Ajker Patrika

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়: উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে এবার শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ, থমকে গেছে যান চলাচল

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ। ছবি: আজকের পত্রিকা
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) উপাচার্য ড. শুচিতা শরমিনের পদত্যাগের দাবিতে এবার মহাসড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ মঙ্গলবার বিকেলে ক্যাম্পাসসংলগ্ন ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেন তাঁরা। শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচিকে ‘দক্ষিণাঞ্চল অচল’ নামে আখ্যায়িত করেছেন। এই অবরোধে মহাসড়কে যান চলাচল থমকে গেছে। ভোগান্তিতে পড়েছেন যানবাহনের যাত্রীরা।

উপাচার্যকে পদত্যাগে আজ বেলা ২টা পর্যন্ত আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষ থেকে আলোচনা শুরু করেনি বলে জানা গেছে। ববি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতার পদত্যাগের দাবিতে ১২ জন শিক্ষার্থী গতকাল সোমবার মধ্যরাত থেকে আমরণ অনশন শুরু করেছেন। এর মধ্যে অন্তত পাঁচ শিক্ষাথী আজ দুপুরে অসুস্থ হয়ে পড়েন।

গতকাল রাতে রাজধানীতে অবস্থানরত উপাচার্য ড. শুচিতা ফেসবুক লাইভে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করেছিলেন। আন্দোলনকারীরা উপাচার্যের এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। মহাসড়ক অবরোধ ও আমরণ অনশনে উপাচার্যবিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এরই মধ্যে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের বড় অংশ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছে।

জানা গেছে, আজ বিকেল ৫টার দিকে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসসংলগ্ন মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। ফলে দুই প্রান্তে গাড়ির দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটাসহ পটুয়াখালী, বরগুনা ও ভোলার সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হলো এই মহাসড়ক। রাত ৮টা নাগাদ জানা গেছে, সড়কে অসংখ্য যানবাহন আটকা পড়ে রয়েছে। যাত্রীরা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। কুয়াকাটার বাসিন্দা জব্বার বলেন, ‘বরিশালে কাজ শেষে বাড়ি ফিরতে বাসে উঠেছিলাম। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের রাস্তা বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছি। জনগণের কষ্ট লাঘবে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান হওয়া দরকার।’

আন্দোলনকারীদের অন্যতম শিক্ষার্থী মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে আসছিলাম। দাবি মেনে নিতে গতকাল ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিই। কিন্তু স্বৈরাচার উপাচার্য পদে বহাল থাকতে বিভিন্ন অপতৎপরতা চালাচ্ছেন। সেই অপতৎপরতা রুখে দিতে গতকাল মধ্যরাতে আমাদের ভাইয়েরা আমরণ অনশন শুরু করেছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরণ অনশন এবং আমাদের অন্যান্য কর্মসূচি চলমান থাকবে।’

আরেক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী সুজয় শুভ সাংবাদিকদের বলেন, যখন উপাচার্যের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসার কথা ছিল, তখন তিনি তাঁদের নামে মামলা দিয়েছেন। এখন আলোচনায় বসতে চাচ্ছেন। এখন আর কোনো পথ খোলা নেই। তাঁর পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

ববির সাবেক প্রক্টর এ টি এম রফিকুল ইসলাম বলেন, আন্দোলনের শুরুতে ৪৬ জন শিক্ষক একাত্মতা প্রকাশ করেছিলেন। এখন শতাধিক হয়েছে। ছয়জন ডিনের সবাই শিক্ষার্থীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. হাফিজ আশরাফুল হক বলেন, ‘ছাত্রদের যৌক্তিক দাবি পূরণে ২৯ দিন চলে গেল। সরকার কেন এই ফ্যাসিস্ট উপাচার্যকে অপসারণ করছে না, তা আমাদের জানা নেই। তবে আমরা শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পাশে থাকব।’

এদিকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার জন্য গতকাল রাত ১০টার দিকে ববি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা ফেসবুক লাইভে আসেন। শিক্ষার্থীরা তাঁকে নানা প্রশ্নবানে জর্জরিত করেন। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের এবং জিমি নামক এক ক্যানসার আক্রান্ত ছাত্রীর আবেদন করার পরও অর্থ সাহার্য্য না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা। ওই ছাত্রী কিছু দিন আগে মারা গেছেন।

জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক বিভিন্ন পদে থাকা আরও পাঁচজন শিক্ষক ওইসব পদ থেকে আজ পদত্যাগ করেছেন।

এদিকে অবরোধে জনদুর্ভোগের জন্য দুঃখপ্রকাশ করে আন্দোলনকারীরা আজ সাধারণ মানুষের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করেছেন। তাতে অবরোধের কারণ হিসেবে চারটি বিষয় উল্লেখ রয়েছে। এগুলো হলো, স্বৈরাচার উপাচার্যের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েও তাঁকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অপসারণের ব্যবস্থা না নেওয়া, অনুদান না পেয়ে ক্যানসার আক্রান্ত ছাত্রীর মৃত্যু, শিক্ষার্থীদের ২২ দফা দাবি পূরণ না হওয়া এবং বাজেট বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও ববির উন্নয়নে ব্যবস্থা না নেওয়া। প্রসঙ্গত, ববি শিক্ষার্থীরা গত ২২ এপ্রিল চার দফা দাবির আন্দোলন শুরু করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত