Ajker Patrika

‘কোলেপিঠে মানুষ করা ভাইয়ের জানাজাতেই যেতে পারছি না’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৫ মার্চ ২০২৪, ২০: ৩৮
‘কোলেপিঠে মানুষ করা ভাইয়ের জানাজাতেই যেতে পারছি না’

‘আগুনে আমার বড় ভাইয়ের শরীর বেশি পুড়েছে। আজকে মারা গেছে। লাশ সিরাজগঞ্জে গ্রামের বাড়ি নিয়ে যাবে। কিন্তু আমি যেতে পারছি না। কারণ, আগুনে পুড়ে আমার স্ত্রী ও দুই ছেলেও ভর্তি। আমাকে কোলেপিঠে করে মানুষ করেছে যে ভাই, তাঁর জানাজাতেই যেতে পারছি না’—কথাগুলো বলছিলেন গাজীপুরে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে প্রাণ হারানো সোলায়মানের ভাই উজ্জ্বল মোল্লা।

আজ শুক্রবার দুপুরে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পঞ্চম তলায় পোস্ট অপারেটিভ ইউনিটের সামনে আজকের পত্রিকার প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় উজ্জ্বল মোল্লার। তিনি বলেন, ‘আমাদের বাড়ি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার হাট বায়রা গ্রামে। গাজীপুরে ভাড়া থাকি। আমার স্ত্রী ও দুই ছেলে বাসায় ছিল। সিলিন্ডার থেকে গ্যাস বের হচ্ছে শুনে ঘর থেকে বাইরে বের হয়। এরপরই অগ্নিদগ্ধ হয়। আমার ভাই ভাঙারির ব্যবসা করতেন। ঘটনার সময় তিনি বাইরে রাস্তায় ছিলেন। আগুনে তাঁর শরীর দগ্ধ হয়।’ 

গত বুধবার গাজীপুরে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ উজ্জ্বল মোল্লার স্ত্রী শিল্পী আক্তার (৪০) ও তাঁর দুই ছেলে নুর নবী নিলয় (৩) ও নীরব (৭) হাসপাতালে ভর্তি আছে। শিল্পী আক্তারের শরীরের ২৫ শতাংশ এবং ছেলে নীরবের ৩২ শতাংশ ও নিলয়ের শরীরের ৮ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। 

সরেজমিন বার্ন ইনস্টিটিউটের পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডের সামনে গিয়ে দেখা যায়, ওয়ার্ডের সামনে স্বজনেরা বসে আছেন। কেউ অপেক্ষা করছেন ভেতর থেকে রোগীর জন্য কী লাগবে জানার জন্য কেউ আবার রোগীর সর্বশেষ অবস্থা পরিবারের অন্য সদস্যদের ফোনে জানাচ্ছেন। 

বার্ন ইনস্টিটিউটের পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন স্ত্রী ও সন্তান, বাইরে অপেক্ষা করছেন স্বামী। ছবি: আজকের পত্রিকাওয়ার্ডের সামনে অপেক্ষা করা আব্দুস সালাম নামে এক ব্যক্তি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার মেয়ের জামাই একটি গার্মেন্টসে চাকরি করে। ঘটনার দিন ছুটি শেষে বাসায় আসছিল। আর তখনই আগুন লেগে পুড়ে যায়। ভর্তি হওয়ার পর থেকে এখন একটু ভালো। তবে কবে সুস্থ হয়ে বাড়ি যাওয়া যাবে তা জানা নেই।’ 

মো. লিমন রানা নামের আরেকজন বলেন, তাঁর দুই ফুপাতো ভাই দগ্ধ হয়েছে। তাঁদের দুজনকেই রক্ত দিতে হচ্ছে। আগের থেকে কিছুটা ভালো। 

হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক সার্জন মৃদুল কান্তি সরকার বলেন, আজ সকালে বার্ন ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে গাজীপুরে অগ্নিদগ্ধ সোলায়মান মোল্লা নামে একজন মারা যান। তাঁর শরীরের ৯৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল।

আজিজুল নামে একজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি ৩০ জন এখনো হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। অগ্নিদগ্ধ ১৮ জন পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে, ৮ জন আইসিইউতে, ৪ জন এইচডিইউতে রয়েছে। তাঁদের মধ্যে অনেকের অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক। 

উল্লেখ্য, গত বুধবার কালিয়াকৈর উপজেলার তেলিরচলা এলাকায় শফিকুল ইসলামের ঘরে সিলিন্ডারের গ্যাস শেষ হয়ে যায়। পাশের একটি দোকান থেকে নিজেই একটি গ্যাস সিলিন্ডার কিনে এনে ঘরের ভেতরে চুলার সঙ্গে সংযোগ দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় সিলিন্ডারের চাবি ভেঙে যায়। এতে গ্যাস ঘরের ভেতরে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। তখন তিনি সিলিন্ডারটি বাইরে ফেলে দেন। 

ফেলে দেওয়ার পরও সিলিন্ডার থেকে গ্যাস ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এ সময় পাশের অন্য একটি ঘরের লাকড়ির চুলার আগুন গ্যাসের সংস্পর্শে এলে দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে। আশপাশের ঘরে ও বাইরে থাকা লোকজনের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এতে নারী, পুরুষ ও শিশু মিলিয়ে ৩৪ জন দগ্ধ হন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত