Ajker Patrika

ঝিনাইদহের সরকারি শিশু হাসপাতাল ধুঁকছে নানা সংকটে

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, ঝিনাইদহ 
বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সৌজন্যে পাওয়া রোগীর শয্যা। গত মঙ্গলবার ঝিনাইদহ সরকারি শিশু হাসপাতালে। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সৌজন্যে পাওয়া রোগীর শয্যা। গত মঙ্গলবার ঝিনাইদহ সরকারি শিশু হাসপাতালে। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঝিনাইদহ সরকারি শিশু হাসপাতালের শয্যার সংখ্যা ২৫টি হলেও প্রতিদিন রোগী থাকে ৬০-৭০ জন। কিন্তু তাদের সেবাদান চলছে নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে। নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসকসহ অন্যান্য জনবল। অক্সিজেন ও ওষুধে সরকারি বরাদ্দ অপ্রতুল। এ অবস্থায় হাসপাতাল চত্বরে আবাদ করা কলা বিক্রির টাকা ও অনুদানে চলে সেবা। সেখান থেকেই দেওয়া হয় অস্থায়ী কর্মচারীদের বেতন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসকের ৫ পদের বিপরীতে ৩ জন এবং নার্সের ২১ পদের বিপরীতে ১৭ জন রয়েছেন। তবে ফার্মাসিস্ট, দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, প্রধান সহকারী, অফিস সহকারী ও স্টোরকিপারের পদ খালি। এ ছাড়া অফিস সহায়ক, ওয়ার্ড বয়, আয়া, মালি, নিরাপত্তাপ্রহরী ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কোনো পদ না থাকায় সেখানে অস্থায়ী নিয়োগকৃতদের বেতন হয় অনুদানের টাকায়। কয়েকজন ব্যবসায়ী, চিকিৎসক ও তাঁদের বন্ধুর সহায়তায় শয্যা ও যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে। ঝিনাইদহ পৌরসভা এবং স্থানীয় জাহেদি ফাউন্ডেশন নিয়মিত সহায়তা করে। এ ছাড়া ১৫ হৃদয়বান ব্যক্তি কিছু সহায়তা দেন।

২০০৫ সালে জেলা শহরের টার্মিনাল এলাকায় হাসপাতালটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তবে রাজনৈতিক বেড়াজালে বন্ধ থাকার পর এটি ২০২১ সালে কার্যক্রম শুরু করে। হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটি আশপাশের মানুষের কাছে সুনাম অর্জন করেছে। মানুষ এখন এখানকার সেবায় আস্থা রাখে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রবেশ ফটক দিয়ে ভেতরে গেলেই চারপাশে ফুলের বাগান। সামনে লাল ইটের দোতলা ভবন। সেখানকার বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেল, শয্যাগুলোর গায়ে লেখা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সেগুলো দান করেছে। কালীগঞ্জ উপজেলা থেকে আসা শাহানাজ নামের এক নারী বলেন, ‘আমার ১৬ মাসের শিশুর শ্বাসকষ্ট হলে প্রথমে উপজেলা হাসপাতালে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে এখানে আসার পরামর্শ দেওয়া হয়। এখানে এসে সন্তান বর্তমানে অনেকটা ভালো।’

হাসপাতালটি দেখভাল করছেন কনসালট্যান্ট আলী হাসান ফরিদ। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসা নিতে আসা শিশুদের জন্য বছরজুড়ে কৃত্রিম অক্সিজেনের দরকার হয়। এতে বছরে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা লাগে। সরকারের কাছ থেকে সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা পাওয়া যায়। এ জন্য হাসপাতালের পতিত তিন বিঘার মতো জমিতে কলা চাষ করা হয়। কলা বিক্রি করে গত বছর ৮০ হাজার টাকার অক্সিজেন কেনা হয়েছে। এ বছরও তা-ই করতে হবে।’

আলী হাসান জানান, হাসপাতালে রাতের নিরাপত্তার জন্য লাইট ও অন্যান্য জিনিস কলা বিক্রির টাকায় কিনতে হয়। এ ছাড়া ওষুধ কেনা এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিতে হয় অনুদানের টাকায়। জনবল ও অন্যান্য সহযোগিতার জন্য সিভিল সার্জন এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখায় অনেকবার আবেদন জানানো হলেও কাজ হয়নি।

এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন হাদী জিয়া উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শিশু হাসপাতালে সরকারিভাবে যে পরিমাণ অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়, তাতে প্রয়োজন পূরণ হয় না। জনবলের যে সংকট, সে বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে প্রতি মাসে আমরা চিঠি পাঠাচ্ছি। বড় কোনো নিয়োগ না হলে হয়তো দ্রুত সংকট সমাধান করা যাবে না। আগের সিভিল সার্জন চিঠি পাঠিয়েছিলেন; কিন্তু তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর পদ সৃজনে কোনো অগ্রগতি হয়নি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত