Ajker Patrika

দৌলতপুরে অবকাঠামো উন্নয়নে দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের অভিযান

দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি 
দৌলতপুরে অবকাঠামো উন্নয়নে দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের অভিযান

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় সড়ক নির্মাণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগে এলজিইডি প্রকৌশলীর কার্যালয়ে তদন্ত চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। অভিযানে প্রকল্পের কার্যাদেশ, ডিটেইলস এস্টিমেট বিলের কপিসহ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করেছে দুদক।

গতকাল বুধবার দুর্নীতির খোঁজে দুনীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত কুষ্টিয়া জেলা কার্যালয় অভিযান চালিয়েছে বলে দুদক সূত্রে জানানো হয়। 

দুদকের সমন্বিত কুষ্টিয়া জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নীলকমল পালের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট দল এ অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় সড়কের কাজ যাচাই করেন কুষ্টিয়া সড়ক বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমান।

রাস্তার কাজে কার্পেটিং, খোয়া ও বিটুমিন সরেজমিনে যাচাই করেন প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান। অভিমত ব্যক্ত করে প্রকৌশলী হাবিবুর জানান, খালি চোখে রাস্তায় ব্যবহৃত বিটুমিনের পরিমাণ সঠিক নেই বলে মনে হয়েছে। তবে এটির সঠিক মাত্রা জানার জন্য উপকরণের ম্যাটেরিয়াল টেস্ট করা প্রয়োজন।

জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে গ্রামীণ সড়ক সংস্কার ও সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা মথুরাপুর ইউনিয়নের হোসেনাবাদ বাজার থেকে সদর ইউনিয়নের দাড়েরপাড়া-দৌলতখালী সড়ক মেরামত প্রকল্প নেওয়া হয়। ওই প্রকল্পের কাজের জন্য ২০২১ সালের ২৪ নভেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আজমেরী ট্রেডার্সের মালিক ঠিকাদার এস এম রবিউল আযম টিপুকে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। প্রকল্পের ঠিকাদার এস এম রবিউল আযম টিপু হলেও কাজটি বাস্তবায়ন করেছেন এমআর খান ছোটন।

আরও জানা গেছে, দৌলতপুর উপজেলায় প্রকৌশলী ইফতেখার জোয়ার্দার দায়িত্ব নেওয়ার পর নতুন-পুরোনো অন্তত ৭০ কিলোমিটার রাস্তার কাজ হয়েছে, যার অধিকাংশেরই মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী। কোথাও কোথাও মানহীন পরিস্থিতি দৃশ্যমান হয়েছে।

যোগদানের পরপরই ২০২০ সালের জুন মাসে উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের হোসেনাবাদ সমিল পাড়া থেকে মথুরাপুর গোহাট পর্যন্ত ১৭শ মিটার রাস্তার কাজে নিম্নমানের উপকরণ ও বৃষ্টির পানির মধ্যে কার্পেটিং করায় প্রতিবাদ করেন এলাকাবাসী। পরে ঘটনা ধামাচাপা দিতে হোসেনাবাদ কান্দির পাড়া এলাকার ১৩ জনকে আসামি করে থানায় চাঁদাবাজির মামলা করেন চুয়াডাঙ্গা একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ‘টিটু এন্টার প্রাইজ’। এরপর থেকে নিম্নমানের কোনো কাজে প্রতিবাদ করতে সাহস করবেন না উপজেলাবাসী।  

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় কয়েকজন জানান, দৌলতপুর উপজেলা প্রকৌশলী ইফতেখার জোয়ার্দার দায়িত্ব নেওয়ার পর নতুন-পুরোনো প্রায় ৭০ কিলোমিটার রাস্তার কাজ হয়েছে, যার অধিকাংশেরই মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী। কোথাও কোথাও মানহীন পরিস্থিতি দৃশ্যমানও হয়েছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও উপজেলা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তাঁরা আরও বলেন, সরকারের প্রতিটি উন্নয়নে উপজেলা প্রকৌশলী দুর্নীতিবাজ ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজশ করে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করেন এবং বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করেন। মূলত হাতেগোনা কয়েকজন ঠিকাদার দৌলতপুরের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করছেন।

সড়ক নির্মাণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগএ বিষয়ে কথা বলার জন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স আজমেরী ট্রেডার্সের মালিক ঠিকাদার এস এম রবিউল আযম টিপু এবং দৌলতপুর উপজেলা প্রকৌশলী মো. ইফতেখার উদ্দিন জোয়ার্দ্দারের মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও রিসিভ করেননি তাঁরা।

জনশ্রুতি আছে, কোনো দুর্নীতি বা অনিয়ম প্রসঙ্গে সাংবাদিকেরা তাঁর কাছে জানতে চাইলেই তিনি বিশেষ দু-একজন ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। মূলত তাঁরাও এলজিইডি দৌলতপুরের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য।

দুনীতি দমন কমিশন সমন্বিত কুষ্টিয়া জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নীলকমল পাল জানান, গ্রামীণ সড়ক সংস্কার ও সংরক্ষণ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযান চালানো হয়েছে। রাস্তার উপকরণের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা করে বিস্তারিত প্রতিবেদন কমিশন বরাবর উপস্থাপন করা হবে।

সিন্ডিকেট ভাঙতে পারলে বরাদ্দের পুরো সুফল পাওয়া সম্ভব বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। পাশাপাশি চাইছেন ইফতেখার জোয়ার্দারের আমলে গড়া অবকাঠামোর পুনরায় হিসাব গ্রহণ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত