Ajker Patrika

‘খাওয়ুন লাগত না, বান্ধের ব্যবস্থা কইরা দেন’

নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৮ জুন ২০২২, ২১: ০৯
‘খাওয়ুন লাগত না, বান্ধের ব্যবস্থা কইরা দেন’

শুক্রবার সকালে হঠাৎ কইরাই বাসার সামনের বাঁধ ভাইঙ্গা যায়। আমার ঘরে মাচার ওপর প্রায় সাড়ে তিন শ মণ ধানসহ ঘরটা ভাসাইয়া নিল ঢলের পানি। এহন লোকজন মিল্ল্যা বালু থাইক্কা যতটা পারি ধান কুড়াইতাছি। আমরা তো আর এই দেশের মানুষ না। নইলে প্রতিবছরই এই জায়গায় ভাঙ্গার পরেও ঠিক কইরা বাঁধ দেওয়া হয় না কেন? আমরা খাওয়ুন চাই না, পাইলে বান্ধের ব্যবস্থা কইরা দেন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার খালভাঙ্গা গ্রামের কৃষক আল-আমিন।

এ কষ্ট শুধু আল আমিনের নয়, টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে উপজেলার প্রায় ৩০টি গ্রাম। আজ শনিবার সকাল থেকে ঢলের পানি নামতে শুরু করলেও দুর্ভোগ পোহাচ্ছে এসব এলাকার কয়েক হাজার মানুষ।

উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও ভুক্তভোগী এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, পৌর শহরের উত্তর গড়কান্দা এলাকায় ৩০০ মিটার শহররক্ষা বাঁধ গত বছর পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পৌরসভার উদ্যোগে গত সপ্তাহে উত্তর গড়কান্দা এলাকায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ৩০ মিটার বাঁধ বালুর বস্তা ফেলে ঠেকিয়ে রাখা হয়। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলায় মুষলধারে বৃষ্টি হয়। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পানির তোড়ে উত্তর গড়কান্দা এলাকায় দুটি স্থানে ২০০ মিটার ও নিচপাড়া এলাকায় দুটি স্থানে ৬০ মিটার নদীর বাঁধ ভেঙে যায়। এই ভাঙা অংশ দিয়ে প্রবল বেগে পানি প্রবেশ করে উত্তর গড়কান্দা, গড়কান্দা, শিমুলতলা, নিচপাড়া গ্রামের প্রায় ৭০০ পরিবারের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে।

এ ছাড়া উপজেলার বাঘবেড় ইউনিয়নের দুটি গ্রাম, কলসপাড় ইউনিয়নের ৫টি, যোগানিয়া ইউনিয়নের ৫টি, মরিচপুরান ইউনিয়নের ৫টি, নয়াবিল ইউনিয়নের ৩টি, নালিতাবাড়ী ইউনিয়নের ৫টিসহ মোট ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আজ সকাল থেকে এই ঢলের পানি নামতে শুরু করলেও দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এসব গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। 

আজ সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, পৌর শহরের বাগানবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছে উত্তর গড়কান্দা এলাকার প্রায় ১০টি পরিবার। এতে বন্ধ রয়েছে বিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম। এ ছাড়াও উপজেলার খালভাঙ্গা, নিচপাড়া, বাঘবেড়, যোগানিয়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে ঢলের পানি নেমে গেলেও মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগের চিত্র৷ বিভিম্ন স্থানে যাতায়াতের রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় চলাচলে ভোগান্তি পোহাচ্ছে সাধারণ মানুষ।

এ সময় এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, গত বছরের পাহাড়ি ঢলে নদী ভাঙন এলাকা মেরামত না করায় এবার ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ভোগান্তি যেন কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। এ সমস্যার সমাধানে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী।

বাগানবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া চাতালশ্রমিক মনোয়ারা বেগম (৫০) বলেন, ‘স্বামী মইরা গেছে আট বছর আগে। একমাত্র মাইয়ারে লইয়া একটা ছোট্ট ঘরে থাকতাম। অহন ঢলের পানিতে ঘর ভাইঙা গেছে। মাইয়াডারে লইয়া অহন স্কুল ঘরের বারান্দায় আছি। কেমনে রানমু? সরকার যদি বান্দের ব্যবস্থা কইরা দিত, তাইলে আমরা খাইয়াপইরা বাঁচবার পাইতাম।’

নিচপাড়া গ্রামের দিনমজুর সমেজউদ্দীন বলেন, ‘১৫ শতাংশ জমির উপর আমার বাড়ি আছিল। প্রতিবছর ভাঙতে ভাঙতে অহন আমার বাড়ি নদীর মধ্যে। ছয় সদস্যের পরিবার লইয়া শ্বশুরের বাড়িতে একটা ছোট্ট ঘরে থাকতাম। অই ঘরটাও এইবার ঢলের পানিতে ভাইঙা গেছে।’

বৃষ্টি ও উজানের পানিতে ভেসে গেছে শেরপুরের ৩০ গ্রাম। ছবি: আজকের পত্রিকাবাঘবেড় গ্রামের সাহেদা বানু বলেন, ‘কাম কইরা ভাত খাই। পানির লাইগ্গা তো কামেও যাইবার পাইতাছি না। সকালে দেড় কেজি চাল কিন্না আনছি। কিন্তু সব জায়গায় তো পানি। চাল কিন্না আইনাও রানবার উপায় দেখতাছি না।’

এদিকে আজ দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোস্তাফিজুর রহমান, ‘উপজেলা চেয়ারম্যান মোকছেদুর রহমান লেবু, ভাইস চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম, পৌর মেয়র আবু বক্কর সিদ্দিকসহ কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার। এ ছাড়া গত শুক্রবার রাতেই উপজেলা প্রশাসন ও পৌরসভার পক্ষ থেকে পানিবন্দী প্রায় ৭০০ পরিবারের মাঝে শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।’

নালিতাবাড়ী পৌরসভার মেয়র আবু বক্কর সিদ্দিক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘উত্তর গড়কান্দা এলাকায় বাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত কিছু অংশ বাঁধ মেরামত করা হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ পাহাড়ি ঢলের পানিতে শহরের চারটি স্থানে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। বাড়িঘরে পানি থাকায় সেসব এলাকায় আমরা গিয়েছি। রাতেই বাড়ি বাড়ি শুকনা খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা করতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’

জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার বলেন, ‘ভাঙন এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছি। পানিবন্দী পরিবারগুলোর মাঝে শুকনা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। দ্রুত বাঁধ নির্মাণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ফেল করায় বকা খেয়ে বাড়ি ছাড়ে বাংলাদেশি কিশোরী, ভারতে ৩ মাসে ২০০ লোকের ধর্ষণ

খালার সঙ্গে শত্রুতা মুহাম্মদ ইউনূসের, আমি ‘কোল্যাটারাল ড্যামেজ’: টিউলিপ সিদ্দিক

‘কাল দেখা হইবে, ভালো থাকিস’—ছেলেকে বলেছিলেন গণপিটুনিতে নিহত প্রদীপ

দেখো, ওর থেকে আরও ৫ লাখ নিতে পারো কি না—মেসেঞ্জার কলে এনসিপি নেতা নিজাম

রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী আটক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত