Ajker Patrika

নিজে দৃষ্টিহীন হলেও আলো ছড়াচ্ছেন হাফেজ রুমান

হারুনূর রশিদ, রায়পুরা (নরসিংদী)
দৃষ্টিবন্ধী দুই শিক্ষার্থীতে পড়াচ্ছেন অন্ধ হাফেজ মো. রুমান। ছবি: আজকের পত্রিকা
দৃষ্টিবন্ধী দুই শিক্ষার্থীতে পড়াচ্ছেন অন্ধ হাফেজ মো. রুমান। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রবল ইচ্ছে শক্তি আর দৃঢ় মনোবলের কাছে হেরে যায় সব প্রতিবন্ধকতা। আর এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হাফেজ মো. রুমান (৪০)। চোখে আলো না থাকলেও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে বিনা পারিশ্রমিকে ছাত্রদের মধ্যে কোরআনের আলো বিলিয়ে যাচ্ছেন। শতাধিক ছাত্রকে গড়ে তুলেছেন হাফেজ হিসেবে।

মো. রুমান নরসিংদী রায়পুরার মাহমুদাবাদ এলাকার মৃত মুগলগাজীর ছেলে। তাঁর হাতে গড়া মাহমুদাবাদ মগল গাজী ইসলামিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানাটির অবস্থান ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশেই।

জানা যায়, রুমান স্থানীয় দারিদ্র্য কৃষক পরিবারে ১৯৮৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র দেড় বছর বয়সে টাইফয়েড হলে চোখের আলো হারান। তার বাবা মগল গাজী চাইতেন, ছেলে কোরআনের হাফেজ হবেন। প্রথমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী স্কুলে লেখাপড়া শুরু করেন। পরে বাবার ইচ্ছে পূরণে একজনের পরামর্শে ঢাকার একটি মাদ্রাসায় ভর্তি হন রুমান। ব্রেইল পদ্ধতিতে ৩০ পারা কোরআন মুখস্থ করে হাফেজ হন। কম বেতনে বিভিন্ন মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করে শতাধিক ছাত্রকে গড়েছেন হাফেজ। এরই মধ্যে পাঁচ-সাতজন প্রতিবন্ধী হাফেজ হয়ে বিভিন্ন মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করছেন।

২০১৬ সালে ভাইদের সহযোগিতায় বাবার রেখে যাওয়া ১৫ শতাংশ জমিতে মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে এই মাদ্রাসায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, দরিদ্র ও এতিম প্রায় ৫০ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। তাদের মধ্যে ৭ জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। মাদ্রাসাটির প্রধান মুহতামিম রুমান নিজেই। তিনি ছাড়া তিনজন শিক্ষক পড়াচ্ছেন। মাদ্রাসাটিতে দুটো টিনশেড ঘর, অজুখানা গোসলখানা, শৌচাগার, পানির টিউবওয়েলের পাশেই মসজিদ রয়েছে। মাদ্রাসায় খাবার, নাশতা, জামাকাপড় সবই বিনা মূল্যে দেওয়া হয়। যা মানুষের দান ও সহযোগিতায় পরিচালিত হয়।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কয়েকজন ছাত্র বলেন, বড় হুজুরের সহযোগিতার কারণেই আমরা পড়তে পারছি। বড় হুজুরের তুলনা নাই। আমরাও তারই মতো অন্যের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়াতে চাই।

মাদ্রাসাটির কয়েকজন ছাত্র জানান, দৃষ্টিহীনদের সঙ্গে পড়তে পেরে খুবই আনন্দিত তারা। দৃষ্টিহীনরা যখন প্রথমে মাদ্রাসায় পড়তে আসে তখন তাদের কিছুটা কষ্ট হয়। পরে খাওয়া, গোসল, টয়লেট, চলাফেরা, মসজিদে নামাজ পড়াসহ সব কিছু নিজে নিজে করতে পারে।

স্থানীয় বাসিন্দা সুলায়মান ভূইয়া বলেন, এই মাদ্রাসায় আমার দুই সন্তানকে হাফেজ হয়েছে। রুমান দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়েও ছাত্রদের মধ্যে জ্ঞানের আলো বিলিয়ে যাচ্ছেন। তাকে নিয়ে আমরা খুবই গর্বিত। তিনি নিজের জন্য কিছুই করছেন না। সবই অন্যের জন্য করে যাচ্ছেন। কষ্ট করে মাদ্রাসাটি পরিচালনা করছেন। সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা পেলে মাদ্রাসাটি এগিয়ে যাবে।’

২০১৬ সালে ভাইদের সহযোগিতায় বাবার রেখে যাওয়া ১৫ শতাংশ জমিতে মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন মো. রুমান। ছবি: আজকের পত্রিকা
২০১৬ সালে ভাইদের সহযোগিতায় বাবার রেখে যাওয়া ১৫ শতাংশ জমিতে মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন মো. রুমান। ছবি: আজকের পত্রিকা

একই এলাকার সাইফুদ্দীন বলেন, ‘অন্ধরা হাতে ধরে পড়াশোনা করে দেখে আরচাইজ্জ (আশ্চর্য) লাগে। এখানে আসলে মতো ভালো হয়ে যায়। তিনি অন্ধ হয়েও সুন্দর ভাবে মাদ্রাসা পরিচালনা করে যাচ্ছেন। দূরদূরান্ত থেকে আসা ছাত্ররা পড়াশোনা করছে, এটা দেখে আনন্দ লাগে। অনেকে মাদ্রাসাটির কথা শুনে আসে।’

মো. রুমান বলেন, ‘আশপাশের কয়েক জেলায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য স্কুল থাকলেও মাদ্রাসা নেই। অন্ধদের কথা চিন্তা করে আট বছর আগে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করি। মাদ্রাসাটিতে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, দরিদ্র ও এতিম প্রায় ৫০ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। তাদের মধ্যে ৭ জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়েই সংসার। তবে মাদ্রাসার নির্ধারিত কোনো ফান্ড না থাকায় অর্ধশতাধিক ছাত্রকে পড়াতে ও মাদ্রাসা চালাতে কষ্ট হচ্ছে।’

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা খলিলুর রহমান বলেন, ‘রুমানের এমন কাজ সমাজে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি যা করে যাচ্ছেন খুবই প্রশংসনীয় উদ্যোগ। সরকারি নিয়ম মাফিক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সার্বিক সহায়তা করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত