আ.লীগের ‘গোপন মিটিং’ শুনে ফরিদপুরে এ কে আজাদের বাড়িতে বিএনপির মিছিল

আওয়ামী লীগের ‘গোপন মিটিং’ হচ্ছে অভিযোগ তুলে মিছিল নিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য ও শিল্পপতি এ কে আজাদের ফরিদপুরের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ করেছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে শহরের ঝিলটুলীতে এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিএনপির নেতা-কর্মীরা সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সামনে জড়ো হয়ে মিছিল নিয়ে এ কে আজাদের বাড়ির সামনে কিছুক্ষণ অবস্থান নেন। তাঁরা ‘আওয়ামী লীগের দোসরেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘ফ্যাসিবাদের দোসরেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’— এসব স্লোগান দেন। পরে মিছিলটি শহরের কাঠপট্টিতে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়।

ওই সময় এ কে আজাদের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন হা-মীম গ্রুপের ভূমি কর্মকর্তা মো. রাফিজুল খান, প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. সোলাইমান হোসেন, নিরাপত্তাকর্মী মেহেদী হাসান ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী মো. হান্নান মিয়া।

মিছিলে নেতৃত্ব দেন মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব গোলাম মোস্তফা মিরাজ। উপস্থিত ছিলেন মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানুর রহমান মিনাল, মহানগর যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আলী রেজোয়ান বিশ্বাস তরুণ, সাংগঠনিক সম্পাদক নাহিদুল ইসলাম নাহিদ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব শাহরিয়ার হোসেন শিথিল, মহানগর ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুনিব হাসান সোহাগ, মহানগর যুবদলের বহিষ্কৃত সভাপতি বেনজির আহমেদ তাবরিজ প্রমুখ।

পরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তারা এ কে আজাদের মদদপুষ্ট হয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পুনরায় দলকে প্রতিষ্ঠিত করার পাঁয়তারা করছেন বলে মন্তব্য করেন।

তাঁরা বলেন, ফরিদপুর আওয়ামী লীগের দোসরদের পুনর্বাসিত করা যাবে না। যদি কেউ আওয়ামী লীগের দোসরদের পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করতে চান, তাহলে বিএনপির নেতা-কর্মীরা মিলে তাঁদের প্রতিহত করবেন এবং প্রয়োজনে তাঁদের দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন।

জানতে চাইলে হা-মীম গ্রুপের ভূমি কর্মকর্তা মো. রাফিজুল খান জানান, বিএনপির নেতারা গেটে আঘাত করলে সিকিউরিটি গার্ড মেহেদী হাসান এগিয়ে গিয়ে গেট খুলে দেন। ওই সময় ভেতরে মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব গোলাম মোস্তফা, মহানগর যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাহিদুল ইসলাম নাহিদসহ বিএনপির তিন–চারজন নেতা-কর্মী বাড়ির ভেতরে ঢোকেন।

রাফিজুল বলেন, বাড়ির ভেতরে ঢুকে মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব গোলাম মোস্তফা মিরাজ সিকিউরিটি গার্ডের কাছে জানতে চান, ‘এই বাড়িতে আওয়ামী লীগের কোনো গোপন সভা হচ্ছে কি না।’ সিকিউরিটি গার্ডের নেতিবাচক উত্তর শুনে তিনি বাড়ির বাইরে চলে আসেন।

এ বিষয়ে মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব গোলাম মোস্তফা মিরাজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা গোপন সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারি, আজ বিকেলে এ কে আজাদের বাড়িতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের গোপন মিটিং করা হবে। এমন খবরে তাৎক্ষণিকভাবে একটি মিছিল করি। তবে ওই সড়কে এ কে আজাদ সাহেবের বাড়ি ছিল, তা আমি জানতাম না।’

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেছ আলী জানান, তিনি বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। এ কে আজাদের বাড়িতে কিছু ঘটেছে বলে তাঁর জানা নেই। কেউ তাঁকে জানায়নি।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদউজ্জামান বলেন, ‘বিকেল ৪টার দিকে আমি খবর পাই এ কে আজাদের বাড়িতে বিএনপির লোকজন গিয়েছে। এ খবর পাওয়ার পর দ্রুত সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়। তবে ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ কাউকে পায়নি।’

তবে এ বিষয়ে এ কে আজাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তাঁর একজন প্রতিনিধি বলেন, বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি নন তিনি।

উল্লেখ্য, এ কে আজাদ হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি গত কমিটিতে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ছিলেন। পরের কমিটিতে তাঁকে জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সদস্য করা হয়।

২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে এ কে আজাদ ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল মার্কা নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেন। নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় এ কে আজাদকে উপদেষ্টা পদ থেকে বহিষ্কার করে জেলা আওয়ামী লীগ। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।