Ajker Patrika

১৭ বছরেও হয়নি ভূমি আপিল ট্রাইব্যুনাল

এস এম নূর মোহাম্মদ, ঢাকা
আপডেট : ০৩ অক্টোবর ২০২১, ১০: ৩৩
১৭ বছরেও হয়নি ভূমি আপিল ট্রাইব্যুনাল

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর প্রথম ভূমি জরিপ শুরু হয় ১৯৮৪ সালে। যেসব এলাকায় জরিপ শেষ হয়েছে, সেখানে দেখা দেয় নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি। মাঠ কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও দায়িত্বে অবহেলার কারণে ভুলে ভরা ভূমি জরিপের খেসারত গুনতে হচ্ছে জমির মালিকদের। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শত বছর ধরে ভোগদখল করে এলেও প্রকৃত মালিকের পরিবর্তে জরিপে দেখানো হয়েছে অন্যের নাম। অভিযোগ রয়েছে, সমাজের অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি জরিপ ও রাজস্ব কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশ করে তাঁদের চাহিদামতো ভূমি রেকর্ড তৈরি করেছেন।

সরকার ২০০৪ সালে ১৯৫৩ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন সংশোধন করে এর ২ ধারায় ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল ও ল্যান্ড সার্ভে আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধান সংযোজন করে। ভূমি জরিপ রেকর্ডের ভুল সংশোধনে জমির মালিকেরা এই ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে পারেন। পরে ২০১২ সালে ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করে সরকার। বর্তমানে যুগ্ম জেলা জজ পদমর্যাদার বিচারকেরা ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনালে মামলার শুনানি করেন।

আইনে সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে ভূমি জরিপ আপিল ট্রাইব্যুনাল করার কথা বলা হয়। ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনালের রায়ে সংক্ষুব্ধ হলে এখানে আপিল করা যাবে। কিন্তু এখনো আপিল ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা হয়নি। ফলে ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনালের রায়ে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে হাইকোর্টে যেতে হয়। এতে ভোগান্তি কাটছে না বিচারপ্রার্থীদের।

২০১৫ সালে এক রিটের শুনানিকালে দেশে কোনো ল্যান্ড সার্ভে আপিল ট্রাইব্যুনাল নেই বলে হাইকোর্টের নজরে আসে। ওই বছরের ৩ মার্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করেন। রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০১৯ সালের ২৫ জুলাই এক রায়ে অনুলিপি পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে ল্যান্ড সার্ভে আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠন করে আদালতকে জানাতে ভূমিসচিবকে নির্দেশ দেন।

রায়ের পর ল্যান্ড সার্ভে আপিল ট্রাইব্যুনাল হিসেবে প্রতিটি জেলার জেলা জজকে ক্ষমতা দিয়ে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয় সরকার। সেটিও এখনো আলোর মুখ দেখেনি।

দীর্ঘ ১৭ বছরেও ল্যান্ড সার্ভে আপিল ট্রাইব্যুনাল না হওয়ায় সম্প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে দুটি রিটের শুনানিতে গত ২৬ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে বলেন, আইন প্রণয়নের ১৭ বছর পরও আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারেননি। কী পদক্ষেপ নিয়েছেন, জানান। ব্যবস্থা নেওয়া না হলে প্রয়োজনে ভূমিসচিবকে ডেকে আনা হবে।

এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা চিঠি পাঠিয়েছি। আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠনের এখতিয়ার ভূমি মন্ত্রণালয়ের। আমরা বিচারক দিয়ে তাদের সহায়তা করতে তৈরি আছি।’

ভূমিসচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বেশ আগে আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ভূমি মন্ত্রণালয়ের যৌথ বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, যেসব ট্রাইব্যুনাল আছে, সেগুলো বহাল থাকবে। রায়ের পর যে আদালতে আপিল হওয়ার কথা সেখানেই হবে। যৌথ সিদ্ধান্তের পর বিষয়টি পাঠানো হয়েছে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে। সেখানে সিদ্ধান্ত হলে আইনটি সংশোধনীর প্রক্রিয়ায় যাবে। কত সময় লাগতে পারে—এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ‘সেটি আইন মন্ত্রণালয়ের বিষয়। অ্যাপিলেট বানানোর দায়িত্ব আমাদের নয়।’

সংশোধনীর সবশেষ অবস্থা সম্পর্কে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শহীদুজ্জামান সরকার বলেন, ১২ অক্টোবর বৈঠক আছে। আলোচনার সিদ্ধান্ত সংসদে জমা দেওয়া হবে। আগামী সংসদে মন্ত্রী চাইলে সংশোধনী পাস হতে পারে।

জানতে চাইলে ভূমি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মকবুল হোসেন বলেন, ‘আমি অসুস্থ। এলাকায় আছি। ৫ অক্টোবর ঢাকায় এসে ফাইল দেখে এ বিষয়ে বলতে পারব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: বিমানবাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

পিটুনিতে নিহত সেই শামীম মোল্লাকে বহিষ্কার করল জাবি প্রশাসন, সমালোচনার ঝড়

জনবল-সরঞ্জাম বেশি হলেও সমরশক্তিতে ভারত কি পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে

মধুপুরে বিদ্যালয়ে ঢুকে শিক্ষককে জুতাপেটা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত