Ajker Patrika

কর্মী নিয়োগ ও প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম

সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা
কর্মী নিয়োগ ও প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম

সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে (এলজিইডি) কর্মী নিয়োগ ও বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা প্রকৌশলী মো. ছানোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলেছেন খোদ এলসিএসের (লোকাল কমিউনিটি সার্ভিস) নারী কর্মী, স্থানীয় ঠিকাদারসহ অনেকে।

এলসিএস কর্মীদের অভিযোগ, চাহিদামতো টাকা না দেওয়ায় কর্মরত কর্মীদের চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেওয়া হয়েছে। প্রতিজনের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা করে নিয়ে ৩০ জনকে নতুন নিয়োগ দিয়েছেন উপজেলা প্রকৌশলী। কমিউনিটি অর্গানাইজার (সিও) ঝনিক চন্দ্র সরকার, সুপারভাইজার ফয়সল আহমদ ও এলসিএস কর্মী শহরবানুর মাধ্যমে এ টাকা লেনদেন হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুরোনো একাধিক কর্মী জানিয়েছেন, সিও ঝনিক বলেছেন, জনপ্রতি ১৫ হাজার টাকা না দিলে চাকরি থাকবে না। নতুন নাম নেওয়া হবে। তাঁদের তিন বছরমেয়াদি চাকরি টাকা না দেওয়ায় দুই বছরেই শেষ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

এদিকে দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা প্রকৌশলী মো. ছানোয়ার হোসেনের বিভিন্ন অনিয়মে সহযোগিতা করেন অফিস সহকারী মো. মোফাজ্জল হোসেন মিলন। ১৩ বছর ধরে একই জায়গায় থাকা মিলন বিভিন্ন প্রকল্পের অঘোষিত ঠিকাদার হিসেবে কাজ করেন। দুজনে মিলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ও রাজস্ব খাতের বেশ কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। যেখানে নানা অনিয়ম করা হয়েছে। গত অর্থবছরে বিভিন্ন প্রকল্প মিলিয়ে উপজেলায় প্রায় ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়।

বিভিন্ন প্রকল্প ঘুরে দেখা গেছে, তেলিয়া-শাহপুর সড়কে ৫ লাখ টাকার কাজে দু-তিন জায়গায় নামমাত্র ইট বিছানো হয়েছে। সদর ইউনিয়নের নয়াহালট গ্রামে রাস্তা সংস্কার করা হয়নি। সেখানকার বাসিন্দা পাবেল মিয়া ও মুছা মিয়া জানান, এই রাস্তার জন্য অর্থ বরাদ্দ হলেও কাজ হয়নি। ইতিমধ্যে সময় শেষ হয়ে গেছে।

নবীন চন্দ্র উচ্চবিদ্যালয়ের পাশের রাস্তা সংস্কার নিয়ে বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, ‘স্কুলে আসার পথে হঠাৎ দেখি ঢালাইয়ের কাজ চলছে। এলজিইডির মিলন ভাইকে দেখলাম খুব দৌড়ঝাঁপ করতে। যেমন খুশি তেমন কাজ হয়েছে এখানে।’

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কেবিএফ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. নূরুজ্জামান বলেন, ‘আমার নামে দুই প্যাকেজের ২৫ লাখ ৬০ হাজার টাকার কাজ এলজিইডির মিলন ভাই দুজন মেম্বারকে দিয়ে করিয়েছেন। টেন্ডার পেলেও কাজ আমি করিনি। কাজের ব্যাপারে কিছু জানি না।’

পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদার বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী সব কাজ টেন্ডারে হওয়ার কথা। কিন্তু মনগড়া লোক দিয়ে অনেক কাজ তাঁরা নিজেরাই করে ফেলেন। আমরা তাঁদের অধীনস্থ থাকায় কিছু বলতে পারি না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেও লাভ হয় না।’

বিল আদায়ে ঘুষ দিয়েছেন এমন একজন জানান, তাঁর কাছ থেকে প্রকৌশলী ছানোয়ার দুই ধাপে ৫১ হাজার টাকা নিয়েছেন। এ নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডার পাশাপাশি হাতাহাতির উপক্রম হয়েছিল।

জানতে চাইলে ‘এলজিইডি নিয়ে নিউজ কেন’ বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন উপজেলা প্রকৌশলী ছানোয়ার। তবে তিনি স্বীকার করেন অনেক কাজে অফিস সহকারী মিলন জড়িত। তিনি বলেন, ‘কাজের অনিয়ম সম্পর্কে আমি জড়িত নই। এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। এলসিএস নারী কর্মী নিয়োগ সরকারি নিয়ম অনুযায়ী হয়েছে। দপ্তরের সংশ্লিষ্ট লোক এর যাচাই-বাছাই করেছে। যাঁরা বঞ্চিত হয়েছেন, তাঁরাই অভিযোগ করছেন।’

এ নিয়ে কথা হলে জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুশফিকীন নূর বলেন, ‘এলসিএস কর্মী নিয়োগ আমার বিষয় নয়। এডিপি-রাজস্ব উন্নয়নকাজের সভাপতি আমি। আমার স্বাক্ষরে বাস্তবায়ন হয়। তবে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সবকিছু দেখা সম্ভব হয় না। যেসব কাজে ত্রুটি আছে, কিংবা হয়নি—সেগুলো তদন্ত করে দেখব। যদি গাফিলতি হয়ে থাকে তাহলে প্রকৌশল অধিদপ্তরকে বলব ব্যবস্থা নিতে।’

যোগাযোগ করা হলে সুনামগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এডিপি-রাজস্ব খাতের বরাদ্দ সম্পর্কে প্রকৌশলী ও ইউএনও ভালো বলতে পারবেন। এ কাজে আমাদের সম্পৃক্ততা নেই। এলসিএস নারী কর্মী নিয়োগের বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। গরিব নারী কর্মীদের ব্যাপারে কেউ অভিযোগ দিলে তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ফেল করায় বকা খেয়ে বাড়ি ছাড়ে বাংলাদেশি কিশোরী, ভারতে ৩ মাসে ২০০ লোকের ধর্ষণ

রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী আটক

দেখো, ওর থেকে আরও ৫ লাখ নিতে পারো কি না—মেসেঞ্জার কলে এনসিপি নেতা নিজাম

‘কাল দেখা হইবে, ভালো থাকিস’—ছেলেকে বলেছিলেন গণপিটুনিতে নিহত প্রদীপ

ট্রাফিক সার্জেন্টকে গালিগালাজ: সহকারী কর কমিশনার ফাতেমা বরখাস্ত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত