Ajker Patrika

খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলা

নির্বিচারে পাহাড় নিধন, মুখ খুললেই ‘ফ্যাসিস্ট’ তকমা

  • পাহাড় থেকে কেটে নেওয়া মাটি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে বিভিন্ন এলাকার পুকুর ও নিচু জমি।
  • পাহাড় কাটা বন্ধ না হলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধসে প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
  • জড়িতদের বিষয়ে প্রশাসন ওয়াকিবহাল থাকলেও ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
পানছড়ি (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি  নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
পাহাড়ের ওপর স্থানীয়দের বসতবাড়ি। সেই পাহাড়ের পাদদেশ থেকে অবাধে মাটি কেটে অন্যত্র নেওয়া হচ্ছে ট্রাক্টরে করে। এতে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধসে প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ছবিটি সম্প্রতি খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার আইয়ুবনগর এলাকা থেকে তোলা। আজকের পত্রিকা
পাহাড়ের ওপর স্থানীয়দের বসতবাড়ি। সেই পাহাড়ের পাদদেশ থেকে অবাধে মাটি কেটে অন্যত্র নেওয়া হচ্ছে ট্রাক্টরে করে। এতে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধসে প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ছবিটি সম্প্রতি খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার আইয়ুবনগর এলাকা থেকে তোলা। আজকের পত্রিকা

পার্বত্য খাগড়াছড়ির সীমান্তবর্তী পানছড়ির বিভিন্ন এলাকায় নির্বিচারে কাটা হচ্ছে পাহাড়। এতে ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি চক্র এই পাহাড় কাটায় জড়িত বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

পাহাড় থেকে কেটে নেওয়া মাটি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে বিভিন্ন এলাকার পুকুর ও নিচু জমি। পাহাড় ধ্বংসে জড়িতদের বিষয়ে প্রশাসন ওয়াকিবহাল থাকলেও ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। আবার জড়িতদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললেই তাঁকে ‘ফ্যাসিস্ট তকমা’ দিয়ে উল্টো মামলা দেওয়ার ভয়ভীতি দেখানো হয়। এদিকে নির্বিচারে পাহাড় কাটা বন্ধ না হলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধসে প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পানছড়ি উপজেলার দমদম, নাপিতাপাড়া, আইয়ুবনগর ও সুপারিবাগান এলাকায় নির্বিচারে পাহাড় কাটা হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে এলাকাগুলো পাহাড়শূন্য হতে খুব বেশি সময় লাগবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে মামলা-হামলার ভয়ে পাহাড় কাটায় জড়িতদের নাম বলতে চাননি স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে পানছড়ি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান চন্দ্র দেব চাকমা বলেন, জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং ভবিষ্যৎ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে পরিবেশ রক্ষায় পাহাড় ও প্রাকৃতিক বনভূমির প্রয়োজন অপরিসীম। নির্বিচারে পাহাড় কাটার ফলে জীববৈচিত্র্য নানাভাবে হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। খাগড়াছড়ির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অংশ পাহাড়-পর্বত। কিন্তু বর্তমানে পার্বত্য অঞ্চলের অধিকাংশ পাহাড় কেটে চলছে সমতল করার কাজ। এভাবে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে অতিবৃষ্টি, খরা ও ভূমিধসের মতো নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানান, হাসিনা সরকারের পতনের পর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পাঁচটি পেলোডার ও এক্সকাভেটর (মাটি কাটার যন্ত্র) দিয়ে পাহাড় কাটার প্রতিযোগিতায় নেমেছে কয়েকটি প্রভাবশালী চক্র। কেউ দিনদুপুরে এক্সকাভেটর দিয়ে পাহাড়ের মাটি কেটে পুকুর ও নিচু জমি ভরাটে ব্যস্ত। কেউবা আবার রাতের আঁধারে কাটছে পাহাড়। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে কয়েক দফায় অবগত করা হলেও কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি; বরং যাঁরা অবগত করেছেন, তাঁদেরই উল্টো ফ্যাসিস্ট তকমা দিয়ে মামলা-হামলার ভয় দেখানো হচ্ছে।

অন্যদিকে ১৩ এপ্রিল রাত ৯টার দিকে উপজেলার দমদম গ্রামের তেঁতুলটিলা এলাকায় সেনাবাহিনী ও পুলিশ যৌথভাবে অভিযান চালায়। এ সময় পাহাড় কাটার কাজে ব্যবহৃত একটি পেলোডার ও তিনটি ট্রাক্টর জব্দ করা হয়। তবে অভিযানের পরদিন সকাল থেকে আবারও একই স্থানে পাহাড় কাটা শুরু করে জড়িত ব্যক্তিরা।

স্থানীয়রা বলছেন, পাহাড় কাটা দেখেও যেখানে প্রশাসন কিছুই করে না, সেখানে প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে কথা বলে নিরীহ জনগণ কেন বিপদে পড়বে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সংবাদকর্মী বলেন, ‘পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে বলা হয়েছে, সরকারি বা আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন, দখলাধীন বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কাটা যাবে না। পাহাড় কাটা চলছে—এমন তথ্যসহ ঠিকানা, ছবি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দিয়েছি। সেই ঊর্ধ্বতন প্রশাসনিক কর্মকর্তা শুধু বললেন, “সংশ্লিষ্টদের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলছি।” পরক্ষণেই আমাকে প্রভাবশালীরা নানা হুমকি-ধমকি দেওয়া শুরু করেন।’

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, পাহাড় কাটা বন্ধ না হলে বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ও মাটি ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটবে। নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে বন্যায় ফসল ও জানমালের ক্ষতি হবে। প্রকৃতি ও পরিবেশের সুরক্ষায় এবং মানবিক বিপর্যয় রোধে প্রভাবশালীদের কবল থেকে পাহাড় রক্ষায় প্রশাসনের জোর নজরদারির পাশাপাশি আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

অবৈধভাবে পাহাড় কাটা বিষয়ে জানতে চাইলে পানছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারহানা নাসরিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পার্বত্য এলাকার সব স্থানে আমার যাওয়া সম্ভব হয় না। এ ছাড়া আমি মাত্র দু-তিন মাস হলো এখানে এসেছি। পরবর্তী সময়ে কোথাও পাহাড় কাটার খবর পেলে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নতুন মেট্রো নয়, রুট বাড়ানোর চিন্তা

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত