Ajker Patrika

বাগেরহাটে ১৭ বছর পর গ্রামে ফিরে মাশরুম চাষ, স্বপ্ন কোটিপতি হওয়ার

বাগেরহাট প্রতিনিধি
ঘরের বারান্দায় সাজানো মাশরুমের ব্যাগ। প্রতিদিন চাষ করছেন সবুজ শিকদার। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘরের বারান্দায় সাজানো মাশরুমের ব্যাগ। প্রতিদিন চাষ করছেন সবুজ শিকদার। ছবি: আজকের পত্রিকা

মাত্র ১০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ঘরের বারান্দায় মাশরুম চাষ শুরু করেছিলেন সবুজ শিকদার (৩৫)। এখন মাসে আয় করছেন গড়ে ২০ হাজার টাকা। একদিন এই চাষ থেকেই কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তিনি।

সবুজ শিকদার বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার বাধাল ইউনিয়নের পানবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা। বাবা ইছহাক আলী শিকদারের সংসারে অভাব-অনটন মেটাতে ১৭ বছর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরেছেন জীবিকার সন্ধানে। কয়েক বছর আগে পারিবারিক টানাপোড়েন আর আর্থিক অনিশ্চয়তায় ফিরে আসেন নিজ গ্রামে। নানা পরিকল্পনা থাকলেও কিছুতেই কাজ শুরু করতে পারছিলেন না।

শেষমেশ ঢাকার সাভারে ‘মাশরুম ইনস্টিটিউটে’ ১২ দিনের প্রশিক্ষণ নেন। এরপর চলতি বছরের শুরুতে নিজের ঘরের বারান্দার ১২ হাত জায়গায় শুরু করেন মাশরুম চাষ। এখন তিনি একসঙ্গে ৬২২টি ব্যাগে চাষ করছেন। প্রতিদিন ২ থেকে ৩ কেজি মাশরুম উৎপাদন হচ্ছে। স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি ৪০০ টাকায় বিক্রি করছেন। মাশরুম শুকিয়ে গুঁড়া করে বিক্রি করেন প্রতি কেজি ৩ হাজার টাকায়।

অনলাইনে দারাজ, পাঠাওসহ কুরিয়ার সার্ভিসে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করছেন মাশরুম। তিনি আরও জানান, ৫০০ গ্রাম, ১ কেজি ও ২ কেজি ওজনের বিভিন্ন প্যাকেটও বিক্রি করছেন ২৫, ৫০ ও ১০০ টাকায়।

সবুজ শিকদার বলেন, ‘১০ হাজার টাকা দিয়ে শুরু করেছিলাম। এখন প্রতি মাসে গড়ে ১৫-২০ হাজার টাকা আয় হচ্ছে। সরকারি সহায়তা পেলে আরও বড় পরিসরে চাষ করতে চাই। একদিন এই মাশরুম চাষ থেকেই আয় করব কোটি টাকা।’

স্থানীয় কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সবুজ ভাই আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। আগে কেউ ভাবেনি ঘরের বারান্দায় বসেও এমন আয় করা যায়।’

স্থানীয় নারী উদ্যোক্তা শিরিন বেগম বলেন, ‘সরকারি প্রশিক্ষণ ও সহায়তা পেলে অনেকেই সবুজের মতো এগিয়ে আসবে।’

কচুয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মইবুর রহমান লিখন বলেন, ‘মাশরুম চাষ লাভজনক একটি উদ্যোগ। সবুজ যা করছে, তা নিঃসন্দেহে অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণা। আমরা কৃষি অফিস থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি।’

মাশরুম চাষ পদ্ধতি (সংক্ষিপ্ত পরিচিতি):

‘মাশরুম’ ব্যাঙের ছাতার মতো একধরনের ছত্রাকজাতীয় গাছ। প্রাকৃতিক পরিবেশে জন্ম নেওয়া কোনো কোনো মাশরুম বিষাক্ত হয় এবং সেগুলো খাওয়া যায় না। প্রকৃতিতে মাশরুমের কয়েক হাজার জাত রয়েছে, যার মধ্যে ৮-১০টি জাতের বাণিজ্যিক চাষাবাদ হয়ে থাকে। বাংলাদেশের তাপমাত্রা ও আপেক্ষিক আর্দ্রতা মাশরুম চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। বাংলাদেশে বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে ঝিনুক মাশরুমের চাষই বেশি প্রচলিত।

চাষিদের জন্য স্পন ভর্তি সাবস্ট্রেটসহ উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত পিপি ব্যাগ সরবরাহ করা হয়। সরবরাহকৃত এসব ব্যাগ থেকে চাষিরা ফসল উৎপাদন করে থাকেন। ৬৪ শতাংশ কাঠের গুঁড়া, ৩২ শতাংশ গমের ভুসি ও ৪ শতাংশ ধানের তুষ দিয়ে ৫০০ গ্রাম ওজনের মিশ্রণ তৈরি করতে হয়। এই মিশ্রণের সঙ্গে সামান্য পরিমাণ চুন এবং পানি মিশানো হয়। প্যাকেটগুলো বাঁশের বেড়া ও পাকা মেঝের ঘরে কাঠ ও বাঁশের তাকে সারি করে সাজিয়ে রাখতে হবে। অতঃপর ব্যাগের দুপাশে অর্ধচন্দ্রাকৃতির করে কেটে কাটা অংশটির খানিকটা চেছে ফেলে দিতে হবে। ব্যাগটি পরিষ্কার পানিতে ২১-৩০ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে। ব্যাগটি পরিষ্কার ফ্লোর বা তারের জালির ওপর আধা ঘণ্টা সময় উল্টে রাখতে হবে যাতে ভেতরের বাড়তি পানি ঝড়ে যায়। ব্যাগগুলোতে নিয়মিত পানি স্প্রে করতে হবে। দুই-তিন দিন পর ব্যাগের কাটা অংশ দিয়ে সাদা পিনসদৃশ অংশ দেখা যায়। আরও দুই-তিন দিন পর মাশরুম বড় হলে সংগ্রহ করতে হবে। একটি মাশরুমের ব্যাগ থেকে তিন-চারবার ফসল তোলা যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ: বরখাস্তের দণ্ড বদলে বাধ্যতামূলক অবসর

ভারত যে পারমাণবিক বোমা ফেলেনি, পাকিস্তানের বুঝতে সময় লেগেছে ৩০-৪৫ সেকেন্ড

‘ভিআইপি রুম না পেয়ে’ হোটেল বারে ভাঙচুর, যুবদলের পদ হারালেন মনির হোসেন

বিএনপি নেতার ছেলের নেতৃত্বে হামলার ৩৫ দিন পর মৃত্যু, লাশ নিয়ে বিক্ষোভ

ফরিদপুরে এ কে আজাদের বাড়ির সামনে বিএনপির মিছিল

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত