Ajker Patrika

আরপিও সংশোধনী: ভোট বাতিলে ইসির ক্ষমতা বাড়ছে

উবায়দুল্লাহ বাদল, ঢাকা
আরপিও সংশোধনী: ভোট বাতিলে ইসির ক্ষমতা বাড়ছে

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এ (আরপিও) বড় সংশোধনী আনা হচ্ছে। আরপিও সংশোধনের এই প্রস্তাব আজ মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হচ্ছে। প্রস্তাবগুলোর একটিতে কোনো ভোটকেন্দ্রে এমনকি পুরো নির্বাচনী এলাকার ভোটে বড় ধরনের অনিয়ম, কারসাজি ও ভোটের প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়ার প্রমাণ পেলে গেজেট প্রকাশ স্থগিত এবং ভোট বাতিল করে পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) ক্ষমতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তাঁর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকটি হবে। অনিয়ম, কারসাজি ও ভোটের প্রক্রিয়ায় বাধার বিষয়ে ‘দ্রুত তদন্তের’ পর ইসি এই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে বলে বর্তমান আরপিওর ৯১তম ধারায় নতুন একটি উপধারা অন্তর্ভুক্ত করার কথা প্রস্তাবে বলা হয়েছে।

বিদ্যমান আইনে সেবা প্রদানকারী সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের বকেয়া বিল প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সাত দিন আগে পরিশোধ করার বিধান রয়েছে। প্রস্তাবিত আইনে প্রার্থীর বকেয়া বিল পরিশোধের সময় বাড়িয়ে মনোনয়নপত্র জমাদানের আগের দিন পর্যন্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে প্রার্থীরা তাঁদের টেলিফোন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি বা সরকারের সেবা প্রদানকারী কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের বকেয়া বিল প্রদানের সময় অন্তত সাত দিন সময় বেশি পাবেন।

এ ছাড়া নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সব স্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব রাখার প্রতিশ্রুতি রক্ষায় ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, যতগুলো সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে, তার প্রায় সবই আগে রয়েছে। নতুনের মধ্যে শুধু বিলখেলাপি প্রার্থীদের বিল পরিশোধের সময় বাড়ানো হয়েছে। তাঁদের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য বড় ধরনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে সংশোধনীতে।

নির্বাচনের সময় কেউ পেশিশক্তি প্রয়োগ করলে ভোট বন্ধের ক্ষমতা এখনো আরপিওতে রয়েছে জানিয়ে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সেই ক্ষমতাবলেই ইসি সাম্প্রতিক গাইবান্ধার ফুলছড়ির নির্বাচনে ভোট বাতিল করেছিল।

মন্ত্রিসভার বৈঠকে পাঠানো সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের জন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এ (আরপিও) কিছু সংশোধনীর জন্য ইসি প্রস্তাব করেছে। যাচাই-বাছাই শেষে কিছু প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে আইন মন্ত্রণালয়।

ভোটের দিন পেশিশক্তির ব্যবহার ও অবৈধভাবে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করলে প্রয়োজনে ইসিকে নির্বাচন স্থগিত করার ক্ষমতা প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকালে প্রিসাইডিং বা পোলিং অফিসার বাধার সম্মুখীন হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা চাইতে পারবেন। তারা সহায়তা না দিলে প্রিসাইডিং অফিসারকে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে নির্বাচন বন্ধ করার ক্ষমতা প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে সংশোধনীতে।

জানা গেছে, ভোটকেন্দ্রে পেশিশক্তির ব্যবহার রোধে নতুন বেশ কয়েকটি ধারা সংযোজনের প্রস্তাব দিয়েছিল ইসি। এর মধ্যে ছয়টি ধারাই প্রস্তাব করা হয়েছিল ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তাসংক্রান্ত। এ ছাড়া পক্ষপাতদুষ্ট বা আইন লঙ্ঘনকারী কর্মকর্তার শাস্তি, নির্বাচনী কাজে বাধাদানকারীর শাস্তি এবং গণমাধ্যমকর্মী, পর্যবেক্ষক, ভোটারদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত ও পেশিশক্তির ব্যবহার বন্ধে কিছু ধারা সংযোজনের প্রস্তাব ছিল তাদের।

এসব ধারা-উপধারায় সর্বোচ্চ সাত বছরের জেল ও জরিমানার প্রস্তাব করা হয়েছিল। অবৈধ প্রভাব বিস্তার করে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তিকে বাধা দিলে বা চেষ্টা করলে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ডের প্রস্তাব করা হয়েছে। ভোটকেন্দ্রে পেশিশক্তির ব্যবহারে জড়িত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের শাস্তির প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচনী কার্যক্রমে গণমাধ্যমকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং অবৈধ পেশিশক্তি প্রয়োগ হলে সংশ্লিষ্ট দায়ীদের সর্বোচ্চ সাত বছরের জেল ও অর্থদণ্ডের কথা বলা হয়েছে। এসব প্রস্তাবের প্রায় সবগুলোতেই সায় দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত