Ajker Patrika

সাড়ে আট বছরেও বিচার শুরু হবে না কেন?

রওনক রেহানা
আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০২১, ১৪: ২৭
সাড়ে আট বছরেও বিচার শুরু হবে না কেন?

৫ অক্টোবর ত্বকীর জন্মদিন। ২৬ বছর পূর্ণ হলো। কিন্তু আজ থেকে সাড়ে আট বছর আগে ত্বকী চলে গেছে এই বিশ্বের সবকিছু ছেড়ে। ‘এই বিশ্বকে শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি’ ত্বকী ভূমিষ্ঠ হওয়ার দিন অকালপ্রয়াত কিশোর কবি সুকান্তের মতো এই অঙ্গীকার আমিও করেছিলাম। কিন্তু না, আমরা আমাদের এই জনপদকে শিশুর বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে পারিনি। সুকান্তের মৃত্যু হয়েছে যক্ষ্মা রোগে, আর ত্বকীকে হত্যা করা হয়েছে নিষ্ঠুরভাবে।

ত্বকী, বিশ্বজিৎ, আবরার ফাহাদের মতো সন্তানেরা এ দেশে বাঁচে না। এদের জন্য কোনো যোগ্য আবাসভূমি এখনো আমরা গড়ে তুলতে পারিনি। সৎ, কার্যকর প্রশাসনিক নিরাপত্তায় বা দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন হয় এমন স্বদেশ, জনপদের নাগরিকও আমরা নই!

এখানে দুষ্টের হাতে শিষ্টকে জীবন দিতে হয়। রাষ্ট্র-সরকার দুষ্টের নিরাপত্তা দেয়। এখানে বিচারের বাণী স্বরবেই প্রতিনিয়ত কেঁদে চলে। নয়তো সাড়ে আট বছরেও একটি বিচার শুরু হবে না কেন? অপরাধীরা চিহ্নিত হলো, কিন্তু ধরা পড়ল না, অভিযোগপত্র দেওয়া হলো না। আমরা কি এমন রাষ্ট্র চেয়েছিলাম? এটাই কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ?

জন্মদিন হয় আনন্দের; ফুল, কেক বিভিন্ন অনুষঙ্গ এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে। কিন্তু না, ত্বকীর জন্মদিন এখন আর আমাদের জন্য কোনো আনন্দের বার্তা বয়ে আনে না। একরাশ বেদনা আমাদের নিমজ্জিত করে। ত্বকী বেঁচে থাকতে একটা ছড়া ও প্রায়ই শুনতে চাইত, ‘মন্দরা ছিল মন্দরা আছে থাকবেও চিরকাল, তবুও ভালোর ছোঁয়া লেগে শুভ হোক আগামীকাল।’ 

এখন আর কণ্ঠ থেকে কোনো ছড়া, কবিতা বা গান বেরোতে চায় না, কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসে। কিন্তু আমার চোখের জলে কোনো স্মৃতি মুছে যায়নি, ত্বকীর সঙ্গের প্রতিটি স্মৃতি, প্রতিটি মুহূর্ত থেকে আমি ফিরে পেতে চাই বর্তমান ও ভবিষ্যতে ত্বকীর সঙ্গে আমার জীবনযাপনের আকাঙ্ক্ষায়, অথচ যা আর কোনো দিন হওয়ার নয়।

ত্বকী ‘ডেইলি স্টার’ পুরস্কার নিতে গিয়ে পরিচিতি প্রকাশে জীবনের লক্ষ্য জানাতে গিয়ে লিখেছিল, ‘সততাকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে লালন করব।’ যে জীবনের পরিসীমা এতই ছোট, যে আঠারোর আগেই পথ ছেড়ে চলে যেতে হয়, সেখানে লক্ষ্য মুখ থুবড়ে পড়ে।

আমি যখনই শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ‘মানুষ’ কবিতা থেকে আবৃত্তি করতাম—‘মানুষ বড় কাঁদছে তুমি মানুষ হয়ে পাশে দাঁড়াও’—তখন প্রতিবারই আমার পাশে দাঁড়িয়ে আমার শিশুসন্তান আপন মনেই বলে চলত ‘দাঁড়াও, দাঁড়াও তোমাকে দাঁড়াতেই হবে’। এই সব ছোট ছোট সুখ-দুঃখ-হাসি-কান্নার জীবন, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে রক্ষার দায়িত্ব তো রাষ্ট্রের, সমাজের। একটি সমতার সমাজের স্বপ্ন দেখেছিল ত্বকী। কিন্তু কতটা বিরুদ্ধ সমাজে বসে সে এই স্বপ্ন দেখছে, সেই ধারণা হয়তো তার ছিল না।

আজ ত্বকীর এই জন্মদিনে কোনো সরকারের কাছে, কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে আমি কোনো আবেদন জানাব না। শুধু এ সত্যই উচ্চারণ করব যে, কোনো অন্যায়, অবিচারই শেষ কথা নয়, ন্যায় আর সত্যই শেষ কথা। ক্ষমতার মোহে আজ যাঁরা অন্ধ, যাঁরা পিতা, পুত্র, ভাই, নিজস্ব পরিজন ছাড়া অন্য কাউকেই আপন ভাবতে কুণ্ঠাবোধ করেন, যাঁরা আইন-প্রশাসন-রাষ্ট্র সবকিছুকে নিজেদের প্রয়োজনে মনে করেন, তাঁদের কাছে আর যা-ই হোক, সুবিচার আশা করা যায় না।

ঘাতক আর জল্লাদের আস্ফালনই শেষ কথা নয়। যাঁরা আজকে মিথ্যা ছড়িয়ে সত্যকে চাপা দিতে চাইছেন, আপাতত সফল মনে হলেও তা কখনো সফল হবে না। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, আল্লাহ তাঁদের সুমতি দিন। সত্য উপলব্ধি করার ক্ষমতা দিন, অসুরের ওপর মানুষের বিজয় দান করুন।

লেখিকা: তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীর মা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

নতুন মেট্রো নয়, রুট বাড়ানোর চিন্তা

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত