Ajker Patrika

রণাঙ্গনের যোদ্ধা এখন ভিক্ষুক

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
রণাঙ্গনের যোদ্ধা এখন ভিক্ষুক

দেশের জন্য যুদ্ধ করেছিলেন রাইফেল-গ্রেনেড হাতে। সেই হাত এখন অন্যের অনুকম্পা চায়। আসলে চাইতে বাধ্য হচ্ছেন মস্তফা ভূঁইয়া (৭১)। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রাপ্য সম্মান ও সরকারি সহায়তা পেলে হয়তো এভাবে পথে নামতে হতো না তাঁকে। কিন্তু ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে জয়ীর বেশে ঘরে ফিরতে পারলেও যোদ্ধার স্বীকৃতি আদায়ের যুদ্ধে পরাজয়ই নিতে হচ্ছে মাথা পেতে।  

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের হলদিবাড়িয়া গ্রামে থাকেন মস্তফা ভূঁইয়া। তিনি জানান, ১৯৭১ সালে দশম শ্রেণিতে পড়তেন। ওই বছরের জুলাই মাসে ভারতের বগাপার ট্রেনিং সেন্টারে রাইফেল ও বোমার ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণ শেষে নোয়াখালীতে দুই মাস যুদ্ধ করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রামের ৪ নম্বর সেক্টরের মেজর শামিমের নেতৃত্বে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে পাহাড় থেকে পড়ে আহত হয়েছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর চলে আসেন তাঁর তৎকালীন নিজ এলাকা চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার কাঠগড় ইউনিয়নে। নদীভাঙনে সবকিছু হারিয়ে ২০ বছর আগে চলে আসেন পটুয়াখালীর কলাপাড়ায়। বর্তমানে পাখিমারা বাজারসংলগ্ন মোসলেম শিকদারের বাড়িতে আশ্রিত হিসেবে পার করছেন মানবেতর জীবন। শরীর ভালো থাকলে করেন জেলের কাজ। আবার যখন অসুস্থ থাকেন তখন বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন হয়ে দাঁড়ায় ভিক্ষাবৃত্তি। ভিক্ষা না পেলে অর্ধাহার-অনাহারে কাটে তাঁর জীবন।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি কিংবা আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেতে বেশ কয়েক বছর ধরেই চেষ্টা চালাচ্ছেন মস্তফা। বারবার জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধরনা দিয়েও ভাগ্যে ঘর জোটেনি। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সদস্যরা।

কলাপাড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার হাবিবুল্লাহ রানা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘২০১৪ সালে যাচাইবাছাই শেষে মস্তফা ভূঁইয়াকে তালিকাভুক্ত করার জন্য আমরা কলাপাড়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড থেকে সুপারিশ পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু কোনো অজ্ঞাত কারণে আজও সেটা বাস্তবায়ন হয়নি। কিছু অসাধু কর্মকর্তার গাফিলতিতে আজ তাঁর এমন দশা।’ 

পটুয়াখালী জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মধু মিয়া বলেন, ‘আমরা তাঁকে নিয়ে বারবার প্রশাসনের কাছে গিয়েছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি।’ 

মস্তফা ভূঁইয়া অবশ্য জানিয়েছেন, তিনি এখন সহায়তা চান না। শুধু চান মরার আগে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি।    

কলাপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান রাকিবুল আহসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, মস্তফা ভূঁইয়া যাঁদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন, তাঁদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সদস্যরা কথা বলেছেন। উপজেলা প্রশাসন থেকে তাঁকে একটি দোকান ও একটি বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তাঁকে গেজেটভুক্ত করতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব রকম সহযোগিতা করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত