Ajker Patrika

একটা নিজের নৌকা!

কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১১: ৩৩
একটা নিজের নৌকা!

গাজীপুরের কালীগঞ্জ বাজার খেয়াঘাটে সাদা চুল-দাড়ির যে মাঝিটিকে দেখবেন, তিনিই মনির মাঝি। মনিরুল ইসলাম তাঁর নাম, তবে মনির মাঝি বলেই পরিচিত তিনি।

এ ঘাটে তিনিই সবচেয়ে বয়স্ক মাঝি। কম বয়সী মাঝিরা তাঁকে ভালোবাসেন, সমীহ করে চলেন।

যাঁরা তাঁর নৌকায় ওঠেন, তাঁদের মনের কোণেও জায়গা পেয়েছেন এই বর্ষীয়ান মাঝি।

একেবারে কিশোর বয়স থেকে এই ঘাটের সঙ্গেই জীবন বেঁধে নিয়েছেন তিনি। সাদা চুল-দাঁড়ি হলেও যুবকের মতো মেদহীন পেশিবহুল শরীর তাঁর। নৌকা আর বইঠা নিয়েই জীবনটা কেটে গেল। জীবনে আর কিছুর খোঁজ তিনি পাননি।

এই ‘আর কিছু’র মধ্যে আছে ঘর ও জমি। না, তাঁর বসতভিটা নেই। না, তাঁর কোনো জমি নেই। বইঠাই তাঁকে প্রতিদিনের মতো বাঁচিয়ে রাখে।

এর বেশি কিছু নেই তাঁর।

তাই কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত খেয়াঘাটেই থাকেন তিনি। কেউ নৌভ্রমণ করেন, কেউ নদী পার হন, মনির মাঝি তাঁদের সঙ্গ দেন।

ঝড় হোক, বৃষ্টি হোক, কিংবা থাকুক প্রখর রোদ—সব আবহাওয়াতেই মনির মাঝিকে পাওয়া যাবে ঘাটে। উত্তাল শীতলক্ষ্যা নদীর বিপুল জলরাশিতে তাঁর বইঠা ওঠে আর নামে। একজন দক্ষ মাঝি হিসেবে গাজীপুরের কালীগঞ্জ ও নরসিংদীর পলাশ—এ দুই উপজেলার শীতলক্ষ্যার মানুষ মনির মাঝি হিসেবেই চেনেন।

একটু কি অভিমান আছে মনির মাঝির? না হলে কেন বলবেন, প্রতিদিন শত শত মানুষ পারাপার করি, কিন্তু কেউ কখনো আমার জীবনের গল্প লেখেননি, শোনেননি সুখ-দুঃখের কথা!

নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামে তাঁর বাড়ি। শীতলক্ষ্যা নদীর মতো তিনি বেঁচে আছেন মুমূর্ষু অবস্থায়। কিশোর বয়সে বাবা মৃত কালু মাঝির সঙ্গে বইঠা হাতে শুরু করেছিলেন এই জীবন।

নৌকা বেয়ে পাঁচ-ছয় শ টাকা পাওয়া যায়। নৌকা ভাড়া ও ঘাটে দিয়ে থাকে দুই থেকে আড়াই শ টাকা। তা দিয়েই দুই ছেলে, দুই মেয়েসহ ছয়জনের সংসার অনেক কষ্টে চলে।

তবে মানুষ তাঁর কথা না শুনলেও অনেকেই তাঁকে মনে রাখেন। ভালোবেসে অনেকেই সাহায্য করেন। আর তা দিয়েই চাল-ডাল কিনে কখনো খেয়ে আবার কখনো না খেয়ে কাটাতে হয় দিনের পর দিন।

কেন ভালো লেগে গেল এই কাজ? তেমন কিছু না। ছেলেবেলায় দেখেছেন, খেয়া পার হওয়ার জন্য কত মানুষ অপেক্ষা করছে। দিনের বেলায় তবু সহজে খেয়া পাওয়া যায়, আর রাতে? রাত হলেই সমস্যা বাড়তে থাকে। এটা দেখেই তিনি হাতে তুলে নেন বইঠা। মানবসেবার জন্য এটা তাঁর একমাত্র হাতিয়ার।

অন্যের নৌকা ভাড়া নিয়েই শুরু করেছিলেন বইঠা বাওয়ার কাজ। এখনো সেটাই করে যাচ্ছেন। এই ৪৩ বছরে নিজের নৌকা আর হলো না।

মনির মাঝির কাছে সেবার কোনো মূল্য হয় না, তাই কারও কাছে খেয়া পারাপারের জন্য তিনি কিছু চেয়ে নেন না। কেউ খুশি হয়ে কিছু দিলে তা ফিরিয়েও দেন না। জীবনের এতগুলো বছর পরেও নিজের একটা নৌকা হলো না, এ কারণে দীর্ঘশ্বাস পড়ে তাঁর।

একটা নিজের নৌকা থাকতেই পারত এই মাঝির। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইস্পাহানে বাংকার বাস্টার মারেনি যুক্তরাষ্ট্র, অক্ষত ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম

বাবুই পাখির কান্না কেউ শুনল না, কেটে ফেলা হলো তালগাছটি

ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ভারতের সংসদীয় কমিটির দীর্ঘ বৈঠক

গোষ্ঠীস্বার্থে বহু মানুষের স্বপ্ন নষ্ট করেছে এই প্ল্যাটফর্ম: দায়িত্ব ছেড়ে উমামা ফাতেমার পোস্ট

অপারেশন রেড ওয়েডিং ও নার্নিয়া: ইরানের সেনা কর্মকর্তা ও পরমাণুবিজ্ঞানীদের হত্যায় ইসরায়েলি অভিযান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত