Ajker Patrika

আমি দপ্তরে যাব কি যাব না তা ভিসি বলবেন, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক

প্রতিনিধি
আপডেট : ২০ জুন ২০২১, ১৪: ০৯
আমি দপ্তরে যাব কি যাব না তা ভিসি বলবেন, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক

জাককানইবি: জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. নির্মল চন্দ্র সাহা অফিস না করায় ব্যাহত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কার্যক্রম। শিক্ষার্থীদের সনদ, ফলাফল প্রকাশ, পরীক্ষা আয়োজন, শিক্ষকদের কাছে খাতা পাঠানোসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ নথিতে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তার স্বাক্ষরের প্রয়োজন হয়। দপ্তরের প্রধান নির্মল চন্দ্র না আসায় স্বাক্ষর সংগ্রহে বিপাকে পড়ছে বিভিন্ন বিভাগ ও শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ড. নির্মল চন্দ্র সাহা বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেব না। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথাও বলব না। তোমাদের কিছু জানার থাকলে উপাচার্যকে জিজ্ঞেস করো। আমি দপ্তরে যাব কি যাব না, তা তিনি বলতে পারবেন। আমি বাসায় বসে কাজ করব।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ড. নির্মল চন্দ্র সাহা দীর্ঘ ১৫ মাস অফিস করছেন না। তাঁর অনুপস্থিতিতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। আর পরীক্ষা নিয়েও ফলাফল প্রকাশ করতে পারছে না বিভিন্ন বিভাগ।

করোনার সংক্রমণ রোধে গত বছরের মার্চের শেষ দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি ঘোষণা করা হয়। তবে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম ও সীমিত পরিসরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তর চালু রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমানসহ অন্যান্য কর্মকর্তা রুটিন মাফিক অফিসে করলেও আসেন না পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. নির্মল চন্দ্র সাহা। গত বছরের মার্চ থেকে চলতি জুন পর্যন্ত ১৫ মাসে তিনি মাত্র সাত দিন দপ্তরে এসেছেন। সাপ্তাহিক ও অন্যান্য ছুটি বাদ দিলেও তিনি ১৫ মাসের মধ্যে ৩৭০ দিনের বেশি অফিসে আসেননি বলে তাঁর দপ্তরের অন্যরা অভিযোগ করেছেন।

এ ছাড়া, চলতি সময়ে বিভিন্ন বিভাগ পরীক্ষা নিয়ে কোর্স শেষ করলেও ফলাফল আটকে রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বারবার দপ্তরে আসার তাগাদা দিলেও নির্মল চন্দ্র ব্যক্তিগত গাড়ি দাবি করে বসেন। সেটি না দেওয়ায় তিনি বাসা থেকেই অফিস করছেন। অধস্তন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ফাইল নিয়ে তাঁর বাসায় গিয়ে স্বাক্ষর এনে কাজ চালাচ্ছেন।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, কেবল ড. নির্মল চন্দ্রের স্বাক্ষর নেওয়ার জন্য গোপনীয় নথি নিয়ে তাঁর বাসায় যেতে হয়। নথি আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময় গণপরিবহন ব্যবহার করায় বাড়তি খরচ হয়। আবার বাসায় গিয়েও ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়।

জানা যায়, সম্প্রতি দপ্তরে সাময়িক সনদ ও নম্বরপত্র তুলতে গেলে কর্মরতদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের কথা-কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। নির্মল চন্দ্রের অফিসে না আসার সুযোগ নেন অন্যরা, সঠিক সময়ে তারাও অফিসে আসেন না।

কয়েক দিন আগে চাকরির জন্য চারুকলা বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থীর জরুরি সনদ প্রয়োজন হলে তিনি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তরে যান। কিন্তু নির্মল চন্দ্র না থাকায় তিনি সনদ নিতে পারছিলেন না। পরে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান রাকিব দপ্তর থেকে সনদ সংগ্রহ করে স্বাক্ষরের জন্য পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের বাসায় পাঠান, যা দপ্তরের নিরাপত্তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাকিব জানান, এটি ছাড়া তাঁর কিছুই করার ছিল না। পরের দিনই ছেলেটির চাকরির জন্য সনদ দরকার ছিল। ব্যবস্থা করার পর সে বাসায় গিয়ে স্বাক্ষর নেয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘স্যার (ড. নির্মল চন্দ্র) দপ্তরে না আসায় শিক্ষার্থী ও বিভাগগুলো নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। আমরাও হয়রানির মুখে পড়ছি। অনিয়ম করলেও কাউকে কিছুই বলা যাচ্ছে না। ফলাফল, সনদের মতো সংবেদনশীল অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথি স্যারের বাসায় পাঠাতে হয়। কোনোভাবে এগুলো বেহাত হলে বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে তার ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। বরং দপ্তরপ্রধান হিসেবে কথা বলা তারই দায়িত্ব। কেন বলছেন না, সেটি তিনিই ভালো জানেন।’

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বহুবার দপ্তরে আসতে বলেছি, লাভ হয়নি। তাঁর চাকরির মেয়াদ রয়েছে দুই মাসের মতো। এটিকে কাজে লাগাচ্ছেন তিনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘তবে নির্মল চন্দ্রকে ছাড়াই কীভাবে কাজ করা যায়, তা নিয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শিগগিরই সংকট কেটে যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত