Ajker Patrika

রাতে গোপনীয়ভাবে জারি করা অধ্যাদেশ বাতিল করতে হবে: এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৩ মে ২০২৫, ২০: ৫১
এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবস্থান কর্মসূচি। ছবি: আজকের পত্রিকা
এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবস্থান কর্মসূচি। ছবি: আজকের পত্রিকা

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলেছেন, তাঁদের মতামত উপেক্ষা করে রাতের বেলা গোপনীয়ভাবে প্রতিষ্ঠানটির বিলুপ্তির অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (১৩ মে) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবনের সামনে অধ্যাদেশ বাতিল দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে এ কথা বলেন তাঁরা।

এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এই মানববন্ধন ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশ থেকে তাঁরা তিন দিনের কলমবিরতির ঘোষণা দেন।

এ সময় বক্তব্য দেন কাস্টমসের অতিরিক্ত কমিশনার সাধন কুমার কণ্ডু, যুগ্ম কর কমিশনার মোনালিসা শাহরিন সুস্মিতা ও উপ–কর কমিশনার শাহ মোহাম্মদ ফজলে এলাহী। প্রতিবাদ কর্মসূচিতে ৩০০ থেকে ৪০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী অংশ নেন।

এর আগে গতকাল সোমবার মধ্যরাতে অন্তর্বর্তী সরকার এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিলুপ্ত করে ‘রাজস্ব নীতি’ ও ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা’ নামের দুটি পৃথক বিভাগ গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের ২৫ দিন পর এই অধ্যাদেশ জারি করা হয়।

এনবিআর বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামের দুটি আলাদা বিভাগ করতে গত ১৭ এপ্রিল খসড়া অধ্যাদেশে অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ। অধ্যাদেশের খসড়া আপত্তি তুলে এটি বাতিলের দাবি তোলে আয়কর ও শুল্ক ক্যাডারের সদস্যদের সমিতি। পরে ক্যাডার সার্ভিসের বাইরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও আন্দোলনে যোগ দেন।

অতিরিক্ত কমিশনার সাধন কুমার কণ্ডু বলেন, ‘গতকাল জাতীয় রাজস্ব নীতি ও ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ ২০২৫ জারি হলো। এই অধ্যাদেশ হয়েছে বর্তমান সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে। সংস্কারের জন্য যে পরামর্শক কমিটি সরকার করেছিল, সেই কমিটিতে যোগ্য ব্যক্তিদেরই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু সেই কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়নি। প্রত্যাশী সংগঠন হিসেবে আমরাও জানতে পারিনি, ভালোমন্দ বিষয়গুলো নিয়ে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনাই হয়নি। আমাদের মতামতকে উপেক্ষা করে গতকাল রাতে অনেকটা গোপনীয়ভাবে এই অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। অন্য কোনো অধ্যাদেশের মতো জানিয়ে করা হয়নি। সেটার প্রতিবাদে আমরা সমবেত হয়েছি।’

এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবির প্রসঙ্গে সাধন কুমার বলেন, ‘এই অধ্যাদেশ বাতিল করে সংস্কার পরামর্শক কমিটির যে প্রতিবেদন ছিল, সেটি সামনে এনে ওই প্রতিবেদনের ওপরে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে দেশের ভালোর জন্য, রাজস্বের ভালো জন্য, মানুষের ভালোর জন্য যে অধ্যাদেশ করা হবে, তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।’

আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে সাধন কুমার বলেন, ‘আগামী ১৪, ১৫ ও ১৭ মে—এই তিন দিন আমাদের এনবিআরে অধীনস্থ সব দপ্তরে (আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট) কলমবিরতি চলবে। আগামীকাল বুধবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত, ১৫ মে বৃহস্পতিবার ও ১৭ মে শনিবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী কলমবিরতি পালন করবেন।’

তবে এই সময়ে তিনটি কার্যক্রম চালু রাখার কথা জানান সাধন কুমার। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা, বাজেট, রপ্তানি—এই তিন কার্যক্রম চালু থাকবে। বাকি সব কার্যক্রম এই কলমবিরতির আওতায় বন্ধ থাকবে। পরবর্তী কর্মসূচি ১৭ মে শনিবার বেলা ৩টায় ঘোষণা করা হবে।

মোনালিসা শাহরিন সুস্মিতা বলেন, ‘যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অধ্যাদেশ হচ্ছিল, সেখানে সর্বময় সার্ভিসের কারোরই মতামতের প্রতিফলন ঘটেনি। দেশের বৃহত্তর ও অর্থনৈতিক কাঠামো, যেটি কিনা রাষ্ট্রের ভিত্তি, সেই ভিত্তিটি যেন জনবান্ধব ও সংস্কারের ইতিবাচক নিয়মকে মাথায় নিয়ে হয়, তার জন্য সমবেত হয়েছি।’

সুস্মিতা আরও বলেন, ‘যে ফরম্যাটে অধ্যাদেশে জারি হয়েছে, তাতে দেশের রাজস্ব কাঠামোর মজবুত ভিত্তি তৈরি হয় না এবং কাস্টমস ও ট্যাক্স সার্ভিসের কারোরই ইচ্ছের প্রতিফলন ঘটেনি বলে সবাই একমত হয়েছে।’

উপ–কর কমিশনার শাহ মোহাম্মদ ফজলে এলাহী বলেন, ‘রাষ্ট্রের অর্থনীতির মেরুদণ্ড এনবিআর। সেটাকে বিলুপ্ত করার আগে জনগণকে সম্পৃক্ত করা, স্টেকহোল্ডারদের সম্পৃক্ত করা অতীব জরুরি বলে মনে করি। এই অধ্যাদেশ বাতিল করে প্রয়োজনীয় সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে নিরীক্ষার ভিত্তিতে এই সংস্কার কাজ সম্পন্ন করা হোক।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত