Ajker Patrika

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের এমডির অপসারণের দাবিতে আন্দোলনে কর্মীরা

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি 
পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ছবি: আজকের পত্রিকা
পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ছবি: আজকের পত্রিকা

পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) অপসারণসহ বিভিন্ন দাবিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ১০ দিন ধরে আন্দোলন করছেন। ২৮ এপ্রিল থেকে এ আন্দোলন চলছে।

নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (এনপিসিবিএল) নামের এই কেন্দ্রে প্রায় ১ হাজার ৮০০ কর্মী কর্মরত। কোম্পানির কর্মীরা গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ঈশ্বরদীতে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেন। এতে দাবি পূরণে আজ বুধবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়। তবে দাবি না মানায় আজ প্রকল্প এলাকার ভেতরে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ করা হয়। তবে প্রশাসনিক বাধায় কিছুক্ষণ পর তা বন্ধ হয়ে যায়।

মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এনপিসিবিএলের সিনিয়র সহকারী ব্যবস্থাপক ফাহিম শাহরিয়ার ও মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম, সহকারী ব্যবস্থাপক হালিম সরকার, উপসহকারী ব্যবস্থাপক রুবেল হোসেন, টেকনিশিয়ান রমজান আলী প্রমুখ।

এদিকে মঙ্গলবার রাতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে এনপিসিবিএলের সচিব এস আব্দুর রশিদ স্বাক্ষরিত এক ই-মেইলে বলা হয়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র একটি ‘১ক’ শ্রেণিভুক্ত কেপিআই (গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা)। তাই প্রত্যেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রকল্প এলাকা বা সংশ্লিষ্ট স্থাপনায় সব প্রকার শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে হবে এবং যাতে কোনো প্রকার শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ড সংঘটিত না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক, সচেতন থাকতে হবে। তবে এই নোটিশ পাওয়ার পরও বুধবার প্রকল্প এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল হয়।

আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, এক দশক আগে এনপিসিবিএল গঠিত হলেও এখন পর্যন্ত কোনো সার্ভিস রুলস প্রকাশ করা হয়নি। ফলে নেই কোনো দায়িত্বের সুস্পষ্ট বণ্টন, অর্গানোগ্রাম ও পদোন্নতি। এতে জেঁকে বসেছে একগুচ্ছ গ্রেড ও বেতনবৈষম্য। কর্মীরা বঞ্চিত হচ্ছেন নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে। প্রায় ১ হাজার ৮০০ কর্মীর মধ্যে ১ হাজার ৫০০ জনের জন্য প্রকল্প এলাকায় ন্যূনতম বসার ব্যবস্থা নেই। শৌচাগার, স্বাস্থ্য ও মানবিক সুব্যবস্থাও নিশ্চিত করা হয়নি। এতে করে কর্মীরা প্রতিদিন দুর্ভোগের মধ্যে দায়িত্ব পালন করছেন। বিশেষ করে নারী শ্রমিকেরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার।

কর্মীরা আরও জানান, এই কোম্পানিতে কাজের সময় ন্যায্য কথা বলতে গেলেই চাকরিচ্যুত বা চাকরি ছেড়ে চলে যেতে হয়। এসব কারণে রাশিয়া থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অনেকেই চাকরি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। সম্প্রতি শতাধিক কর্মচারীকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তাঁদের চাকরিচ্যুত করা হলেও গ্র্যাচুইটি, সিপিএফ, অভিজ্ঞতা সনদ, ছাড়পত্র কিছুই দেওয়া হয়নি। তাঁরা চরম হয়রানির মধ্যে পড়েছেন।

কোম্পানির প্রকৌশলীসহ অন্য কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, চালু, পরিচালনাসহ সব কাজে এনপিসিবিএলের মেধাবী, চৌকস, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও দক্ষ জনবল যুক্ত থাকলেও সম্প্রতি বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের লোকজন বিভিন্নভাবে বিভ্রান্তিকর মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন। পরমাণু শক্তি কমিশনের কর্মকর্তাদের অযাচিত হস্তক্ষেপ এনসিপিবিএলকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে বাধা দিচ্ছে।

এই অযাচিত হস্তক্ষেপ চরম আকার ধারণ করার জন্য এনসিপিবিএলের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক জাহেদুল হাসানকে দায়ী করেন কর্মীরা। তাঁদের অভিযোগ, একজন অদক্ষ ব্যবস্থাপনা পরিচালককে দিয়ে রূপপুর প্রকল্প পরিচালনা করা হচ্ছে। একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহেদুল। তিনি ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৬২ বার বিদেশ সফরে যান। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এসব তদন্তের দাবিও করেন তাঁরা।

এ বিষয়ে জানাতে চাইলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহেদুল বলেন, ‘আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন দাবিদাওয়ার বিষয়টি পূরণ করার সাধ্য আমার নেই। সবই সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়। সম্প্রতি প্ল্যান্টের ভেতরে নামাজ পড়া ও বসার ব্যবস্থার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সব বিষয়গুলো নির্ভর করছে নীতিগত সিদ্ধান্তের ওপর।’

আন্দোলন প্রসঙ্গে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘অল্প কিছুদিনের মধ্যে অবসরে যাচ্ছি। অবসরে যাওয়ার আগে একটি চক্র আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। ওই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী আমার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। তারা রূপপুর প্রকল্প নিয়েও নানা কথাবার্তা বলছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

অপারেশন সিন্দুর ঘিরে আলোচিত কে এই কর্নেল সোফিয়া কুরেশি

নিজ কার্যালয়ে র‍্যাব কর্মকর্তার গুলিবিদ্ধ লাশ, পাশে চিরকুট

আকাশ প্রতিরক্ষায় কে এগিয়ে, পাকিস্তান কি ভারতের আক্রমণ ঠেকাতে সক্ষম

৫ ভারতীয় পাইলটকে বন্দী করার দাবি পাকিস্তানের

ভাগনের বিয়েতে ১ কেজি সোনা, ৪ বস্তা টাকা, ২১০ বিঘা জমি, পেট্রলপাম্প উপহার দিল মাড়োয়ারি পরিবার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত