Ajker Patrika

টিলা কেটে পরিবেশ ধ্বংস

এস আলম সুমন, কুলাউড়া (মৌলভীবাজার)
আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৪: ২৬
টিলা কেটে পরিবেশ ধ্বংস

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় টিলা কেটে সাবাড় করছে একটি চক্র। রাতের আঁধারে কাটা হচ্ছে মাটি। বিক্রি করা হচ্ছে বসতভিটাসহ বিভিন্ন স্থাপনায়। নির্বিচারে টিলা কাটায় ধস আতঙ্কে রয়েছেন বিভিন্ন টিলা ও এগুলোর পাদদেশে বসবাসকারীরা। উপজেলার ইসলামনগরে চলছে এই পরিবেশ ধ্বংস। মালিক মাটি বিক্রি করছেন দাবি করা হলেও তিনি তা অস্বীকার করেছেন। ইউপি চেয়ারম্যানের টিলাও রক্ষা পায়নি চক্রের থাবা থেকে।

ইসলামনগর এলাকায় গিয়ে জানা যায়, ওই এলাকায় সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন ছোট বড় অর্ধশত টিলা রয়েছে। এসব টিলার ওপরে ও পাদদেশে কয়েক হাজার মানুষের জনবসতি রয়েছে।

গত কয়েক সপ্তাহ থেকে এ ইউনিয়নের বাসিন্দা রহিম উদ্দিন, বাবলু মিয়া, আজাদুর রহমান, নূর উদ্দিনসহ একটি সংঘবদ্ধ চক্র টিলা থেকে মাটি কাটছেন। এর মধ্যে ইসলামনগর গ্রামে ইদন মিয়া, নুরাই মিয়া, ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ এ কে এম নজরুল ইসলাম, কুতুব মিয়া, সিংহনাদের মোস্তফা মিয়ার টিলাসহ বিভিন্ন টিলার মাটি কাটা হচ্ছে।

স্থানীয় কয়েকজন জানান, এক মাস ধরে কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা ইদন মিয়ার মালিকানাধীন ইসলামনগরে প্রায় ৪০ ফুট উচ্চতার টিলা থেকে মাটি কাটছে ওই চক্রটি। বিনিময়ে ইদন মিয়াকে গাড়ি প্রতি ৩০ থেকে ৫০ টাকা দিচ্ছে গাড়ির মালিকেরা।

ওই টিলার পাদদেশে ২০০ মিটার এলাকার মধ্যে দশটি পরিবারের বসতি রয়েছে। অবাধে মাটি কাটায় টিলা ধসে ঘরের ওপর আছড়ে পড়তে পারে এমন আতঙ্কে রয়েছেন ওই সব পরিবারের সদস্যরা।

টিলার পাদদেশে থাকা বসতবাড়ির মালিক মামুন মিয়া বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে মাটি বোঝাই করে টিলা থেকে একটি পিকআপভ্যান নামার সময় আমার ভিটার পাশে থাকা গাছের ওপর আছড়ে পড়ে। গাছ থাকায় আমার ঘর রক্ষা পায়। নয়তো ঘর ভেঙে দুর্ঘটনা ঘটতো।’

টিলার পাদদেশে থাকা দুই বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এক মাস ধরে আজির উদ্দিন, রহিম উদ্দিন, নূর উদ্দিন, বাবলু মিয়া ও আজাদুর রহমান ইদনের টিলার মাটি কেটে নিচ্ছেন। টিলা কাটায় তাঁরা ধসের আতঙ্কে রয়েছেন। প্রাণভয়ে তাঁদের কিছু বলতেও পারেন না।

এ ব্যাপারে চক্রের সদস্য রহিম উদ্দিন বলেন, ‘আমি জমির মাটি কেটে পরিবহন করে দিচ্ছি, টিলার কোনো মাটি কাটেনি।’

আরেক সদস্য বাবলু মিয়া টিলা কাটার বিষয় স্বীকার করে বলেন, ‘ইসলামনগরে চেয়ারম্যানের টিলা থেকে মাটি কাটেনি। তবে ইদন মিয়ার টিলা থেকে মাটি কেটে আমরা কয়েকটি বাড়িতে দিয়েছি। মাটি পরিবহন করলে আমরা ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা ভাড়া পাই।’

তবে নূর উদ্দিন টিলার মাটি কাটার বিষয়টি অস্বীকার করেন।

টিলার মালিক কৃষ্ণপুরের বাসিন্দা ইদন মিয়া বলেন, ‘ইসলামনগরে ছয় একরের টিলাটি আমাদের। টিলাটি নিয়ে স্থানীয় আজির উদ্দিনের সঙ্গে মামলা রয়েছে। টিলার মাটি আজির উদ্দিনসহ একটি চক্র বিক্রি করছেন। আমি কখনো টিলার মাটি কারও কাছে বিক্রি করিনি।’

তবে ইসলামনগরের বাসিন্দা আজির উদ্দিন বলেন, ‘কে বা কারা টিলা কাটছে সেটা আমি জানি না। ইদন মিয়া যে মামলার কথা বলছেন সেটি ১৫ বছর আগে সমাধান হয়ে গেছে। ওই টিলার পাশের টিলাটি আমার ছিল। সেটিও আমি পাঁচ বছর আগে বিক্রি করে দিয়েছি।’

ভাটেরা ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ এ কে এম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার টিলাটির সামনের অংশে বাঁশের বেড়া দিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু একটি চক্র রাতের আঁধারে বেড়া ভেঙে টিলা থেকে মাটি কেটে নিয়েছে। বিষয়টি আমি প্রশাসনকে জানিয়েছি।’

মৌলভীবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক বদরুল হুদার এ বিষয়ে জানা নেই আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরেজমিন ওই এলাকায় পরিদর্শনে যাব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: বিমানবাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

‘ঘুষের জন্য’ ৯১টি ফাইল আটকে রাখেন মাউশির ডিডি: দুদক

রাখাইনে মানবিক করিডর কি প্রক্সি যুদ্ধের ফাঁদ হবে, ভারত-চীন কীভাবে দেখবে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত