Ajker Patrika

নিখোঁজের ১৩ দিন পর চাঁদপুরের ব্যবসায়ীর লাশ মিলল বেনাপোলে

চাঁদপুর প্রতিনিধি
নিখোঁজের ১৩ দিন পর চাঁদপুরের ব্যবসায়ীর লাশ মিলল বেনাপোলে

শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার পর থেকে নিখোঁজ চাঁদপুরের ব্যবসায়ী হান্নান মৃধার (৩৭) সন্ধান মিলেছে ১৩ দিন পর। তবে জীবিত নয়, মৃত অবস্থায়। আজ রোববার যশোরের শার্শা থানা-পুলিশ বেনাপোল সীমান্তের স্থলবন্দরের বাইপাস সড়কের পাশ থেকে তাঁর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে। 

হান্নানের পরিবারের অভিযোগ, মুক্তিপণের টাকা দিয়েও তারা হান্নানকে জীবিত পায়নি। 

হান্নান মৃধা চাঁদপুর পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিষ্ণুদী মৃধা বাড়ি এলাকার আবুল হোসেন মৃধার ছেলে। বিষ্ণুদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে তাঁর একটি মুদি দোকান ছিল। 

পরিবারের সদস্যরা জানায়, রোববার সকাল ৯টায় যশোরের শার্শা থানা-পুলিশ বেনাপোল সীমান্তের স্থলবন্দরের বাইপাস সড়কের পাশের একটি গাছে মাটিতে পা লাগানো ঝুলন্ত অবস্থায় হান্নানের মরদেহ উদ্ধার করে। পরে তারা চাঁদপুরে হান্নানের বাড়িতে খবর দিলে দুপুর ১টায় হান্নানের লাশ আনতে যশোরের উদ্দেশে রওনা দেয়। 

পরিবারের সদস্যরা আরও জানায়, গত ১ মার্চ দুপুর ১টার দিকে হান্নান দোকান বন্ধ করে তাঁর শ্বশুর বাড়ি চাঁদপুর সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রধানিয়া বাড়িতে ছেলেকে দেখতে যায়। শ্বশুর বাড়ি থেকে ফেরার পথে তিনি নিখোঁজ হন। 

জানা যায়, গত ৭ মার্চ রাত ৩টা থেকে বেনাপোল থেকে অচেনা ব্যক্তিরা মোবাইলে কল দিয়ে নিখোঁজ হান্নান তাদের কাছে বলে জানায়। তাঁকে ফিরে পেতে মুক্তিপণ ১ লাখ টাকা চাওয়া হয়। হান্নানের ভাই ও আত্মীয়স্বজনেরা তাদের কথা বিশ্বাস করে নিখোঁজ হান্নানকে তাদের সঙ্গে কথা বলতে বললে হান্নান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেছিল ‘ভাই আমাকে বাঁচান’। তারপর তারা চাঁদপুর মডেল থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন। তবে ৫০ হাজার টাকা পরিবারের পক্ষ থেকে বিকাশ করা হয় বলে জানা যায়। টাকা পাঠানোর পর তাদের নম্বর বন্ধ করে দেয়। 

হান্নান অপহরণ ও হত্যার বিষয়ে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের প্রস্তুতি চলছে। 

এদিকে হান্নান মৃধা হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ এবং সড়ক অবরোধ করেছে পরিবারের লোকজন ও এলাকাবাসী। রোববার দুপুরে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে বিক্ষোভ করে বিষ্ণুদী রোডে এসে শেষ হয়। 

নিহতের বোনজামাই রুবেল বলেন, ‘আমার শ্যালককে আটকে রেখে ১ লাখ টাকা মোবাইলে মুক্তিপণ দাবি করেছে। তারা মোবাইলে বিকাশে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছে। আরও ৫০ হাজার টাকা দিইনি বলে আমার শ্যালককে হত্যা করেছে। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার শ্বশুর বাড়ি জড়িত থাকতে পারে।’ 

হান্নানের ভাতিজা সাগর মৃধা বলেন, ‘আমার কাকা সহজ সরল মানুষ ছিলেন। তিনি বাড়ির পাশেই এইচ এম টেলিকম নামের একটি দোকান চালাতেন। তার সঙ্গে কারও শত্রুতা নেই। মুক্তিপণের ৫০ হাজার টাকা জোগাড় করে পাঠানো হয়েছে। টাকা দেওয়ার পর তাকে ছেড়ে দেওয়ার কথা থাকলেও তাকে কেন হত্যা করা হলো? আমরা প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।’ 

চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুর রশিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হান্নান তার শ্বশুর বাড়ি বিষ্ণুপুর থেকে ফেরার পথে নিখোঁজ হন। তার ব্যবহৃত নম্বর থেকে পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করা হয়। ১ মার্চ নিখোঁজ ডায়েরি হয়েছে। অপহরণকারীরা কয়েকবার জায়গা পরিবর্তন করেছে। মুক্তিপণের ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। আমরা আরও গভীর তদন্ত করে দেখব। মডেল থানা-পুলিশ নিহতের পরিবারের সঙ্গে লাশ আনতে ঘটনাস্থলে গিয়েছে। পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত