রাত ৮টার পর মার্কেট বন্ধে ক্ষতির শঙ্কা ব্যবসায়ীদের

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য রাত ৮টার পরে সারা দেশে দোকান, শপিং মল, মার্কেট, বিপণিবিতান, কাঁচাবাজার খোলা না রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে। 

সরকারের এমন সিদ্ধান্ত অনেক ব্যবসায়ী স্বাভাবিকভাবে নিলেও কেউ কেউ দ্বিমত প্রকাশ করেছেন। আবার অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন এই নির্দেশনায় জ্বালানি সাশ্রয়ের কথা বলে, শ্রম আইনকে কেন সামনে আনা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শ্রম আইনে যেহেতু এ বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে, তাই নতুন করে কোনো আইন না করে, শ্রম আইন বলবৎ করা হয়েছে। 

সরকারের নতুন সিদ্ধান্তে কোনো আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘সারা পৃথিবীতে জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে। জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য এ বিষয়ে আমাদের বড় আপত্তি নেই।’ তবে তিনি মার্কেট বন্ধ করার সময়সূচি রাত আটটার পরিবর্তে রাত নয়টা করার দাবি জানান। 

রাজধানীতে মধ্যবিত্ত মানুষের কেনাকাটার বড় পরিসর নিউমার্কেট এলাকা। এখানে আলাদা আলাদা পাঁচটি মার্কেটে সাড়ে চার হাজারের বেশি দোকান রয়েছে। এসব দোকানে জড়িয়ে রয়েছে অন্তত ৪০ হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা। রাত ৮টার পর দোকান বন্ধের ঘোষণা নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক বলে মনে করেন নিউ সুপার মার্কেট দক্ষিণ বণিক সমিতির সভাপতি মো. শহীদুল্লাহ শহীদ। তিনি বলেন, ‘কর্মজীবী মানুষের অফিস শেষ হয় বিকেল ৫টার পর। ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে যানজট মাড়িয়ে নিউমার্কেটে আসতে সময় লাগে দুই থেকে তিন ঘণ্টা। ফলে মার্কেটের বেচাকেনা জমে ওঠে রাত ৮ টা-৯টার দিকে। তখন যদি মার্কেট বন্ধ থাকে ব্যবসায়ীদের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।’ জ্বালানির সঙ্গে মার্কেট বন্ধের কোনো সম্পর্ক নেই দাবি করে কোরবানির এই মৌসুমে সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর না করার আহ্বান জানান এই ব্যবসায়ী নেতা। 

মিরপুর ১১ নম্বরের নিউ সোসাইটি মার্কেট কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম গাউস সিদ্দিকী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কোরবানের ঈদের আগে এখন বেচা-বিক্রির সময়। এ সময় যদি রাত ৮টার মধ্যে দোকান বন্ধ হয়ে যায়। তাহলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। করোনার কারণে দুই বছর তেমন ব্যবসা হয়নি। এখন যদি সরকার এমন সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে কোথায় যাবে দোকানদারেরা।’ 

রাত ৮টার পরে মার্কেট বন্ধের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) মো. আহসান কিবরিয়া সিদ্দিকি স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বিশ্বব্যাপী জ্বালানির অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধিজনিত বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের নিমিত্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সানুগ্রহ নির্দেশনা প্রদান করেছেন। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬-এর ১১৪ ধারার বিধান কঠোরভাবে প্রতিপালনপূর্বক সারা দেশে রাত ৮টার পর দোকান, শপিং মল, মার্কেট, বিপণিবিতান, কাঁচাবাজার ইত্যাদি খোলা না রাখার বিষয়টি যথাযথভাবে নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’