Ajker Patrika

সারা রাত শুশ্রূষা

সম্পাদকীয়
আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৯: ৩৭
সারা রাত শুশ্রূষা

ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখে যখন গুলি চলল ছাত্রদের ওপর, তখন ডা. জোহরা বেগম কাজী ছিলেন মেডিকেল কলেজের সামনে। খুবই কৃতী এই চিকিৎসক ১৯৩৫ সালে ‘লেডি হার্ডিং ফর উইমেন’ কলেজ থেকে চিকিৎসাশাস্ত্রে প্রথম স্থান লাভ করেছিলেন। পেয়েছিলেন ভাইসরয় পদক। ১৯৪৮ সালের নভেম্বর মাসে তিনি ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজের আবাসিক সার্জন পদে যোগ দেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় সকালবেলায় হয়েছিল ছাত্র সমাবেশ। আগের দিন যে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল, তা ভেঙে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন শিক্ষার্থীরা। পুলিশ দশজনি মিছিলগুলো থেকে গ্রেপ্তার করতে শুরু করে। এ সময় পুলিশের নির্মম অত্যাচার শুরু হলে শিক্ষার্থীরা আশ্রয় নেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসে, যা তখন ব্যারাক নামে পরিচিত ছিল।

ডা. জোহরা বেগম কাজী মেডিকেল ব্যারাকের সামনে মৃতদেহ দেখে স্তম্ভিত হয়ে যান। বেলা ৩টার দিকে পুলিশ গুলিবর্ষণ শুরু করেছিল। মৃতদেহ দেখে জোহরা কাজীর চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়তে থাকে জল। তিনি দৌড়ে যান মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের ঘরে। তাঁকে পুলিশি হামলার নির্মম দৃশ্য দেখান। সে সময় হাসপাতালে উপচে পড়ছে মানুষের ভিড়।

হাসপাতালের পরিস্থিতি তখন অস্বাভাবিক। মাথা ঠান্ডা করে জোহরা কাজী আহতদের চিকিৎসাসেবায় মন দেন। সেই বিভীষিকার সময় স্বজনদের আর্তচিৎকার, আতঙ্কিত মানুষের এলোপাতাড়ি ছোটাছুটিতে জায়গাটা পরিণত হয় নরকে।

জোহরা বেগম কাজী দেখলেন, হাসপাতালে সার্জারির রোগীই বেশি। গুলিবর্ষণের ঘটনায় যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁদের অনেকের শরীরে ছোটখাটো অপারেশন করে ছেড়ে দিলেন তিনি। কারও কারও ক্ষতস্থানে ড্রেসিং করে ব্যান্ডেজ করে বিদায় দিলেন। আর অনেকের শরীর থেকে অপারেশন করে বুলেট বের করেছেন। সেদিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে থাকা সব ডাক্তার ও নার্স সর্বাত্মক সাহায্য করেছেন ছাত্রদের। জোহরা কাজী নাওয়া-খাওয়া ভুলে সারা রাত কাজ করেছিলেন।

সূত্র: এম আর মাহবুব সম্পাদিত ভাষাসংগ্রামের স্মৃতি, পৃষ্ঠা ৩২-৩৩

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত