Ajker Patrika

সাপের ছোবলে তিনজনের মৃত্যু, ওঝার কাছে সময় নষ্টকে দায়ী চিকিৎসকের

দেবাশীষ দত্ত, কুষ্টিয়া 
ছবি: কাঠমান্ডু পোস্ট
ছবি: কাঠমান্ডু পোস্ট

কুষ্টিয়ায় দুই সপ্তাহের ব্যবধানে সাপের ছোবলে নারীসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তিনজনই চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৫০ শয্যার কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে মারা যান। তাঁদের মধ্যে একজন বিষাক্ত রাসেলস ভাইপার এবং বাকি দুজনকে গোখরো সাপ ছোবল দেয়। তাঁদের বাড়ি দৌলতপুর, কুমারখালী ও মিরপুর উপজেলায়। চিকিৎসক ও নিহতদের পরিবার সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রয়োজনীয় অ্যান্টিভেনম মজুত রয়েছে। চিকিৎসক বলছেন, ওঝার কাছে সময় নষ্ট করে হাসপাতালে আসতে দেরি করার কারণেই মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। তবে সময়ের সঙ্গে জীবন বাঁচাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে অ্যান্টিভেনম নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন রোগীর স্বজনেরা। এদিকে সাপের ছোবলে মৃত্যুর ঘটনায় জেলাজুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।

সর্বশেষ আজ শনিবার জেলার মিরপুর উপজেলার গাদা থেকে খড় নামাতে গিয়ে সাপের ছোবলে জহিনা বেগম (৫৫) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। ভারে পোড়াদহ ইউনিয়নের তেঘড়িয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। জহিনা বেগম একই গ্রামের আব্দুল মালিথার স্ত্রী।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ভোরে ধান সেদ্ধ করার জন্য বাড়ির আঙিনায় রাখা গাদা থেকে খড় নামাতে যান জহিনা। এ সময় তার ডান হাতে গোখরো সাপ ছোবল দেয়। তাৎক্ষণিক তিনি বাড়ির সদস্যদের বিষয়টি জানান। এ সময় পরিবারের লোকজন সাপটিকে মেরে ফেলে। জহিনা অসুস্থ হয়ে পড়লে বাড়ির লোকজন তাঁকে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল ৮টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।

এর আগে ২৮ মে সকাল ১০টার দিকে নিজ কলাবাগানে পরিচর্যার কাজ করছিলেন কুমারখালী উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের চরজগন্নাথপুর গ্রামের করিম প্রামাণিকের ছেলে কৃষক কামরুজ্জামান (৫০)। এ সময় ‘রাসেল ভাইপার’ সাপ ছোবল দিলে সাপটি মেরে বস্তায় বন্দী করে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

একইদিন ভোর ৪টার দিকে দৌলতপুর উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের গবরগাড়া গ্রামের মৃত নাহারুল ইসলামের ছেলে কালু (৩৫) বাড়ির পাশের বাগানে আম কুড়ানোর সময় গোখরো সাপ কামড় দেয়। পরে তাঁকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়।

জানতে চাইলে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) হোসেন ইমাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের এই অঞ্চলে রাসেলস ভাইপার এবং গোখরো প্রজাতির সাপে কাটা রোগী বেশি হাসপাতালে আসে। সাপগুলো বিষাক্ত হলেও জীবন বাঁচানোর জন্য প্রয়োজনীয় অ্যান্টিভেনম আমাদের হাসপাতালে মজুত রয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সাপে কাটা রোগীরা ওঝার কাছে গিয়ে সময় নষ্ট করেন। তাঁরা যদি দ্রুত হাসপাতালে চিকিৎসা নেন তাহলে জীবন বাঁচানো সম্ভব। এর জন্য আমাদের আরও সচেতন হতে হবে।

কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন শেখ মোহাম্মদ কামাল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাপে কাটা রোগীদের জন্য অ্যান্টিভেনম মজুত রয়েছে। সময় নষ্ট না করে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তির বিষয়ে আরও সচেতনতা বাড়াতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত