Ajker Patrika

ভৈরবের বাঁশিওয়ালা

আব্দুর রব, মৌলভীবাজার
আপডেট : ২৩ জানুয়ারি ২০২২, ০৯: ২১
ভৈরবের বাঁশিওয়ালা

রোদেলা বিকেল। ভিড় বাড়তে শুরু করেছে মেলায়। লোকজনের তারস্বরে হাঁকডাক আর কোলাহলের মধ্যেই কোনো এক পাশ থেকে ভেসে আসছে বাঁশির সুর। এমন সুরের মূর্ছনা কোথা থেকে এল? খুঁজতে খুঁজতে পাওয়া গেল সেই বাঁশিওয়ালাকে। তাঁর মুখভর্তি সাদা দাড়ি, গায়ে সাদা শার্ট। মাথায় ক্যাপ আর পরনের লুঙ্গি বেশ ভালোই মানিয়েছে লোকটিকে। বয়স পঁচাত্তরের বেশি। এই বাঁশিওয়ালার নাম ফজলুর রহমান।

১৫ জানুয়ারি মৌলভীবাজার জেলা সদরে ঐতিহ্যবাহী হজরত সৈয়দ শাহ মোস্তফা (র.) ওরস ও মেলায় বাঁশি বিক্রি করছিলেন ফজলুর রহমান। বাঁশি কিনতে এসে লোকজন তাঁর সুর শুনে মুগ্ধ হন। বেচাকেনার ফাঁকে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। বংশীবাদক ফজলুর জানান, কিশোরগঞ্জের ভৈরবে তাঁর বাড়ি। তবে বাঁশি বিক্রি করতে ছুটে বেড়ান দেশের নানা প্রান্তে। ক্রেতারা তাঁর বাঁশির জাদুতে আটকে থাকেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

কথায় কথায় বেরিয়ে আসে আরও কিছু তথ্য। যেমন—শখের বশেই বাঁশি বাজান তিনি। গ্রামে তাঁর স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি নিয়ে সুখের সংসার। বাঁশির প্রতি ঝোঁক থেকেই দেশের আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়ান। ষাটের দশকে কিশোর বয়সে শিখেছিলেন বাঁশি বাজানো। ১৯৭৬ সালে সাভারের করিম জুট মিলে চাকরি হয়। তখনই সুরের নেশা পেয়ে বসে তাঁকে। চাকরির ফাঁকে বাঁশিটা বেশ ভালো রপ্ত করে নেন ফজলুর।

চাকরি থেকে অবসর নিলেও বাঁশি থেকে ছুটি কিংবা অবসরের কোনোটাই পাননি। কথার এক পর্যায়ে ফজলুর বলে বসলেন, ‘বয়স হয়েছে অনেক। এবারের মেলা হয়তো শেষ মেলা, আর বাঁশি বাজাতে পারব কি না, জানি না।’

ফজলুর রহমানের ছেলেরা সংসার চালান। অভাব-অনটন খুব-একটা নেই। শুধু শখের বশেই ফজলুর এভাবে ঘুরে বেড়ান। তবে এখন আর নিজে বাঁশি তৈরি করেন না। পাইকারিতে কিনে অল্প লাভে বিক্রি কবে দেন। ফজলুর বলেন, ‘আমি লাভ-লস ভাবি না। ঘুরে ঘুরে বাঁশি বাজাতে আর বিক্রি করে আমার খুব ভালো সময় কাটে। এইটাই বড়।’

বাঁশিওয়ালা ফজলুর স্বভাবে বোহেমিয়ান। তবে বয়স বাড়ায় পরিবারের লোকজন এখন আর তাঁকে খুব দূরে যেতে দেন না। তারপরও বাঁশির টানে তিনি ঘরছাড়া। বাঁশির কদর কেমন? জানতে চাইলে তিনি ভারী কণ্ঠে জবাব দেন, ‘আমাগো সময় তো বাঁশি, তবলা এইগুলার যুগ ছিল! এখন তো দেখি কত সহজে কম্পিউটারে (সফটওয়্যারের সাহায্যে) গান হয়ে যায়! হ্যারা নাকি বাঁশিও বাজায় ফেলে মেশিনে। এখন আর খুব বেশি পোলাপান বাঁশি শেখে না। তাই বিক্রিও কম।’

কথা বলতে বলতে এক ক্রেতা হাজির হলেন। ফজলুরের কাছ থেকে বাঁশি কিনলেন তরুণ সমীরণ চাকলাদার। সমীরণ বলেন, ‘এই প্রবীণের কাছে নানা রকমের বাঁশি দেখে আসছি। আর উনি এত সুন্দর করে বাঁশি বাজান, না-কিনলেও হয়তো আমি সুর শুনতে আসতাম। আমি বাঁশি বাজাতে পারি না। তবে তাঁর সুর শুনে সম্মান করতে ৭০ টাকা দিয়ে একটি বাঁশি কিনেছি।’

এই মেলা সত্যিই কি শেষ মেলা, নাকি কথাচ্ছলে বলা? এমন প্রশ্নের উত্তরে ফজলুর রহমান বলেন, ‘লম্বা সময় বাঁশি বাজাতে বাজাতে শ্বাসকষ্ট আমার। এখন আগের মতো পারি না। তাই ভাবছি মেলায় আর আসব না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

পিটুনিতে নিহত সেই শামীম মোল্লাকে বহিষ্কার করল জাবি প্রশাসন, সমালোচনার ঝড়

জনবল-সরঞ্জাম বেশি হলেও সমরশক্তিতে ভারত কি পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে

১০-১২তম গ্রেডে নিয়োগ: প্রতি পদের বিপরীতে দুজন থাকবেন অপেক্ষমাণ

মধুপুরে বিদ্যালয়ে ঢুকে শিক্ষককে জুতাপেটা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত