Ajker Patrika

ভিসিবিহীন কুয়েট চার মাস ধরে অচল

খুলনা প্রতিনিধি
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

টানা ১৩২ দিন ধরে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট)। নেই উপাচার্য, নেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কেউ। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া বন্ধ, শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-বোনাস অনিশ্চিত, থমকে আছে উন্নয়ন প্রকল্পও। এ ছাড়া অর্থ ছাড় না হওয়ায় উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ ফেরত যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সব মিলিয়ে স্বনামধন্য এই বিশ্ববিদ্যালয় কার্যত অচল অবস্থায় পৌঁছেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভর্তি বিষয় নিয়ে ছাত্রদল ও সাধারণ ছাত্রদের মধ্যে মারামারিতে কেন্দ্র করে পাবলিক এই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। পরবর্তী সময় শিক্ষার্থীদের এক দফা আন্দোলনের মুখে ২৫ এপ্রিল উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরিফুল আলমকে অব্যাহতি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক ড. মো. হযরত আলীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পাল্টা কর্মসূচি শুরু করেন। শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার ঘটনার বিচার চেয়ে তাঁরা ক্লাস বর্জন ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে সহযোগিতা করা থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দেন।

শিক্ষকদের অনাস্থা ও আন্দোলনের মুখে ১৯ মে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হযরত আলী দাপ্তরিক কাজের কথা বলে ঢাকার উদ্দেশে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। এর দুই দিন পর ২২ মে মোবাইল ফোনে পাঠানো বার্তায় পদত্যাগের কথা জানান। সেই থেকে অভিভাবকহীন কুয়েট।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ছয় হাজার শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের শিক্ষার্থী ওবায়দুল্লাহ বলেন, ‘এত বড় একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে এত দিন ধরে ক্লাস বন্ধ, এটা কল্পনাতীত। আমরা চরম হতাশা আর উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছি।’

এক অভিভাবক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘অনেক স্বপ্ন নিয়ে ছেলেকে কুয়েটে ভর্তি করিয়েছিলাম। এখন সেই স্বপ্ন যেন ধূলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে।’ অন্য একজন অভিভাবক হামিদুল হক চৌধুরী বাবলা বলেন, ‘মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে হলেও এখনই শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে।’

বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার আব্দুর রহমান বলেন, ‘ভিসি নিয়োগের লক্ষ্যে গঠিত সার্চ কমিটির বৈঠক হয়েছে বুধবার ঢাকায়। তবে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা এখনো জানা যায়নি।’ তিনি বলেন, ‘মে ও জুন মাসের বেতন না পেয়ে আমরা খুব খারাপ সময় পার করছি। ঈদেও কোনো বোনাস পাইনি। প্রায় ৬০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প ঝুঁকিতে পড়েছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী এ বি এম মামুনুর রশিদ বলেন, ‘ঠিকাদারেরা বিল না পেয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। রাজস্ব খাতের অব্যয়িত অর্থ ব্যয় করা না গেলে তা ফেরত যাবে। এতে বিশ্ববিদ্যালয় বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।’

এমন সংকটকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিও আগের অবস্থানে অটল। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান ক্লাস শুরু করার অনুরোধ জানালেও শিক্ষক সমিতির সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়নি। সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. ফারুক হোসেন বলেন, ‘ভাইস চ্যান্সেলর ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়। তাই ক্লাস আপাতত শুরু হচ্ছে না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগ জানিয়েছেন খুলনার নাগরিক নেতারাও। খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, ‘সরকার, রাজনৈতিক দল, শিক্ষক ও কিছু শিক্ষার্থীর উদাসীনতায় এই সংকট তৈরি হয়েছে। এর দায় সবার।’

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ-জামান বলেন, ‘মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে এর বিরূপ প্রভাব অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়বে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মুরাদনগরে বাড়ি ঘেরাও করে মা-ছেলেসহ ৩ জনকে পিটিয়ে হত্যা

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ১০ বছর মেয়াদি প্রতিরক্ষা চুক্তিতে যাচ্ছে ভারত: পেন্টাগন

যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার নারীরা সব ক্ষেত্রে সরাসরি মামলা করতে পারবেন না

চাচাকে বিয়ে করতে না পেরে ৪৫ দিনের মাথায় স্বামীকে খুন করলেন নববধূ

ফরিদগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত