Ajker Patrika

ফেসবুক পেজ থেকে জঙ্গি তৎপরতায় উদ্বুদ্ধ হন নাবিলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ফেসবুক পেজ থেকে জঙ্গি তৎপরতায় উদ্বুদ্ধ হন নাবিলা

‘তিতুমীর মিডিয়ার’ নামের একটি ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ভিডিও, অডিও ও লেখা থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের প্রতি আগ্রহী হন জোবাইদা সিদ্দিকা নাবিলা। আজ বুধবার ঢাকা মহানগর হাকিম শাহিনুর রহমানের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে এ কথা জানান তিনি। 

নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের নারী সদস্য জোবাইদা সিদ্দিকা নাবিলা বুধবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে বুধবার দুপুরের আগেই নাবিলাকে আদালতে হাজির করা হয়। 

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তাঁর প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, জোবাইদা সিদ্দিকা নাবিলা তাঁর জঙ্গি তৎপরতা সম্পর্কে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে ইচ্ছুক। পরে নাবিলা মহানগর হাকিমের খাসকামরায় জবানবন্দি দেন। 

আদালতের একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, নাবিলা নিজেকে আনসার আল ইসলামের নারী সদস্য হিসেবে স্বীকার করেছেন। তাঁর এবার মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। তিনি মাদ্রাসার ছাত্রী ছিলেন। এসএসসি পরীক্ষার্থী হলেও তাঁর বয়স ১৮ বছর ৮ মাস। কিন্তু মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার কোনো প্রস্তুতি তিনি নেননি। কারণ তিনি এখন জিহাদি তৎপরতায় উদ্বুদ্ধ। জিহাদের ডাক এলে তিনি সামনের সারিতে থাকতে চান। এমনকি শহীদি মৃত্যু হলেও তিনি পিছু হটবেন না। গত দুই বছর ধরে নানা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নাবিলা জিহাদের ময়দানে অংশগ্রহণের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেন। 

নাবিলা আদালতকে জানান, ২০০০ সালের প্রথম দিকে তিনি ফেসবুক আইডি খোলেন। এ সময় তিনি ফেসবুকে আনসার আল ইসলামের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ ‘তিতুমীর মিডিয়া’র খোঁজ পান। তখন তিনি ওই পেজে যুক্ত হয়ে আনসার আল ইসলামের বিভিন্ন উগ্রবাদী ভিডিও, অডিও ও লেখা সম্পর্কে ধারণা পান এবং তাদের মতাদর্শ নিজের ভেতরে লালন করতে শুরু করেন। 

নাবিলা আদালতকে আরও জানান, ফেসবুক তিতুমীর মিডিয়া ধর্মীয় পোস্টগুলো দেখে তাঁর ভালো লাগে। তিনি একদিন ওই আইডিতে কমেন্ট করেন—‘আপনাদের পোস্টগুলো ভালো লেগেছে। কীভাবে যুক্ত হতে পারি?’ 

ওই আইডি থেকে অ্যাডমিন তখন নাবিলাকে আনসার আল ইসলামের ওয়েবসাইটে নক করতে বলেন। ওই ওয়েবসাইটে তিনি লেখাগুলো পড়ে আরও উদ্বুদ্ধ হন। প্রথমে তিনটি ফেক আইডি খোলেন ফেসবুকে। ওই আইডিগুলোতে জেহাদি দৃষ্টিভঙ্গির লেখাগুলো তিনি শেয়ার করতে থাকেন। ধীরে ধীরে তিনি আনসার আল ইসলামের মতাদর্শে বিশ্বাসী হয়ে ওঠেন। তখন এই জঙ্গি সংগঠনের সামরিক শাখার সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করেন। বেশ কিছুদিন আগে তিনি আরও ১৩টি ফেক আইডি খোলেন ফেসবুকে। সেসব আইডিতেও আনসার আল ইসলামের মতাদর্শ ও বিভিন্ন জিহাদি বক্তব্য প্রচার করতে থাকেন। একপর্যায়ে তিনি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। 

আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে অন্য কোন নারী আনসার আল ইসলামের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বা আছেন কিনা, সে সম্পর্কে কোনো তথ্য দেননি নাবিলা। তিনি একাই আনসার আল ইসলামের প্রচার চালাতেন বলে দাবি করেন। 

জবানবন্দিতে নাবিলা কয়েকটি ইউটিউব চ্যানেল চালাতেন বলেও স্বীকার করেন। জিহাদ কেন প্রয়োজন, কিতাবুল জিহাদ, একাকী শিকারি, লোন উলফ, স্লিপার সেলগুলোতে গোয়েন্দাদের অনুপ্রবেশ প্রতিরোধের উপায়, নীরবে হত্যার কৌশল, পুলিশ শরিয়তের শত্রু, জিহাদের সাধারণ দিকনির্দেশনা, তাগুতের শাসন থেকে মুক্তির ঘোষণাসহ বহু উগ্রবাদী বই বিভিন্ন সময়ে নিজের টেলিগ্রাম চ্যানেলগুলো থেকে প্রকাশ করা হতো বলেও জানান তিনি। 

ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় অভিযান চালিয়ে নাবিলাকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাঁর কাছ থেকে সিমকার্ড ও মেমোরিকার্ডসহ একটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে বাড্ডা থানায় মামলা হয়। আজ বুধবার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণের পর নাবিলাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত