Ajker Patrika

৪০০ টকার জন্য স্কুল ছেড়েছি, অপারেশনের ছয় লাখ টাকা পাব কোথায়?

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
আপডেট : ২৯ জানুয়ারি ২০২২, ২২: ৪৭
৪০০ টকার জন্য স্কুল ছেড়েছি, অপারেশনের ছয় লাখ টাকা পাব কোথায়?

পরিবারের বড় মেয়ে তাছমিনার বয়স এখন ১২। জন্মের পর স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠছিল। দুই বছর হলে তার মুখের বাম পাশ ফোলা দেখা যায়। দিন যত যায় ফোলা বাড়তে থাকে। দিনমজুর বাবা মেয়েকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। ডাক্তার জানায়, মেয়ের মুখে টিউমার হয়েছে। সঠিক চিকিৎসা না করালে ক্ষতি হবে। ডাক্তারের কথায় সহায় সম্বলহীন দরিদ্র বাবার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। ভিটে মাটি ছাড়া নিজেদের চাষ যোগ্য কোনো জমি নেই। তারপরও পিতা হিসেবে সন্তানের চিকিৎসার জন্য টাকা জোগাড় করতে থাকেন। এরই মধ্যে একদিন বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান বাবা। সংসারে নেমে আসে দুর্যোগের ঘনঘটা।

এক দিকে স্বামীর মৃত্যু অন্য দিকে সংসারের খরচ আর মেয়ের চিকিৎসা। সব মিলিয়ে চরম বিপাকে পড়েন মা রাবিয়া খাতুন। সংসার চালাতেই নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা, মেয়ের চিকিৎসা হবে কীভাবে? চিকিৎসা না করানোই দিনে দিনে মেয়ের মুখের টিউমার বড় হতে থাকে। এখন ডাক্তার বলছে, এভাবে চলতে থাকলে দ্রুতই ক্যানসারে রূপ নেবে। 

ঘটনাটি ঝিনাইদহ কোটচাঁদপুর উপজেলার জালালপুর গ্রামের মালোখালীপাড়ার। তাছমিনার বাবা মৃত রুহুজ্জেল হোসেন। 

শিশুটির মা রাবিয়া খাতুন জানান, তাঁদের ভিটে বাড়ি ছাড়া মাঠে চাষ করার কোনো জমি নেই। তাঁর স্বামী পরের জমিতে কাজ করত। যে টাকা উপার্জন করতেন তা দিয়ে তাদের স্বামী-স্ত্রী আর দুই মেয়ে তাছমিনা ও তাহমিনাকে নিয়ে কোনোভাবে চলতো সংসার। কিন্তু বড় মেয়ের জন্মের দুই বছর পর তাঁর মুখে টিউমার ধরা পড়ে। ডাক্তার বলেছিল, ভালো চিকিৎসা করাতে না পারলে এ থেকে বড় কিছু হতে পারে। 

রাবিয়া খাতুন বলেন, আমরা মেয়েকে ঢাকায় নিয়ে ভালো ডাক্তার দেখানোর জন্য চেষ্টা করি কিন্তু টাকা জোগাড় করতে পারি না। আমার স্বামী অতিরিক্ত কাজ করা শুরু করে মেয়ের চিকিৎসা করানোর জন্য। কিন্তু তিনি গত বছরের মার্চ মাসে দুপুরে খাবার খেয়ে বাড়ি থেকে বাজারে যায়। পরে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। এরপর আমিও অসুস্থ হয়ে পড়ি। এরপর থেকে কোনো কাজ করতে পারি না। এলাকাবাসী সাহায্য করে তাই দিয়ে চলে তিন বেলার খাবার। এ দিকে মেয়ের অবস্থা দিন দিন আরও খারাপ হয়ে যাচ্ছে। 

রাবিয়া খাতুন আরও বলেন, আমাদের এমন অবস্থা দেখে গ্রামের ইকরা ছাত্র কল্যাণ সংঘ নামের একটি সংগঠন মেয়েকে নিয়ে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানকার ডা. শফিক-উর রহমান মাথা সিটিস্ক্যানসহ বিভিন্ন রিপোর্ট দেখে বলেন, এটি ক্যানসারে রূপ নিচ্ছে। দ্রুত ঢাকাতে নিয়ে গিয়ে অপারেশন করলে সম্পূর্ণরূপে সুস্থ হয়ে যাবে। এতে প্রায় ৬ লাখ টাকার প্রয়োজন হবে। বিভিন্ন মাধ্যমে মাত্র এক লাখ টাকা জোগাড় করতে পেরেছি। বাকি টাকা কীভাবে আসবে জানি না। এখন কী করব? কোথায় যাব?  এ দুশ্চিন্তায় চোখের পানি ফেলে দিন কাটছে। 

শিশু তাছমিনা বলে, বাবাকে অনেক কষ্ট করতে দেখেছি। বাবা মারা যাওয়ার পর আমাদের কষ্ট আরও বেড়ে যায়। ভেবেছিলাম লেখা-পড়া শিখে একটা চাকরি করে মাকে একটু সুখে রাখব। কিন্তু এ বছর ৭ম শ্রেণিতে ওঠার পর স্কুলের ৪ শত টাকা দিতে না পেরে আর স্কুলে যাওয়া হয়নি। ছোট বোন তৃতীয় শ্রেণিতে উঠেছে। তারও স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। অপারেশনের ছয় লাখ টাকা পাব কোথায়?

 স্থানীয় ইউপি মেম্বার জীবন কুমার হালদার বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই শিশু তাছমিনা অসুস্থ। ডাক্তার বলেছে, এটি ক্যানসারে রূপ নিচ্ছে। দ্রুত অপারেশন করলেই সম্পূর্ণরূপে সুস্থ হয়ে যাবে। তার বাবা নেই, আর মায়ের সামর্থ্য নেই এত টাকা দিয়ে চিকিৎসা করাবে। অসুস্থ মেয়েকে সঠিক চিকিৎসা করানোর জন্য মানুষের সহযোগিতা খুব প্রয়োজন। সবাই যদি একটু এগিয়ে আসে তা হলে অপারেশন করা সম্ভব হবে। 

তিনি আরও বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে পরিবারটির কোনো সহযোগিতা এখনো পর্যন্ত করা হয়নি। তবে চেয়ারম্যান সাহেবের সঙ্গে কথা বলে কিছু করা যায় কি না দেখব। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত