল মানুষের।’
যে কবি লিখেছেন, ‘জাতের নামে বজ্জাতি সব, জাত জালিয়াত খেলছে জুয়া’, সেই কবিকে ধর্মীয় কবি বানানোর মূঢ়তা যারা দেখায়, তাদের ধিক্কার জানানো ছাড়া উপায় কী? এটা সত্য যে তিনি হামদ, নাত, গজলসহ বহু ইসলামি সংগীত রচনা করেছেন, তাঁর লেখায় আরবি-ফারসি শব্দও প্রচুর ব্যবহার করেছেন। আবার তিনি শ্যামাসংগীত, ভজন, কীর্তনও লিখেছেন। হিন্দুদের দেব-দেবী তাঁর লেখায় স্থান পেয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তিনি ছিলেন উদার ও অসাম্প্রদায়িক চিন্তার একজন মানুষ। প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মচর্চায় তাঁর আগ্রহ দেখা যায়নি। তিনি বিয়ে করেছিলেন হিন্দু নারী প্রমিলা দেবীকে। সন্তানদের নাম রেখেছিলেন কৃষ্ণ মোহাম্মদ, অরিন্দম খালেদ, কাজী অনিরুদ্ধ ইসলাম এবং কাজী সব্যসাচী ইসলাম।
ধর্ম বিশ্বাস দিয়ে নয়, তিনি মানুষকে দেখতেন মানুষ হিসেবে। তিনি লিখেছেন, ‘মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু-মুসলমান/ মুসলিম তার নয়ন-মণি, হিন্দু তাহার প্রাণ/ এক সে আকাশ মায়ের কোলে/ যেন রবি শশী দোলে/ এক রক্ত বুকের তলে, এক সে নাড়ির টান।’
অথবা ‘নদীর পাশ দিয়ে চলতে যখন দেখি একটি লোক ডুবে মরছে, মনের চিরন্তন মানুষটি তখন এ প্রশ্ন ভাবার অবসর দেয় না যে, লোকটা হিন্দু না মুসলমান, একজন মানুষ ডুবছে এইটেই সবচেয়ে বড়, সে ঝাঁপিয়ে পড়ে নদীতে...মন বলে আমি একজন মানুষকে বাঁচিয়েছি।’
যাঁরা হুকোর জল আর ভাতের হাঁড়িতে জাতের মান নির্ধারণ করেন, তাঁদের তিনি ‘বেকুব’ বলে তিরস্কার করেছেন।
ধর্মাচরণ নিয়ে তাঁকে বিদ্রূপ-গঞ্জনা কম সহ্য করতে হয়নি। আক্ষেপ করে তিনি বলেছেন: ‘কেউ বলেন আমার বাণী যবন, কেউ বলেন, কাফের। আমি বলি ও দুটোর কিছুই নয়। আমি মাত্র হিন্দু-মুসলমানকে এক জায়গায় ধরে এনে হ্যান্ডশেক করবার চেষ্টা করেছি, গালাগালিকে গলাগলিতে পরিণত করার চেষ্টা করেছি। সে হাতে হাত মেলানো যদি হাতাহাতির চেয়েও অশোভন হয়ে থাকে, তাহলে ওরা আপনি আলাদা হয়ে যাবে, আমার গাঁটছড়ার বাঁধন কাটতে বেগ পেতে হবে না। কেননা একজনের হাতে আছে লাঠি, আর একজনের আস্তিনে আছে ছুরি। বর্তমানে সাহিত্য নিয়ে ধুলোবালি, এত ধোঁয়া, এত কোলাহল উঠছে যে ওর মাঝে সামান্য দীপবর্তিকা নিয়ে পথ খুঁজতে গেলে আমার বাতিও নিভবে, আমিও মরবো।’
কাজী নজরুলে ইসলাম বাংলা ১৩০৬ সনের ১১ জ্যৈষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলের চুরুলিয়া গ্রামে এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বেঁচেছিলেন ৭৭ বছর। কিন্তু এর মধ্যে ৩৫ বছর ছিলেন জীবন্মৃত। তিনি তাঁর কবিতায় বলেছিলেন: ‘তোমাদের পানে চাহিয়া বন্ধু আর আমি জাগিব না, সারাদিনমান কোলাহল করি কারো ধ্যান ভাঙিব না।-নিশ্চল-নিশ্চুপ আপনার মনে পুড়িব একাকী গন্ধবিধুর ধূপ।’
১৯৪২ থেকে ১৯৭৭ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সে রকমই ছিলেন।
অর্থাৎ বাংলা সাহিত্যের অন্যতম দিকপাল কাজী নজরুল ইসলাম লেখালেখিতে সক্রিয় ছিলেন মাত্র ২২ বছর। এই অল্প সময়ে তিনি কবিতা, গান, গল্প, নাটক, উপন্যাস, প্রবন্ধ কত কিছুই না লিখেছেন। অতি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করা নজরুলের জীবন ছিল একদিকে ছন্নছাড়া, অন্যদিকে ধূমকেতুর মতো। বেঁচে থাকার জন্য জীবনে তাঁকে কত কিছুই না করতে হয়েছে। ‘বিদ্রোহী’ কবিতা লিখে তিনি প্রথম সাড়া ফেলেন। এই কবিতায় তিনি যেমন ভৃগু ভগবান বুকে পদচিহ্ন এঁকে দিতে চেয়েছেন, তেমনি খোদার আসন আরশ ছেদিয়া ওঠার কথাও বলেছেন। তিনি বিদ্রোহী কবি হিসেবে যেমন খ্যাতি পেয়েছেন, তেমনি প্রেমের কবি, সাম্যের কবি, মানবতার কবি হিসেবেও তাঁকেই গণ্য করা হয়। দ্রোহ আর প্রেম তাঁর কাছে অভিন্ন ছিল। তিনি বলেছেন: মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরি আর হাতে রণতূর্য।
ছেলেবেলায় ডাকনাম ছিল দুখু মিয়া। তরুণ বয়সে সৈনিক দলে নাম লিখিয়ে যুদ্ধে গেলেন। ফিরে এসে হয়ে উঠলেন বিদ্রোহী কবি। যত দিন লেখালেখিতে সক্রিয় ছিলেন, তিনি লিখেছেন নিজের মনের আনন্দে, কারও মন জুগিয়ে নয়। বলেছেন, ‘আমি তাই করি ভাই, যখন চাহে মন যা।’
সমাজের বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার কবি লিখেছেন: দেখিনু সেদিন রেলে/ কুলি বলে এক বাবুসাব তারে টেনে দিলো নিচে ফেলে/ চোখ ফেটে এলো জল/ এমনি করে কি জগৎ জুড়িয়া মার খাবে দুর্বল?
দুর্বলের পক্ষাবলম্বনকারী কাজী নজরুল বাংলা সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিভা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সমর্থন ও অকাতর স্নেহ পেয়েছেন। ১৯৪১ সালে এক সাহিত্য সভায় তিনি বলেছিলেন, ‘যদি আর বাঁশি না বাজে, আমি কবি বলে বলছি না, আমি আপনাদের ভালোবাসা পেয়েছিলাম, সেই অধিকারে বলছি, আমায় ক্ষমা করবেন, আমায় ভুলে যাবেন। বিশ্বাস করুন, আমি কবি হতে আসিনি, আমি প্রেম দিতে এসেছিলাম, প্রেম পেতে এসেছিলাম—সে প্রেম পেলাম না বলে আমি এই প্রেমহীন নিরস পৃথিবী থেকে নীরব অভিমানে চিরদিনের জন্য বিদায় নিলাম।’
সত্যদ্রষ্টা কবিকে তাঁর মৃত্যুর দিনে সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করি।
বিভুরঞ্জন সরকার,জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
‘গাহি সাম্যের গান—
যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান,
যেখানে মিশেছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম-ক্রীশ্চান।’
হ্যাঁ, কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন সাম্য ও সম্প্রীতি চেতনার কবি। কিন্তু তাঁকে ‘ইসলামী কবি’ হিসেবে প্রমাণের একটি চেষ্টা পাকিস্তানি শাসকদের যেমন ছিল, তেমনি পঁচাত্তর-পরবর্তী বাংলাদেশের শাসকদেরও ছিল। এখনো নজরুলকে সাম্প্রদায়িক লেবাস পরানোর অপচেষ্টা শেষ হয়নি। তাঁর কিছু লেখা উদ্ধৃত করে, তাঁর মাথায় টুপি পরা ছবি প্রচার করে, এটা বোঝাতে চেষ্টা করা হয় যে নজরুল খুব ধর্মপ্রাণ মানুষ ছিলেন অথবা তাঁর সাহিত্যের মূল উপজীব্য বুঝি ছিল ইসলাম।
নজরুলের একটি গানে ‘মসজিদের পাশে আমায় কবর দিও ভাই’—এ লাইনটি আছে। সে জন্য ১৯৭৬ সালের ২৭ আগস্ট তখনকার পিজি হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করার পর তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদ প্রাঙ্গণে তড়িঘড়ি করে সমাহিত করা হয়। এর পেছনে তৎকালীন ক্ষমতাসীন সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ছিল বলে কেউ কেউ মনে করেন।
কাজী নজরুল ইসলামের লেখা কবিতা, গান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিকামী মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পরই তাঁকে বাংলাদেশে আনার উদ্যোগ নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭২ সালের ২৪ মে কবি সপরিবারে ঢাকায় আসেন। কবির জন্য ধানমন্ডিতে একটি বাড়ি বরাদ্দ করা হয়।
বাংলাদেশে যে কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণা করা হয়, সেটা কবি সুস্থ থাকলে কি সানন্দচিত্তে মেনে নিতেন? তিনি কিন্তু বহু আগেই বলেছিলেন, ‘এই দেশে, এই সমাজে জন্মেছি বলে, আমি শুধু এই দেশেরই, এই সমাজেরই নই। আমি সকল দেশের, সকল মানুষের।’
যে কবি লিখেছেন, ‘জাতের নামে বজ্জাতি সব, জাত জালিয়াত খেলছে জুয়া’, সেই কবিকে ধর্মীয় কবি বানানোর মূঢ়তা যারা দেখায়, তাদের ধিক্কার জানানো ছাড়া উপায় কী? এটা সত্য যে তিনি হামদ, নাত, গজলসহ বহু ইসলামি সংগীত রচনা করেছেন, তাঁর লেখায় আরবি-ফারসি শব্দও প্রচুর ব্যবহার করেছেন। আবার তিনি শ্যামাসংগীত, ভজন, কীর্তনও লিখেছেন। হিন্দুদের দেব-দেবী তাঁর লেখায় স্থান পেয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তিনি ছিলেন উদার ও অসাম্প্রদায়িক চিন্তার একজন মানুষ। প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মচর্চায় তাঁর আগ্রহ দেখা যায়নি। তিনি বিয়ে করেছিলেন হিন্দু নারী প্রমিলা দেবীকে। সন্তানদের নাম রেখেছিলেন কৃষ্ণ মোহাম্মদ, অরিন্দম খালেদ, কাজী অনিরুদ্ধ ইসলাম এবং কাজী সব্যসাচী ইসলাম।
ধর্ম বিশ্বাস দিয়ে নয়, তিনি মানুষকে দেখতেন মানুষ হিসেবে। তিনি লিখেছেন, ‘মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু-মুসলমান/ মুসলিম তার নয়ন-মণি, হিন্দু তাহার প্রাণ/ এক সে আকাশ মায়ের কোলে/ যেন রবি শশী দোলে/ এক রক্ত বুকের তলে, এক সে নাড়ির টান।’
অথবা ‘নদীর পাশ দিয়ে চলতে যখন দেখি একটি লোক ডুবে মরছে, মনের চিরন্তন মানুষটি তখন এ প্রশ্ন ভাবার অবসর দেয় না যে, লোকটা হিন্দু না মুসলমান, একজন মানুষ ডুবছে এইটেই সবচেয়ে বড়, সে ঝাঁপিয়ে পড়ে নদীতে...মন বলে আমি একজন মানুষকে বাঁচিয়েছি।’
যাঁরা হুকোর জল আর ভাতের হাঁড়িতে জাতের মান নির্ধারণ করেন, তাঁদের তিনি ‘বেকুব’ বলে তিরস্কার করেছেন।
ধর্মাচরণ নিয়ে তাঁকে বিদ্রূপ-গঞ্জনা কম সহ্য করতে হয়নি। আক্ষেপ করে তিনি বলেছেন: ‘কেউ বলেন আমার বাণী যবন, কেউ বলেন, কাফের। আমি বলি ও দুটোর কিছুই নয়। আমি মাত্র হিন্দু-মুসলমানকে এক জায়গায় ধরে এনে হ্যান্ডশেক করবার চেষ্টা করেছি, গালাগালিকে গলাগলিতে পরিণত করার চেষ্টা করেছি। সে হাতে হাত মেলানো যদি হাতাহাতির চেয়েও অশোভন হয়ে থাকে, তাহলে ওরা আপনি আলাদা হয়ে যাবে, আমার গাঁটছড়ার বাঁধন কাটতে বেগ পেতে হবে না। কেননা একজনের হাতে আছে লাঠি, আর একজনের আস্তিনে আছে ছুরি। বর্তমানে সাহিত্য নিয়ে ধুলোবালি, এত ধোঁয়া, এত কোলাহল উঠছে যে ওর মাঝে সামান্য দীপবর্তিকা নিয়ে পথ খুঁজতে গেলে আমার বাতিও নিভবে, আমিও মরবো।’
কাজী নজরুলে ইসলাম বাংলা ১৩০৬ সনের ১১ জ্যৈষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলের চুরুলিয়া গ্রামে এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বেঁচেছিলেন ৭৭ বছর। কিন্তু এর মধ্যে ৩৫ বছর ছিলেন জীবন্মৃত। তিনি তাঁর কবিতায় বলেছিলেন: ‘তোমাদের পানে চাহিয়া বন্ধু আর আমি জাগিব না, সারাদিনমান কোলাহল করি কারো ধ্যান ভাঙিব না।-নিশ্চল-নিশ্চুপ আপনার মনে পুড়িব একাকী গন্ধবিধুর ধূপ।’
১৯৪২ থেকে ১৯৭৭ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সে রকমই ছিলেন।
অর্থাৎ বাংলা সাহিত্যের অন্যতম দিকপাল কাজী নজরুল ইসলাম লেখালেখিতে সক্রিয় ছিলেন মাত্র ২২ বছর। এই অল্প সময়ে তিনি কবিতা, গান, গল্প, নাটক, উপন্যাস, প্রবন্ধ কত কিছুই না লিখেছেন। অতি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করা নজরুলের জীবন ছিল একদিকে ছন্নছাড়া, অন্যদিকে ধূমকেতুর মতো। বেঁচে থাকার জন্য জীবনে তাঁকে কত কিছুই না করতে হয়েছে। ‘বিদ্রোহী’ কবিতা লিখে তিনি প্রথম সাড়া ফেলেন। এই কবিতায় তিনি যেমন ভৃগু ভগবান বুকে পদচিহ্ন এঁকে দিতে চেয়েছেন, তেমনি খোদার আসন আরশ ছেদিয়া ওঠার কথাও বলেছেন। তিনি বিদ্রোহী কবি হিসেবে যেমন খ্যাতি পেয়েছেন, তেমনি প্রেমের কবি, সাম্যের কবি, মানবতার কবি হিসেবেও তাঁকেই গণ্য করা হয়। দ্রোহ আর প্রেম তাঁর কাছে অভিন্ন ছিল। তিনি বলেছেন: মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরি আর হাতে রণতূর্য।
ছেলেবেলায় ডাকনাম ছিল দুখু মিয়া। তরুণ বয়সে সৈনিক দলে নাম লিখিয়ে যুদ্ধে গেলেন। ফিরে এসে হয়ে উঠলেন বিদ্রোহী কবি। যত দিন লেখালেখিতে সক্রিয় ছিলেন, তিনি লিখেছেন নিজের মনের আনন্দে, কারও মন জুগিয়ে নয়। বলেছেন, ‘আমি তাই করি ভাই, যখন চাহে মন যা।’
সমাজের বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার কবি লিখেছেন: দেখিনু সেদিন রেলে/ কুলি বলে এক বাবুসাব তারে টেনে দিলো নিচে ফেলে/ চোখ ফেটে এলো জল/ এমনি করে কি জগৎ জুড়িয়া মার খাবে দুর্বল?
দুর্বলের পক্ষাবলম্বনকারী কাজী নজরুল বাংলা সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিভা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সমর্থন ও অকাতর স্নেহ পেয়েছেন। ১৯৪১ সালে এক সাহিত্য সভায় তিনি বলেছিলেন, ‘যদি আর বাঁশি না বাজে, আমি কবি বলে বলছি না, আমি আপনাদের ভালোবাসা পেয়েছিলাম, সেই অধিকারে বলছি, আমায় ক্ষমা করবেন, আমায় ভুলে যাবেন। বিশ্বাস করুন, আমি কবি হতে আসিনি, আমি প্রেম দিতে এসেছিলাম, প্রেম পেতে এসেছিলাম—সে প্রেম পেলাম না বলে আমি এই প্রেমহীন নিরস পৃথিবী থেকে নীরব অভিমানে চিরদিনের জন্য বিদায় নিলাম।’
সত্যদ্রষ্টা কবিকে তাঁর মৃত্যুর দিনে সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করি।
বিভুরঞ্জন সরকার,জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১১ দিন আগেভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫