Ajker Patrika

চীনা দূতাবাসের ওপর বিরক্ত সরকার

সাহিদুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা
আপডেট : ২২ জুন ২০২২, ১৫: ২৮
চীনা দূতাবাসের ওপর বিরক্ত সরকার

বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পদ্মা সেতুকে চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’-এর অংশ দাবি করে যে প্রচার চলছে, তার নেপথ্যে ঢাকায় চীনা দূতাবাসের ভূমিকায় সরকার বেশ বিরক্ত। এ বিরক্তির বিষয়টি দূতাবাসকে কূটনৈতিক চ্যানেলে জানানো হয়েছে। সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের ৭২ ঘণ্টা আগে এই দাবির সমর্থনে ঢাকায় একটি আলোচনা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দূতাবাসের ঘনিষ্ঠ সংগঠন বাংলাদেশ-চায়না সিল্ক রোড ফোরাম। ‘পদ্মা সেতু: বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের আওতায় বাংলাদেশ-চীন সহযোগিতার একটি উদাহরণ’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠান আগামীকাল বুধবার হওয়ার কথা ছিল।

গত সপ্তাহের মাঝামাঝি এই অনুষ্ঠানের জন্য বিতরণ করা ই-কার্ডে প্রধান অতিথি হিসেবে উল্লেখ রয়েছে ঢাকায় চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিংয়ের নাম। ফোরামের চেয়ারম্যান হলেন দিলীপ বড়ুয়া, যিনি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারে (২০০৯-২০১৪) মন্ত্রী ছিলেন। ই-কার্ড বিতরণ শুরু হওয়ার পরপরই দূতাবাসের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ করতে শুরু করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ।

পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বিষয়ে প্রচার এবং জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হওয়া থামাতে সরকার নানামুখী ব্যবস্থা নেয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে বিবৃতি দেওয়ার পাশাপাশি চীনা দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। দূতাবাসকে বলা হয়, বিবৃতি দিয়ে পদ্মা সেতুর বিষয়ে অবস্থান পরিষ্কার করার জন্য। গতকাল সোমবার চীনা দূতাবাসের ফেসবুক পেজ ও ওয়েবসাইটে আগের দিন (রোববার) দূতাবাস চত্বরের একটি অনুষ্ঠানের ছবি এবং রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য সংবলিত একটি বিবৃতি প্রচার করা হয়। এই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুরোধে আয়োজন করা হয়েছে।’ 

এ অনুষ্ঠানে পদ্মা বহুমুখী সেতুকে ‘বাংলাদেশের স্বপ্নের সেতু’ হিসেবে বর্ণনা করে রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় ও সাহসী সিদ্ধান্তে এ সেতু স্বপ্ন থেকে বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে। এ সেতুর মহিমা ও গৌরব বাংলাদেশের জনগণের। এর আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১৭ জুন রাতে এক বিবৃতিতে বলেছে, পদ্মা সেতু নির্মাণে বিদেশি তহবিল ব্যবহার করা হয়েছে এবং সেতুটি ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের’ অংশ দাবি করে একটি মহল প্রচারণা চালাচ্ছে। সেতুটি সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত উল্লেখ করে মন্ত্রণালয় বলেছে, নির্মাণকাজে বিদেশি কোনো অনুদান ও ঋণ নেওয়া হয়নি। তবে দেশীয় অনেক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি কিছু বিদেশি সংস্থাকে সরকার নিযুক্ত করেছে।

এ ছাড়া দূতাবাসের উপপ্রধান হুয়ালং ইয়ানকে ডেকে ‘সরকারের বিরক্ত’ হওয়ার বিষয়টি অবহিত করেন মন্ত্রণালয়ের পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের মহাপরিচালক কাজী রাসেল পারভেজ। দূতাবাস উপপ্রধানকে বলা হয়, মূল পদ্মা সেতু এবং এর সংযোগ সড়কসহ বিভিন্ন অংশে চীনা কোম্পানিগুলোর অংশগ্রহণ নিতান্তই ঠিকাদার হিসেবে কাজ করেছে। সেতুসহ পুরো প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় মেটাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। এ অবস্থায় এই সেতুকে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অংশ দাবি বাস্তবতাবিবর্জিত। আর এ-সম্পর্কিত প্রচারণায় দূতাবাস ও রাষ্ট্রদূতের যুক্ত হওয়া কূটনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে না।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু সম্পর্কে সবশেষ খবর পেতে - এখানে ক্লিক করুন

নানামুখী যোগাযোগের একপর্যায়ে দূতাবাস বুধবারের আলোচনা অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূতের অংশগ্রহণ সম্ভব হবে না বলে আয়োজকদের জানিয়ে দেয়। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ফোরামের চেয়ারম্যান দিলীপ বড়ুয়া গতকাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অনুষ্ঠানটি স্থগিত করেছি। পরে করব।’ কেন বাতিল করলেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সিকোয়েন্স মিলছে না।’ 

পদ্মা সেতু সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত