Ajker Patrika

মামলা নেই, জিডির ভিত্তিতেই ৩ বছর কারাবন্দী প্রতিবন্ধী

আবদুল্লাহ আল মাসুদ, ঝিনাইদহ
আপডেট : ০৩ আগস্ট ২০২২, ২০: ৫২
মামলা নেই, জিডির ভিত্তিতেই ৩ বছর কারাবন্দী প্রতিবন্ধী

মামলা নেই, তাই আদালতের সাজাও নেই। শুধু জিডির ওপর ভিত্তি করে প্রায় তিন বছর ঝিনাইদহ জেলখানায় বন্দী রয়েছেন একজন বুদ্ধি ও বাকপ্রতিবন্ধী। এত দিনেও তাঁর নাম-ঠিকানা শনাক্ত হয়নি। গত রোববার জেলখানায় বন্দী ওই প্রতিবন্ধীর পরিচয় শনাক্তের উদ্যোগ নেন ঝিনাইদহের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম বৈজয়ন্ত বিশ্বাস। 

বিষয়টি নিয়ে আজ বুধবার বিকেলে ঝিনাইদহের জেল সুপার আনোয়ার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গতকাল (মঙ্গলবার) আদালতের একটি আদেশ হাতে পেয়েছি। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী কাগজপত্র জেলা নির্বাচন অফিসে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। তবে অজ্ঞাত ব্যক্তি জেলখানায় সুস্থ আছেন। কথা বলতে পারেন না। তবে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।’ 

জেল সুপার জানান, আটক ব্যক্তির পরিচয় শনাক্তে ২০২০ সালে আদালত একটি নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তবে তখন তাঁর পরিচয় পাওয়া যায়নি। 

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ সদর থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ইউনুস আলী গাজী ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নগরবাথান এলাকা থেকে অজ্ঞাত ওই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে স্থানীয় লোকজনের হেফাজত থেকে উদ্ধার করে সেফ কাস্টডির জন্য আদালতে পাঠান। পরের বছর ২০২০ সালের ৩১ আগস্ট আদালতের নির্দেশে ওই ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য আঙুলের ছাপ নিতে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগে চিঠি পাঠানো হয়। একই বছরের ১৯ নভেম্বর জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগ থেকে আদালতকে অবগত করা হয় যে সাধারণ কাগজে সংগৃহীত আঙুলের ছাপ দিয়ে সঠিক পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব নয়। তবে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে বিশেষ ফরম্যাটে আঙুলের ছাপ নিয়ে সঠিকভাবে পরীক্ষা করা সম্ভব। 

এ নিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. ইয়াছিন আলী নাম-ঠিকানা যাচাই-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, অজ্ঞাত ব্যক্তির চেহারা ও অঙ্গভঙ্গি অনেকটা রোহিঙ্গাদের মতো। ঝিনাইদহের জেল সুপার আদালতকে অবহিত করেন যে অজ্ঞাত ব্যক্তি কারাগারে আসার পর থেকে তাঁর নাম-ঠিকানা বলতে পারেন না। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা নেই। শুধু সাধারণ ডায়েরির ওপর ভিত্তি করে কারাগারে বন্দী রয়েছেন। 

গত রোববার (৩১ জুলাই) ঝিনাইদহের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম বৈজয়ন্ত বিশ্বাসের দেওয়া আদেশে বলা হয়, নাম-ঠিকানাবিহীন অজ্ঞাত পুরুষটি একজন বুদ্ধি ও বাকপ্রতিবন্ধী। বিনা বিচারে কাউকে জেলহাজতে আটক রাখা ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার-সংক্রান্ত নীতিমালার পরিপন্থী। অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে অবিলম্বে স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দিতে তাঁর নাম-ঠিকানা উদ্ঘাটন করা প্রয়োজন। এ কারণে অজ্ঞাত ব্যক্তিকে ঝিনাইদহ নির্বাচন অফিসে নিয়ে যথাযথ ফরম্যাটে আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করে ম্যাচিংপূর্বক আদেশ পাওয়ার তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হলো। 

সেই সঙ্গে টেকনাফ, উখিয়া ও ভাসানচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের আদেশ পাওয়ার তারিখ থেকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে স্ব-স্ব এখতিয়ারাধীন অঞ্চলে অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ওই ব্যক্তির ছবি যাচাই-বাছাই করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে টেকনাফ, উখিয়া ও ভাসানচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সহযোগিতা করতে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান বলেন, ‘একজন ব্যক্তি বিনা অপরাধে কোনোভাবেই জেলখানায় বন্দী থাকতে পারে না। এটা অমানবিক।’ তিনি বলেন, ‘বিজ্ঞ আদালত যে নির্দেশনা দিয়েছেন, তা সঠিক।’ 

ঝিনাইদহ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবদুস ছালেক বলেন, ‘আদালতের কোনো নির্দেশনা এখনো পাইনি। নির্দেশনা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ 

এ বিষয়ে ঝিনাইদহের মানবাধিকারকর্মী ও সিনিয়র সাংবাদিক আমিনুর রহমান টুকু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিনা বিচারে কাউকে জেলহাজতে আটক রাখা ন্যায়বিচারপরিপন্থী। আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় কারাগারে আটক ব্যক্তিকে দ্রুত মুক্তির ব্যবস্থা রাষ্ট্রকেই করতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাকা দিয়ে নারীর চাবুকের ঘা খাচ্ছিলেন পুরুষ, দুজন গ্রেপ্তার

মানবিক করিডর না ভূরাজনৈতিক কৌশল? সীমান্তে যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতায় উদ্বেগ

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে স্টারলিংকের প্রস্তাবিত কার্যক্রমের বিস্তারিত চায় ভারত

নির্দেশনা মানেননি পাইলট, মদিনা–ঢাকা ফ্লাইটকে নামতে হলো সিলেটে

ভারত–বাংলাদেশ বাণিজ্য বিধিনিষেধের মূল্য গুনছেন ব্যবসায়ীরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত