Ajker Patrika

খেলাপি ঋণে ডুবছে ব্যাংক খাত

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা
আপডেট : ২৭ জুন ২০২৪, ১৭: ৩৫
খেলাপি ঋণে ডুবছে ব্যাংক খাত

লাগামহীন খেলাপি ঋণে রীতিমতো ডুবতে বসেছে ব্যাংক খাত। ২০০৯ সালের খেলাপি ঋণ বেড়ে ১ লাখ ৮২ হাজার কোটি ছাড়িয়ে গেছে। মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও ব্যাংক খাতের দায়সারা কার্যক্রমের কারণেই খেলাপি ঋণ কমছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে ইচ্ছাকৃত খেলাপিরা অদৃশ্য মন্ত্রের জোরে ব্যাংকিং নীতিমালাকে আমলে নিতেও নারাজ। তাঁরা খেলাপি হওয়ার পরেও বীরদর্পে চলাফেরা করছেন। অথচ ব্যাংক কোম্পানি আইন এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা খেলাপিদের বিষয়ে কড়া নির্দেশনা রয়েছে। এসব নিয়মকানুনকে বাস্তবে সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রয়োগে উদাসীনতা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়সারা নীতি হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা, যা দেশের ইতিহাসে এটাই সর্বোচ্চ। এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৫০ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা এবং তিন মাসে বেড়েছে ৩৬ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা। এক বছর আগে ২০২৩ সালের মার্চে ছিল ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা এবং গত ডিসেম্বরে ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। আবার ২০০৯ সালে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার গঠনের সময় খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাবেক মহাপরিচালক ও অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ড. মইনুল ইসলাম বলেন, খেলাপি ঋণের যে অঙ্ক প্রকাশ করেছে, এটা প্রকৃত তথ্য নয়। খেলাপি ঋণ এর চেয়েও অনেক বেশি। অর্থঋণ আদালত, হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টের মামলাগুলোতে আটকে থাকা খেলাপি ঋণকে জাস্টিফাইড ঋণে অন্তর্ভুক্ত করা যায় না। ৬৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করা হয়েছে, পাঁচ বছরের পুরোনো মন্দ ঋণ, সেটা কিন্তু খেলাপি ঋণে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। এই দুটোকে যোগ করলে খেলাপি ঋণের অঙ্ক ৫ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এ জন্য ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে। সরকার যদি ইচ্ছাকৃতভাবে খেলাপি ঋণের বিরুদ্ধে কঠোর না হয় এবং একটা স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ আদায়ের ব্যবস্থা না করে, তাহলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে না।

জানা গেছে, বাংলাদেশের জন্য দেওয়া আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্তের একটি হলো, ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার কমানো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো কৌশলে খেলাপি ঋণ কম দেখাচ্ছে। আর খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনে বলা থাকলেও বাস্তবে ব্যাংকগুলোও উদাসীন। আর বাংলাদেশ ব্যাংক যেভাবে তদারকি করা দরকার সেভাবে না করে বিশেষ জায়গা থেকে আদিষ্ট হয়ে দায়সারা পরিদর্শন করে। এতে খেলাপি লাগামছাড়া হয়েছে।

এদিকে, ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের লাগাম টানতে ‘ইচ্ছাকৃত ঋণগ্রহীতা শনাক্তকরণ ও চূড়ান্তকরণ এবং তাদের বিরুদ্ধে গৃহীতব্য ব্যবস্থা’ শীর্ষক প্রজ্ঞাপন শর্ত লঙ্ঘন করলে খেলাপিকে কমপক্ষে ৫০ লাখ ও সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা জরিমানার বিধান রেখেছে। আর শর্ত লঙ্ঘন অব্যাহত থাকলে প্রতিদিন ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। যারা ইচ্ছাকৃত খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হবে, ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদনে তাদের ব্যাপারে বিস্তারিত উল্লেখ করতে হবে। তার কোনো ধরনের সুদ মওকুফ বা পুনঃ তফসিল করা যাবে না। এই ঋণ অন্য কোনো ব্যাংক কিনে নিতে পারবে না। এই ঋণ পুরোপুরি শোধ না হওয়া পর্যন্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ইচ্ছাকৃত খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত থাকবে। ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বিদেশভ্রমণ ও ট্রেড লাইসেন্স ইস্যুতে নিষেধাজ্ঞা দিতে পদক্ষেপ নেবে। ইচ্ছাকৃত খেলাপিরা কোনো রাষ্ট্রীয় পুরস্কার বা সম্মাননা পাবেন না। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের তালিকাসহ গাড়ি, বাড়ি, জমি, ফ্ল্যাটের নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব নির্দেশনার বাস্তবায়ন খুব একটা দৃশ্যমান নয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, শুধু খেলাপি ঋণের মধ্যে ইচ্ছাকৃত খেলাপি খুঁজে কোনো ফল আসবে না। বরং যেসব ঋণ বেনামি ও প্রতারণার মাধ্যমে নেওয়া, কিন্তু খেলাপি দেখানো হয়নি, সেসব ঋণকে তদারকির আওতায় আনতে হবে। তাহলে প্রকৃত সুফল মিলবে। এমন ঋণের পরিমাণ খেলাপি ঋণের চেয়ে বেশি। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত