Ajker Patrika

বঙ্গবন্ধু রবীন্দ্রনাথের প্রতি গভীর অনুরাগী ছিলেন: ঢাবি উপাচার্য

ঢাবি প্রতিনিধি
বঙ্গবন্ধু রবীন্দ্রনাথের প্রতি গভীর অনুরাগী ছিলেন: ঢাবি উপাচার্য

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ‘মানবতার সংকট ও রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে এটির আয়োজন করা হয়। 

আজ রোববার সকাল ১১টায় ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে এটি অনুষ্ঠিত হয়। বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. ভীষ্মদেব চৌধুরী মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। আলোচনা সভা শেষে সংগীত বিভাগ ও নৃত্যকলা বিভাগের যৌথ উদ্যোগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘সংকট অনেক; বিজ্ঞানের সংকট, প্রযুক্তির সংকট, অর্থের সংকট, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সংকট, মানুষের মধ্যে সম্পর্কের সংকটসহ নানা ধরনের সংকট আছে। যে সংকটের কথাই আমরা বলি না কেন, সবগুলোর কেন্দ্রবিন্দু হলো মানুষ। কেন্দ্রীয় সংকট মানবতার সংকট একটি পুঞ্জীভূত, একীভূত অথবা অন্তর্ভুক্তিমূলক সংকট। রবীন্দ্রনাথ মানবতার সংকটের কথা বলেছেন।’ 

ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রবীন্দ্রনাথের গভীর অনুরাগী ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় বাঙালি গণমানুষ সম্মিলিতভাবে একটি কঠিন সংকটকে উদ্রিয়ে যে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম দিতে সক্ষম হয়েছে, এটি বঙ্গবন্ধুর কাছে একটি পরম তৃপ্তির বিষয়। রবীন্দ্রনাথকে ধারণ করেন বলেই বঙ্গবন্ধু তখন বলেছিলেন, কবিগুরু তুমি দেখো, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি বাঙালি কিন্তু মানুষ হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ অন্য প্রসঙ্গে কথাগুলো বললেও সেদিন বঙ্গবন্ধুর এই কথা দ্বারা তার রবীন্দ্রনাথের প্রতি অনুরাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।’ 

ড. মো. আখতারুজ্জামান আরও বলেন, ‘আমরা আজকে এই দুই মহামানবের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। কারণ সকল মহামানবের চিন্তা এক জায়গায় পুঞ্জীভূত হয়। সকল ভালো চিন্তা একটি জায়গায় গিয়ে মিশে। সকল ভালো চিন্তাই শাশ্বত। সৃষ্টিকর্তা যেভাবে শাশ্বত, চিরায়ত; তেমনিভাবে সকল ভালো কাজ, মানবতার উচ্ছ্বাস এগুলোও শাশ্বত।’ 

প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ড. ভীষ্মদেব চৌধুরী বলেন, ‘মানবতার সংকট থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের সহায় রবীন্দ্রনাথ। এ কারণে ১৫০ বছর পরও রবীন্দ্রনাথ প্রাসঙ্গিক। রবীন্দ্রনাথ তার জীবদ্দশায় দুটো বিশ্বযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তার জীবনাবসান ঘটে। মৃত্যুর আগে সমৃদ্ধ, প্রাজ্ঞ, স্থিত রবীন্দ্রনাথ এই ভয়াবহ আগামীকে প্রত্যক্ষ করেছেন বর্তমানের পটে দাঁড়িয়ে। তিনি দেখেছেন পশ্চিমা বিশ্ব কীভাবে বিজ্ঞানকে ব্যক্তিস্বার্থে, গোষ্ঠীস্বার্থে, রাজনৈতিক স্বার্থে, জাতিগত সংকীর্ণতা থেকে ব্যবহার করেছে।’ 

ড. ভীষ্মদেব চৌধুরী বলেন, ‘ইতিহাসের পাতায়, পুরানের রাজ্যে, বিশ্ব সাহিত্যের যে ক্ল্যাসিক সেখানে আমরা যুদ্ধের কথা জেনেছি। ট্রয় নগরীর যুদ্ধ, পাণি পথের যুদ্ধ তারও আগে কারবালার যুদ্ধের কথা আমরা জেনেছি। কিন্তু স্বার্থান্বেষী মানুষ যখন একে অপরের প্রতিপক্ষ হয়ে মানবতার সংকটকে একটা বিপর্যয়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিল তখন রবীন্দ্রনাথ এই যুদ্ধের বিরুদ্ধে একেবারে সরাসরি সোচ্চার হয়ে ওঠেননি। কিন্তু মনজাগতিক যে পরিবর্তন সে পরিবর্তন তাঁর সাহিত্যে তিনি তা রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।’ 

ড. ভীষ্মদেব চৌধুরী আরও বলেন, ‘পরিবেশ বিপর্যয় মানবতার একটি বড় সংকট। এই সংকট আস্তে আস্তে বড় সংকটে পরিণত হচ্ছে। আমাদের রবীন্দ্রনাথের কাছে এই যুগেও আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে। জীব বিজ্ঞান ও পদার্থ বিজ্ঞান এই দুটিকে এক করে যিনি গবেষণায় বিশ্বমান স্থাপন করেছিলেন সেই জগদীশ চন্দ্র বসু ছিলেন রবীন্দ্রনাথের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। জগদীশ চন্দ্র বসুর অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথ বিজ্ঞান চর্চায় তাকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন।’ 

আলোচনা সভায় অন্যান্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী, রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার, বিভিন্ন অনুষদের ডিনবৃন্দ, বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষবৃন্দ, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, শিক্ষকগণ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত