Ajker Patrika

‘আমগর বংশে বাতি জ্বালানোর আর কেউ থাকল না’

শেরপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০২৪, ১৯: ২১
‘আমগর বংশে বাতি জ্বালানোর আর কেউ থাকল না’

‘আমার ভাইটারে কেউ আইনা দেও তোমরা। আমগর বংশে বাতি জ্বালানোরও যে কেউ থাকল না। আমার ভাইয়ের সন্তান দুইটা বাঁইচা থাকলেও নিজেরে সান্ত্বনা দিতে পারতাম। এখন কেডা আমগর খোঁজখবর নিব। কেডা আমার বুড়া বাবা-মাটারে দেইখা রাখব।’

পিরোজপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত শেরপুর সদরের মো. মোতালেব হোসেনের (৩৮) বড় বোন লাভলী বেগম (৪৫) এভাবেই আহাজারি করছিলেন। দুর্ঘটনায় মোতালেব, তাঁর স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। একই পরিবারের চারজনের মৃত্যুতে ওই পরিবারসহ গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে স্বজনেরা দিশেহারা।

গতকাল বুধবার রাতে পিরোজপুর-নাজিরপুর সড়কের নূরানী গেট এলাকায় তাঁদের বহনকারী প্রাইভেট কারটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ে গিয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটে। তাতে নিহত আটজনের মধ্যে চারজনই শেরপুর সদরের। তাঁরা হলেন সেনাবাহিনীর বেসামরিক চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের ভীমগঞ্জ রঘুনাথপুর গ্রামের নাজির উদ্দিনের ছেলে মো. মোতালেব হোসেন, তাঁর স্ত্রী সাবিনা খাতুন (৩০), মেয়ে মুক্তা (১২) ও ছেলে সোয়াইব (৪)।

নিহত মোতালেবের বাড়িতে স্বজনদের আহাজারি। ছবি: আজকের পত্রিকাপরিবার সূত্রে জানা গেছে, মোতালেব হোসেন সেনাবাহিনীতে চাকরির সুবাদে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় থাকতেন। দুই দিন আগে মোতালেব ও পিরোজপুরের বাসিন্দা তাঁর বন্ধু শাওন স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে কুয়াকাটা বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাইভেট কারটি খালে পড়ে গেলে গাড়িতে থাকা আটজনই পানিতে ডুবে মারা যান। শাওন নিজেই গাড়ি চালাচ্ছিলেন।

এদিকে ওই খবর মোতালেবের শেরপুরের গ্রামের বাড়ি পৌঁছালে সেখানে এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আজ বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিন ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, উঠানে বসে আহাজারি করছেন মোতালেবের বৃদ্ধ বাবা-মা ও একমাত্র বোন। নিহতদের লাশ আনতে অ্যাম্বুলেন্সে স্বজনেরা আজ ভোরে পিরোজপুরের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। কাল শুক্রবার ভোরে গ্রামের বাড়িতে লাশ পৌঁছাতে পারে।

মোতালেবের ছবি হাতে স্বজনদের আহাজারি। ছবি: আজকের পত্রিকাস্থানীয়রা জানায়, হতদরিদ্র নাজির উদ্দিন (৮০) ও ময়না বেগমের (৬৫) দুই ছেলেমেয়ের মধ্যে মোতালেব ছোট। আগে আউটসোর্সিংয়ের ভিত্তিতে সেনাবাহিনীতে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ছিলেন। বছর তিনেক আগে চাকরি সরকারি হয়। সামান্য বসতভিটা ছাড়া তাঁদের আর কোনো সহায়-সম্পত্তি নেই। মোতালেব সংসারের খরচ চালাতেন। স্ত্রী-সন্তানসহ তাঁর মৃত্যু হওয়ায় এখন পরিবারের খরচ চালানোই দায় হয়ে যাবে পরিবারটির। এখন মোতালেবের বৃদ্ধ মা–বাবাকে কে দেখবে, তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা জসিম উদ্দিন বলেন, ‘মোতালেব ভাই খুবই নম্র–ভদ্র মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। পরিবারের একমাত্র ছেলে হওয়ায় তিনিই পুরো সংসারটা চালাতেন। এখন পরিবারটি অসহায় হয়ে গেল।’

দুই সন্তানসহ মোতালেবের স্ত্রী। ছবি: সংগৃহীতএ বিষয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য ইন্তাজ আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তাদের সংসার চালানোর মতো আর কেউ রইল না। মোতালেবের অনুপস্থিতিতে তাঁর বৃদ্ধ বাবা-মা কীভাবে চলবেন—সেটাই চিন্তার বিষয়। আমি শেরপুরের সন্তান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার–উজ-জামানের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, যাতে এই পরিবারের জন্য তিনি কিছু করেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত