Ajker Patrika

ভালো নেই সাঁওতালরা

আবদুল মান্নান, মানিকছড়ি (খাগড়াছড়ি)
আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২: ৪৫
ভালো নেই সাঁওতালরা

স্বাধীনতার দুই দশক আগে পার্বত্য জনপদের বসতি গড়া সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর একটি অংশের বাসস্থান খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার পশ্চাৎপদ জনপদ দাইজ্জ্যাপাড়ার অদূরে সাঁওতালপাড়ায়। সাঁওতাল নেতা ভূটো সাঁওতালের বাবা নকুন্দ সাঁওতাল ১৯৫০ সালের আগে কোনো এক সময় স্ত্রী ও প্রথম সন্তান গণেশ সাঁওতাল ও স্বজন–প্রতিবেশীদের নিয়ে বসতি গড়েন এখানে। ১৯৭৪ সালে মারা যান নকুন্দ সাঁওতাল। তাঁর রেখে যাওয়া উত্তরসূরিসহ আজ এই জনপদে বসতি রয়েছে ৮ পরিবারের ৪০-৪২ জন সাঁওতালের। আধুনিকতার ছোঁয়ায় দেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়ন হলেও সব ধরনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত এখানকার সাঁওতালরা। শিক্ষা, চিকিৎসাসহ সরকারি সুযোগ-সুবিধাও মেলে না তাঁদের।

গত ২৪ সেপ্টেম্বর সাঁওতালপাড়ায় গেলে কথা হয় প্রয়াত নকুন্দ সাঁওতালের মেজ ছেলে ভূটো সাঁওতালের সঙ্গে। বললেন, আমাদের খবর কেউ নেয়ও না। মাঝে মাঝে চা শ্রমিক হিসেবে কাজ করেই যা পাওয়া যায় তাতে চলতে হয়।

পরে পরিবারের অন্য সদস্যরাও জানালেন তাঁদের দুঃখগাথা জীবনের যৎসামান্য গল্প। মানিকছড়ি-লক্ষ্মীছড়ির সীমান্তবর্তী কালাপানি খালের উত্তর-পশ্চিমপাড় মানিকছড়ি উপজেলা সদর থেকে প্রায় সাড়ে ৮ কিলোমিটার দূরে ১০–১২ একর নিজস্ব টিলা ভূমিতে মাটির দেয়াল ও ছনের তৈরি ছোট ছোট ঘরে তাঁদের থাকা-খাওয়া। নদীর পাড়ের কুয়ার পানিতে তৃষ্ণা মেটায়, ছড়া পানিতে গোসল করে। মূল দাইজ্জাপাড়া থেকে একটি মাটির রাস্তা করা হলেও জমির মাঝখানে একটি সেতু না হওয়ায় সাঁওতালপাড়া পিছিয়ে রয়েছে! বিধবা বা বয়স্কভাতা, ভিজিডি, ভিজিএফসহ কোনো সরকারি সহযোগিতা কিংবা বৈশ্বিক মহামারির দুর্যোগেও সাহায্য পায়নি সাঁওতালরা। এই প্রথম সাঁওতাল পরিবারের ৫–৬ জন শিশু স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে। কিশোরী ও মায়েরা ৪ কিলোমিটার হেঁটে কমিউনিটি ক্লিনিকে এসেও চিকিৎসা বা পরিবার-পরিকল্পনা সুবিধা গ্রহণ করে না।

রাঙ্গাপানির স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ফ্রেন্ডস জোনের উপদেষ্টা মো. মাঈন উদ্দীন ও দাইজ্জ্যাপাড়ার কার্বারি অংথুইপ্রূ মারমা বলেন, সাঁওতাল পাড়ার রাস্তাটিতে সেতু না থাকায় তারা অনেকটা বিচ্ছিন্ন। ফলে এলাকাটি এখনো অনুন্নত রয়েই গেছে। স্থানীয় নির্বাচন এলে মেম্বার প্রার্থীরা ভোট চাইতে এলেও নির্বাচনের পর সবাই এদের ভুলে যান।

তিনতহরী ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম আজাদ এ প্রসঙ্গে বলেন, আসলে এখানে সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর বসবাসের বিষয়ে জনপ্রতিনিধি হওয়ার আগে জানা ছিল না। এদের দুঃখ, দুর্দশা ও সুবিধাবঞ্চিত থাকার বিষয়ে কোনো মেম্বার বা পাড়া প্রধানেরাও জানায়নি। ফলে সরকারের উন্নয়নের জোয়ারে এদের সম্পৃক্ত করা যায়নি। এখন থেকে সরকারি সব সুবিধা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সাঁওতাল পাড়ায় দিতে চেষ্টা করব।

মানিকছড়ির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তামান্না মাহমুদ বলেন, উপজেলায় অল্পসংখ্যক সাঁওতাল পরিবার থাকার বিষয় জানা থাকলেও ওই জনপদ এবং সুবিধাবঞ্চিত সাঁওতালদের প্রকৃত চিত্র কেউই প্রশাসনকে জানায়নি। এখন থেকে সরেজমিনে তথ্য নিয়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে কাজ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালার সঙ্গে শত্রুতা মুহাম্মদ ইউনূসের, আমি ‘কোল্যাটারাল ড্যামেজ’: টিউলিপ সিদ্দিক

এনসিপি নেতার বাড়িতে কাফনের কাপড়, চিরকুটে লেখা—‘প্রস্তুত হ রাজাকার’

৪০ পুলিশ কর্মকর্তার পদক প্রত্যাহার, অর্থ ফেরতের নির্দেশ

গণশুনানিতে দুদক চেয়ারম্যানের প্রতি ক্ষোভ দেখালেন মৎস্যচাষি

‘কাল দেখা হইবে, ভালো থাকিস’—ছেলেকে বলেছিলেন গণপিটুনিতে নিহত প্রদীপ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত