Ajker Patrika

অপরাধ ও অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনায় গতি আনবে ‘ডাটা হাব’: র‍্যাব

আবদুল হামিদ, ঢাকা
আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২১, ১১: ১০
অপরাধ ও অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনায় গতি আনবে ‘ডাটা হাব’: র‍্যাব

ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা সরকারের তরফ থেকে অনেক আগে থেকেই বলা হচ্ছে। এ নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে চলছে কাজও। কিন্তু সরকারি বিভিন্ন দপ্তর এখনো পুরোনো দিনের ব্যবস্থাপনায় চলছে। এ নিয়ে সমালোচনারও শেষ নেই। এবার সেই সমালোচনার কাতার থেকে বেরিয়ে এল র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। গতকাল মঙ্গলবার ‘পেপারলেস অফিসের’ যাত্রা ঘোষণার মধ্য দিয়েই একটা সুদিনের আশ্বাস দিল র‍্যাব। সংস্থাটির ভাষ্যমতে, ‘ডাটা হাব’-এ যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে অপরাধ সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য ও বাহিনীর অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা গতি পাবে। 

বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও ডিজিটালাইজেশন এগিয়ে যাচ্ছে। এমন অনেক কিছুই এখন এক লহমায় হচ্ছে, যা আগে ভাবা যেত না। এবার ‘ডাটা হাব’-এর মাধ্যমে র‍্যাব পেপারলেস অফিসের যাত্রা করল, যা সংস্থাটিকে আরেক ধাপ এগিয়ে নিল। সংস্থাটির পক্ষে থেকে বলা হচ্ছে, এতে তাদের সক্ষমতা বেড়েছে বহুগুণে। অফিস ব্যবস্থাপনার কাজে যে জনবল ব্যবহৃত হতো, তার বড় অংশ এখন অপারেশনাল (মাঠ পর্যায়ে) কাজে ব্যবহার করা হবে। এতে সাফল্য মিলছে অনেক বেশি। 

র‍্যাব সদর দপ্তরে মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ডাটা হাব, ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স (ওএসআইএনটি), র‍্যাব ডিজিটাল অফিস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, র‍্যাব প্রাইভেট ক্লাউড—এই চার ধরনের প্ল্যাটফর্মের উদ্বোধন করা হয়। এতে বাহিনীটির অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা অনেক সহজ হবে বলে মনে করছে সংস্থাটি। 

পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি, নৌবাহিনী, বিমান, আনসারসহ সাত বাহিনীর সদস্যদের সমন্বয়ে ২০০৪ সালে গঠন করা হয় এলিট ফোর্স র‍্যাব। প্রথমে সন্ত্রাসবিরোধী বিভিন্ন অভিযানের মধ্য দিয়ে আলোচনায় আসে সংস্থাটি। সর্বশেষ জঙ্গিবিরোধী অভিযানে সংস্থাটির ভূমিকা বেশ প্রশংসিত হয়েছে। কিন্তু বাহিনীটির একটি বড় সংকট ছিল সাতটি বাহিনী থেকে আসা এর সদস্যদের বিভিন্ন তথ্য ব্যবস্থাপনা। বিশেষত র‍্যাবের পদায়ন শেষে করে নিজ বাহিনীতে ফিরে যাওয়ার সময় নথিপত্র নিয়ে ঝামেলা পোহাতে হতো সংস্থাটিকে। এতে অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা বেশ দুরূহ হয়ে উঠত। ফলে এই ব্যবস্থাপনার কাজে একটি বড় জনবলকে নিযুক্ত করতে হতো, যা মাঠের কাজে প্রভাব ফেলত। এখন এই সংকট থেকে সংস্থাটি অনেকটাই বেরিয়ে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। 

ডাটা হাবে যুক্ত হওয়ার এই সুফলের কথাই র‍্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন পেপারলেস অফিসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে তুলে ধরেন। র‍্যাব মহাপরিচালক বলেন, এখন থেকে পেপারলেস ডিজিটাল অফিস চালু হলো। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে আরেক ধাপ এগিয়ে গেল বাহিনীটি। এখন থেকে র‍্যাবের প্রত্যেক সদস্যের তথ্য সংরক্ষণ করা হবে। সংস্থাটিতে যে বাহিনী থেকেই জনবল নিয়ে আসা হোক; কাজ শুরুর দিন থেকে আবার বাহিনীতে ফিরে যাওয়া পর্যন্ত তাদের সবকিছু সংরক্ষণে থাকবে। 

শুধু অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা নয়, এই আধুনিকায়নের প্রভাব পড়বে অপরাধ মোকাবিলায়ও। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ডাটা হাবের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে র‍্যাব আরও দ্রুত অপরাধী প্রোফাইলিং, অপরাধী শনাক্তকরণ ও গ্রেপ্তারের সক্ষমতা অর্জন করেছে। ওএসআইএনটির মাধ্যমে গুজব, উসকানিদাতাসহ অন্য অপরাধীদের সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যাবে খুব সহজে। র‍্যাব ডিজিটাল অফিস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে র‍্যাবে কর্মরত সব সদস্যের চাকরির বিবরণ, যোগদান, পদায়ন, ছুটি, প্রশিক্ষণ সম্পর্কে জানা যাবে। এ ছাড়া র‍্যাবের কেনা গাড়ি, রেশনসহ সব সরঞ্জামের বিস্তারিত কিউআর কোডের মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হবে। এই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দাপ্তরিক কাজে র‍্যাবের সক্ষমতা বৃদ্ধিই শুধু নয়, অর্থ ও সময়ও বাঁচবে। 

থাকছে বিশেষায়িত একটি অ্যাপ। এর মাধ্যমে প্রত্যেক সদস্য মোবাইল ফোনেই নির্দিষ্ট আইডি দিয়ে নিজের রেশন, বেতন, ছুটিসহ সব সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কিত তথ্য দেখতে পাবেন। করা যাবে ছুটিসহ সব ধরনের আবেদন ও তার অনুমোদন। আর র‍্যাব প্রাইভেট ক্লাউডের মধ্যমে সংস্থাটির আভিযানিক ও প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ নথি ডিজিটালি সংরক্ষণের সক্ষমতা বাড়ছে। এই ক্লাউডের ধারণক্ষমতা ২ লাখ গিগাবাইট। তথ্য এখন থেকে এই ক্লাউডে সংরক্ষিত হবে বলে কোনো একটি বিশেষ ডিভাইস নষ্ট হলেও তথ্য হারানোর ঝুঁকিতে পড়তে হবে না। এতে সংস্থাটির প্রাতিষ্ঠানিক স্মৃতি রক্ষার সক্ষমতা বেড়েছে। 

এর আগে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) থেকেই তথ্যসম্পর্কিত সহায়তা নিত র‍্যাব। তবে এখন সেটা আর নিতে হবে না। প্রযুক্তিগত সুবিধায় অপরাধ ও অপরাধীদের তথ্য সংরক্ষণ করা সহজ হবে। এখন কোনো ব্যক্তি সম্পর্কে তথ্যের জন্য র‍্যাব হেডকোয়ার্টার ও ব্যাটালিয়নে যোগাযোগের প্রয়োজনও পড়বে না। আটক ব্যক্তির নাম বা আঙুলের ছাপ নিয়ে সার্চ দিলেই তার সম্পর্কে সব তথ্য পেয়ে যাবেন র‍্যাবের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কোম্পানি (সিপিসি) কর্মকর্তারাও। সব মিলিয়ে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে র‍্যাব প্রশাসনিক ও অপারেশনাল কার্যক্রম আগের চেয়ে দ্রুত করতে পারবে। এ জন্য নিজস্ব একটি তথ্যভান্ডারও গড়ে তুলেছে সংস্থাটি। 

এ নিয়ে বেশ আশাবাদী র‍্যাব মহাপরিচালক। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময় দেখেছি, বিভিন্ন বাহিনী থেকে আসা সদস্যদের নিজ বাহিনীতে ফিরে যাওয়ার সময় খুব ঝামেলা হয়। র‍্যাব থেকে বাহিনীতে ফিরে যেতে কাগজপত্রের ঝামেলা বেশি হয়। অনেক সময় কর্মকর্তাদের পেছনে পেছনে ঘুরতে হয়। এখন থেকে সেটা আর হবে না। অফিসের কাজ এখন অনলাইনে সম্পন্ন হবে। প্রত্যেক বাহিনীর সদস্যকে চলে যাওয়ার দিন তাঁর সবকিছু বুঝিয়ে দেওয়া হবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত